ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ইউএসএ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন

শ্বেতভবনের বাসিন্দা কে হবেন? কে যোগ্য!

মাহমুদ মেনন, হেড অব নিউজ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০১৬
শ্বেতভবনের বাসিন্দা কে হবেন? কে যোগ্য! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ওয়াশিংটন ডিসি থেকে: হোয়াইট হাউসের সামনে ভিড়টা লেগেই থাকে। আর তা যদি হয় ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের রৌদ্র করোজ্জ্বল দুপুর তাহলে তো কথাই নেই।

সে কারণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের বাসভবনে রোববার দুপুরটি জমে উঠেছিলো সাধারণের সমাগমে। সেখানে কিনা চলছে? এককভাবে বলা যায় সেলফি তোলার ধুমটাই সবচেয়ে বেশি। তবে ক্যামেরায় ফটো তোলা, তাকিয়ে তাকিয়ে দেখা, নানা কথায় সে দেখার অভিব্যক্তি প্রকাশ এসবই তো কাজ।

একটি স্রেফ সাদা রঙের ভবন কি এমন জৌলুস ছড়াতে পারে, কী বা হতে পারে তার আকর্ষণ? যে শত শত মানুষ এই শ্বেতবাড়ির সামনে? ভেতরে কৃষ্ণকালো মানুষদের বাস এখন। বারাক ওবামা, যিনি আটবছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে এক অনন্য ইতিহাস সৃষ্টি করে এই শ্বেতভবনের বাসিন্দা হয়েছিলেন। রয়েছেন পরিবারের আরও তিন কৃষ্ণকায় মানুষ মিশেল (তার স্ত্রী) ও মালিয়া-শাশাকে (দুই কন্যা)। পরিবারটি এখন এই বাড়ি-বাসের শেষ কটি দিন গুনছেন। তারা যখন শেষের দিকে ধাবিত, ঠিক তখন অবধারিতভাবে সামনের দিকে তাকিয়ে দুটি পরিবার। একটি ক্লিনটন পরিবার অপরটি ট্রাম্প। এর মধ্যে ক্লিনটন পরিবার আগেও একটানা আট বছর এই বাড়ির বাসিন্দা থেকে ২০০০ সালে বের হয়ে নিউইয়র্কের চাপ্পকুয়ায় তাদের নিজ বাড়িতে উঠেছে।

প্রিয় পাঠক ইচ্ছে রয়েছে চাপ্পাকুয়ার বাড়িটি সম্পর্কে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেবো এই নিউইয়র্ক সফরেরই কোনো এক ফাঁকে।
হোয়াইট হাউসে দ্বিতীয় যে পরিবারটি এখন ওঠার প্রত্যাশায় মুখিয়ে রয়েছে সেটি ট্রাম্প পরিবার। এদেরও নিউইয়র্কে বিশাল ট্রাম্প সাম্রাজ্য। বাংলানিউজের পাঠকদের সে নিয়েও পরিচয় করিয়ে দেওয়া হবে কোনো এক ফাঁকে।

হোয়াইট হাউসের জন্য লড়াই এখন শেষের প্রহর গুনছে। নানা চড়াই-উৎড়াই পেরিয়ে ভোটের দিন এগিয়ে এসেছে। ৮ নভেম্বর ২০১৬ তারিখটি আসতে আর মোটেই এক সপ্তাহের অপেক্ষা। এদেশের সাড়ে ২২ কোটি ভোটারই নির্ধারণ করতে যাচ্ছেন কোন পরিবার হচ্ছে এই শ্বেতভবনের বাসিন্দা। আর সাধারণ মানুষই যখন সব ভাগ্যের নিয়ন্ত্রণকারী তখন হোয়াইট হাউসের সামনে এই শত শত মানুষের উপস্থিতি আর তাদের তাকিয়ে থাকা গুরুত্ব রাখে বৈকি।
এটা সত্য, দর্শকদের অধিকাংশই বিদেশি পর্যটক। যাদের ভোট নেই। কিন্ত অনেককেই পাওয়া গেলো যারা ভোটার ও ৮ নভেম্বরে তারা নির্বাচন করবেন পছন্দের প্রার্থী। কিন্তু কে সেই পছন্দের প্রার্থী তা মোটেই নির্ধারণ করতে পারছেন না তারা। ডাইহার্ট সাপোর্টার বলে একটা কথা রয়েছে। তারা কেউ কেউ রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকেই ভোট দেবেন তা তিনি যতই হোন না একগুঁয়ে, গোঁয়ার, নারী বিদ্বেষী, যৌনতায় পারভার্ট পর্যায়ের কিংবা মানসিকতার। আরেক পক্ষ ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারির পক্ষেই ভোটিং মেশিনের বাটন চাপবেন হোক তা তিনি যথেষ্টই মিথ্যাচার করেছেন এই জাতির সঙ্গে।

