ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

ভুট্টা চাষে কৃষকের স্বপ্ন বুনন 

এস এম এ কালাম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২৩
ভুট্টা চাষে কৃষকের স্বপ্ন বুনন 

ঢাকা: গ্রামীণ অর্থনীতিতে সুবাতাস দিচ্ছে ভুট্টা চাষ। স্বচ্ছলতার স্বপ্ন নিয়ে ভুট্টা চাষে ঝুঁকেছে দেশের প্রান্তিক কৃষক।

আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এ বছর ভুট্টার বাম্পার ফলনের আশা করছেন তারা। বিগত কয়েকবছর ভাল ফলন ও ক্রমাগত ফসলের দাম বৃদ্ধিতে ভুট্টা চাষে স্বনির্ভরতার স্বপ্ন দেখছেন প্রান্তিক কৃষক।

কৃষকরা বলছেন, তেল, সার ও কীটনাশকের দাম বাড়ায় উৎপাদন খরচ বাড়লেও অন্যান্য ফসলের চেয়ে ভুট্টা চাষে খরচ কম। শুধু তাই নয় প্রতিবছরই দুই-চার শত টাকা ভুট্টার দাম মণ প্রতি বাড়ছে। এতে করে ভুট্টা চাষে কৃষকের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে বলে মনে করেন তারা।

এক শতাংশ জমিতে দেড় মণ ভুট্টা হয়। বর্তমান বাজার দরে দেড় মণ ভুট্টা ২২৫০ টাকায় বিক্রি হয় আর এটা উৎপাদন করতে খরচ হচ্ছে শতাংশ প্রতি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা বলে জানালেন ঢাকা জেলার ধামরাই থানার প্রান্তিক কৃষক সোহরাব হোসেন।  

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, অন্যান্য ফসল আবাদের চেয়ে ভুট্টা চাষে খরচ কম আয় বেশি। আজ কয়েকবছর ধরে ভুট্টা আবাদ করছি। নিজের জমি তো আছে অন্যের জমি বর্গা নিয়েও ভুট্টা আবাদ করছি। আগে অনেক ফসল আবাদ করতাম কিন্তু ফসল উৎপাদনের পর লাভের হিসাব মিলাতে কষ্ট হয়ে যেত। আমার দেখা দেখি অনেকেই এখন ভুট্টা চাষে লাভের মুখ দেখছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

গত বছর এক বিঘা জমিতে ভুট্টার আবাদ করেছিলাম। এই বছর দুই বিঘা জমিতে ভুট্টার আবাদ করছি। ফসলের দাম ভালো পেলে আগামীতে আরও বেশি জমিতে ভুট্টা আবাদ করবো বলে জানিয়েছেন কুড়িগ্রামের প্রান্তিক কৃষক রমজান আলী। তিনি বলেন, তেল, সার ও কীটনাশকের দাম বাড়ায় উৎপাদন খরচ অনেক বেড়েছে। আগের তুলনায় এ বছর ভুট্টার দাম বেশি পাব বলেও তিনি জানান।

বিঘার পর বিঘা জমিতে অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি ভুট্টা চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক। অন্যান্য আবাদের চেয়ে ভুট্টা চাষে সার-কীটনাশক কম লাগে। বৃষ্টি হলে সেচেরও খুব একটা প্রয়োজন হয় না। ফসল তোলা পর্যন্ত কোনো বাড়তি তেমন ঝামেলাও নেই। উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় এ চাষে দ্বিগুণ লাভ হয়। তাই ভুট্টা চাষে আর্থিকভাবে স্বচ্ছলতার স্বপ্ন দেখছেন প্রান্তিক কৃষক বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। চাষের ক্ষেত্রে সরকারের নানা ধরণের সহায়তা ও পরামর্শ পেলে আগামীতে আরও দ্বিগুণভাবে বাড়বে ভুট্টা চাষ বলেও মনে করেন তারা।

এদিকে সরকারের পক্ষ থেকেও ভুট্টা চাষে কৃষককে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে, এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি পরিমাণ জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে। ভুট্টার দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকরা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ভুট্টা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। এবার ৪ লাখ ৯২ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হচ্ছে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২৮ হাজার ৮০০ হেক্টরের বেশি জমিতে ভুট্টা চাষ হচ্ছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে ভুট্টা আবাদ হওয়াকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

এব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ক্রপস ইউং এর ভারপ্রাপ্ত পরিচালক রবিউল হক মজুমদার বাংলানিউজকে বলেন, এবারের ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। এবারের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি অর্জন হয়েছে। এটা আমাদের জন্য ইতিবাচক।  

তিনি বলেন, ভুট্টা চাষে সরকারের সহায়তা ও প্রনোদনা অব্যাহত আছে। সেচ কম লাগার কারণে আমরা এটি চাষে কৃষককে উদ্ভুদ্ধ করছি। বিশ্ব বাজারে ভুট্টার চাহিদা রয়েছে। কৃষকও ভুট্টা চাষে লাভ করছে। তবে দিন শেষে কৃষক তার লাভের বিষয়টি দেখেন। তাদের লাভের উপরেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয় বলে তিনি মনে করেন।  

তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকার একটি বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছে। যে সব ক্রপসগুলো করলে কৃষকের লাভ হবে সেগুলোতে সরকারের সহায়তা নিরন্তর রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।  

ভুট্টা চাষে কৃষকরা যেভাবে আগ্রহ দেখাচ্ছে তা অত্যন্ত ইতিবাচক। এটি কৃষি ক্ষেত্রে সরকারের আরও একটি সাফল্য। এজন্য দেশে ভুট্টা চাষ জনপ্রিয় করতে কৃষক পর্যায়ে স্বল্প সুদে ঋণ বিতরণ করা গেলে কৃষক একদিকে যেমন লাভবান হবে, অন্যদিকে ভুট্টা উৎপাদন বাড়বে এবং কৃষক লাভবান হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবং বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবছর ভুট্টার বাম্পার ফলন হবে। যা কৃষককে স্বচ্ছলতার পথ দেখাবে বলেও মনে করছেন তারা।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০২৩
এসএমএকে/এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।