ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

কৃষি

শ্রমিক সংকট, স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ধান কাটছেন কৃষকরা

মোমেনুর রশিদ সাগর, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯০২ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০২৩
শ্রমিক সংকট, স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ধান কাটছেন কৃষকরা

গাইবান্ধা: এক দিকে উৎপাদন খরচ বেশি, অন্যদিকে শ্রমিক সংকট থাকায় মজুরিও প্রায় দ্বিগুণ। সঙ্গে পোকার আক্রমণ তো আছেই।

সব মিলিয়ে দিশেহারা কৃষক। তাই বাধ্য হয়ে স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে নিয়ে মাঠে ধান কাটছেন পলাশবাড়ী উপজেলার অনেক কৃষক।

শনিবার (২৯ এপ্রিল) দুপুরে উপজেলার মহদীপুর ও পবনাপুর ইউনিয়ন ঘুরে এমনই চিত্র চোখে পড়ে। কেউ বা জামাইকে ডেকে এনে ধান কাটিয়ে নিচ্ছেন। কেউ আবার স্ত্রী-ছেলেকে নিয়ে ধান কাটছেন।

উপজেলার মহদীপুর ইউনিয়নের দুর্গাপুর গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ পাকা ধানে সোনালি রূপ ধারণ করেছে। শুরু হয়েছে ধান কাটা। এখানেই নিজের ক্ষেতের ধান কাটছেন মজনু মিয়া (৩০)। স্ত্রী মঞ্জিলা বেগম ও সাত বছরের ছেলেকে নিয়ে শ্বশুরের ১০ শতাংশ জমির ধান কেটে আঁটি বাঁধছেন।  

মজনু মিয়া জানান, এলাকায় চরম শ্রমিক সংকট। এলাকার বেশির ভাগ কৃষক বেশি মজুরির আশায় দেশের বিভিন্ন স্থানে ধান কাটতে গেছেন। ফলে গাইবান্ধায় অল্প সংখ্যক শ্রমিক আছেন। তাই তাদের মজুরির চাহিদা এবার প্রায় দ্বিগুণ। একজন কৃষক ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত দৈনিক মজুরি নিচ্ছেন। তার শ্বশুর আব্দুল মজিদ মিয়ার বড় ছেলে না থাকায় তিনি স্ত্রী-সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে শ্বশুর বাড়িতে এসে ধান কেটে ঘরে তুলি দিচ্ছেন।

পাশের জমির কৃষক মহদীপুর গ্রামের বাসিন্দা পরিমল চন্দ্র বলেন, চলতি মৌসুমে সার-তেলের দাম বাড়ায় ধানের উৎপাদন খরচ বেশি পড়েছে। কিন্তু সে তুলনায় এবার ধানের বাজার মূল্য কম। এবার ধানে পোকার আক্রামণও বেশি হয়েছে। সেই সঙ্গে চলছে শ্রমিক সংকট। তাই একটু লাভের আশায় জমির ধান নিজেই কাটছি। পরিবারের নারী সদস্যরাও ধানের আটি পরিবহনে সহযোগিতা করছেন।

উপজেলার পবনাপুর ইউনিয়নের মালিয়ানদহ গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, রাশেদা বেগম (৩০) নামে এক নারী তার ১০-১২ বছরের ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে সড়কে দাঁড় করিয়ে রাখা ভ্যানে ধানের আঁটি তুলছেন। রাশেদা জানান, তার স্বামী শিপন
মিয়া একজন ভ্যানচালক। পাশাপাশি চৌদ্দ শতাংশ জমিতে তারা ধান চাষ করেছেন।

কৃষক সংকট ও মজুরি বেশি হওয়ার কারণে পরিবারের প্রধান জমি থেকে ধান কেটে টেংরা-বাদিয়াখালি পাকা সড়ক পর্যন্ত এনে দিচ্ছেন। সেই ধান রাশেদা তার ছেলেকে নিয়ে ভ্যানে তুলছেন।

এ ব্যাপারে মহদীপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান তৌহিদুল ইসলাম মণ্ডল বলেন, শ্রমিক সংকট-অর্থাভাবে যেসব কৃষক ধান কাটতে পারছেন না, আমরা উপজেলা আওয়ামী লীগ ও এর অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে সেই সব কৃষকদের ধান কেটে ঘরে তুলে দিচ্ছি। পুরো মৌসুম জুড়ে আমাদের এ কার্যক্রম চলবে।

পলাশবাড়ী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি একেএম মোকছেদ চৌধুরী বিদ্যুৎ বলেন, দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। আমরা কৃষকদের পাশে সব সময় ছিলাম এবং বর্তমানেও আছি। তারই অংশ হিসেবে শনিবার (২৯ এপ্রিল) পলাশবাড়ী পৌরশহরের বাড়াইপাড়া গ্রামের রবিউল মিয়া নামে এক কৃষকের ৩৮ শতাংশ জমির ধান কেটে ঘরে তুলে দেওয়া হয়েছে। সোমবারও ধান কাটার কর্মসূচি রয়েছে। পর্যায়ক্রমে নিরুপায় সব কৃষকের ধান ঘরে তুলে দেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে পলাশবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফাতেমা কাওসার মিশু জানান, শ্রমিক সংকট মোকাবিলায় কৃষকদের কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন ব্যবহারে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এ মেশিন দিয়ে ঘণ্টায় তিন থেকে চার বিঘা জমির ধার কাটা সম্ভব। এটা ব্যবহারে ফসল নষ্ট হয় না বললেই চলে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০২৩
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।