ই-মেইল কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে দেশের জন্য কিছুটা হুমকিও ডেকে এনেছেন। তবে হোয়াইট হাউজের সামনে অনেকের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত কথপোকথনে জানা যায় তারা আসলে এই শ্বেতভবনের বাসিন্দা হওয়ার যোগ্য মনে করছেন না এই দুই জনের কেউকেই। তারা বলছেন, আমরা মোটেই কনভিন্সড নই। আমরা জানি না কি যোগ্যতায় তাদের কেউ একজন হতে চলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। তারা এও বলছেন, দুই প্রার্থীই এমন যে, প্রতিপক্ষ যদি অন্য কেউ হতেন তো গো হারা হারাতেন।

যেমন হিলারিকে যদি লড়তে হতো আর কোনো রিপাবলিকানের বিরুদ্ধে তিনি হারতেন। আর ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বী যদি হতেন অন্য কোনো ডেমোক্র্যাট তিনিও হারতেন।

যুক্তরাষ্ট্রের জন্য যোগ্য প্রেসিডেন্ট প্রার্থী না পেয়ে হতাশা প্রকাশ করলেন অনেকেই। তারপরেও তাদের রয়েছে এই হোয়াইট হাউস নিয়ে কৌতুহল। একটি শ্বেতভবন যা গোটা বিশ্বেই সবচেয়ে ক্ষমতাধরের আবাসবাড়ি হিসেবে বিবেচিত, যেটি মূলত যুক্তরাষ্ট্রের কমান্ডার ইন চিফের দফতর, যেখান থেকে নিয়ন্ত্রিত হবে পারমানবিক বোমার ক্ষমতা, যেখান থেকে বিশ্ব-অর্থনীতির গতিপ্রকৃতির মূল চিন্তাভাবনা করা হবে সেখানটা আসলে কতটা প্রস্তুত।

আসুন হোয়াইট হাউসের ভেতরটা নিয়ে একটু সংক্ষিপ্ত ধারণা দেওয়া যাক।

যুক্তরাষ্ট্রের জিপিএস পদ্ধতিতে এই ক্ষমতার প্রধান উৎসের বাড়িটির নাম লিখে কিংবা বলে আপনি কোনো সাড়া পাবেন না। বলতে হবে ১৬০০ পেনসিলভেনিয়া এভিনিউ, ওয়াশিংটন ডিসি।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতির দাফতরিক বাসভবন হিসেবেই এর প্রথম নির্মাণ হয় অষ্টাদশ শতাব্দির শেষ বছরগুলোতে। জর্জ ওয়াশিংটন ছিলেন এই ভবন নির্মাণের রূপকার। তবে তিনি কখনোই এর বাসিন্দা হননি। ১৮০১ সালে টমাস জেফারসন হোয়াইট হাউসে ওঠেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হয়ে।

এর স্থপতি ছিলেন আয়ারল্যান্ডের নাগরিক জেমস হোবান। এই হোবান ছিলেন কলম্বিয়া স্টেট ক্যাপিটাল বিল্ডিংয়েরও নকশার জন্মদাতা। দুটি ভবনই ছিলো ধূসররঙা।

নির্মাণের মাত্র চৌদ্দ বছর পর ১৮১৪ সালে ব্রিটিশ সৈন্যরা আমেরিকা আক্রমণ করে ওয়াশিংটন দখল করে নেয়। সে বছরেরর ৪ আগস্ট হোয়াইট হাউসে আগুন লাগিয়ে দেয় তারা। এরপর তিন বছর ধরে বাড়িটি পুননির্মাণ করা হয়। সঙ্গে কিছু পরিবর্ধনও করা হয়। এসময় পূর্ণ সাদা রঙে এর পেইন্টিং করা হয়। তার নাম দেওয়া হয় হোয়াইট হাউস।   তবে এর আগে প্রেসিডেন্টস প্যালেস, প্রেসিডেন্টস হাউস, এক্সিকিউটিভ ম্যানসন এসব নামেও ডাকা হতো ভবনটিকে।

তবে এর নাম হোয়াইট হাউস হিসেবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পেতে লেগে যায় আরও ১০০ বছর। ১৯০১ সালে পে্রসিডেন্ট থিওডর রুজভেল্ট ব্যক্তিগত প্যাড, অফিসিয়াল নথিপত্রে হোয়াইট হাউস নামটি ছাপিয়ে ব্যবহার করতে শুরু করেন।

ইস্ট উইং ও ওয়েস্ট উইং এই দুই ভাগে বিভক্ত তিন তলা বাড়িটি। নিচ তলায় ঘড়ি ঘর (ক্লক রুম), রান্নাঘর ও পাঠাগার। দোতলায় ফেডারেল স্টেটরুম, বিখ্যাত ব্লু রুম আর রেড রুম। এখানেই আসলে রাষ্ট্রপতি ও তাদের পরিবার বর্গের থাকার ব্যবস্থা।

নিচ তলার ওয়েস্ট উইংয়ে লবি, রোজ গার্ডেন, প্রেস ব্রিফিং রুম, কেবিনেট রুম, রুজভেল্ট রুম ও বিখ্যাত ওভাল অফিস।

এই বিখ্যাত ওভাল অফিসই মূলত প্রেসিডেন্টের দফতর। যেখান থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে পরিচালনা করতে যাচ্ছেন হয় হিলারি ক্লিনটন, নয়তো ডনাল্ড ট্রাম্প। দুজনেরই নির্বাচনের গালভরা বুলি। একজন বলছেন যুক্তরাষ্ট্রেক ফের মহান করে তুলবেন, আরেকজন বলছেন যুক্তরাষ্ট্রকে সবার জন্য করে তুলতে চান।

দেখা যাক কে হন এই শ্বেতভবনের বাসিন্দা? কেই বসেন এই ওভাল অফিসে?

আরও পড়ুন
***হুমাকে নিয়ে সংকটে হিলারি!
*** হিলারিকে ভোট দিতে প্রস্তুত ওয়াশিংটনের বাংলাদেশি কমিউনিটি
*** নির্বাচনী জরিপের চড়াই-উতরাই, কনফিউজড অনেকেই​
*** নির্বাচনী সহিংসতার শঙ্কা প্রকট হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে

*** আর্লি ভোটে আর্লি তুষারপাত, মূল ভোটে কি হবে!
** মুসলিম ডেমোক্র্যাটরা সক্রিয়, রয়েছেন বাংলাদেশিরাও
***বোস্টনে ভোট ক্যাম্পেইনের এক উপভোগ্য সন্ধ্যা
*** বোস্টনে মিললো ভোটের বিলবোর্ড
*** হিলারির জন্য প্রচারে আমেরিকান মুসলিমদের র‌্যালি রোববার
*** জ্যাকসন হাইটসের আড্ডায় ট্রাম্প আতঙ্ক​
***বহু জাতির দেশে বহুমুখী ভোট, বহু তার সমীকরণ
*** আবহাওয়া ঠাণ্ডা, ভোটের হাওয়া কী গরম!​
***অদ্ভুত এক নির্বাচনের দেশে!
***
প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাভার করতে বাংলানিউজ’র মেনন যুক্তরাষ্ট্রে

বাংলাদেশ সময়: ২০২৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩১, ২০১৬
এমএমকে/আইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।