ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

খুলনা বৃক্ষ মেলায় নজর কাড়ছে কোরআনে বর্ণিত ত্বীন গাছ 

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০২৩
খুলনা বৃক্ষ মেলায় নজর কাড়ছে কোরআনে বর্ণিত ত্বীন গাছ 

খুলনা: পবিত্র কোরআনের আত-ত্বীন সূরায় বর্ণিত ত্বীন গাছ এখন খুলনার বৃক্ষ মেলায়। খুলনা সার্কিট হাউজ মাঠের মেলার ৪৬ নং স্টলের রানা নার্সারির বেশ কিছু ত্বীন গাছের চারা দর্শনার্থীদের নজর কাড়ছে।

 

মধ্যপ্রাচ্যের এ গাছটির এখন খুলনায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু হয়েছে।

রানা নার্সারির মালিক আসাদুজ্জামান রনি বাংলানিউজকে বলেন, আমরা খুলনা বৃক্ষ মেলায় নতুন একটি গাছ নিয়ে এসেছি। যাকে ত্বীন গাছ বলা হয়। কোরআনে বর্ণিত আছে যে ফলের নাম। এটা অনেক সুস্বাদু। অনেক ঔষধি গুণাগুণ রয়েছে এটির। নার্সারি থেকে অনেক কম দামে মেলায় বিক্রি করছি আমরা। একটি গাছের দাম ৬০০ টাকা।

ত্বীন গাছ নিয়ে বৃক্ষ মেলায় রানা নার্সারির মালিক আসাদুজ্জামান রনি

মেলায় ঘুরতে আসা দর্শনার্থী ইদ্রীস আলী মামুন বলেন, কোরআনে বর্ণিত ত্বীন গাছ দেখতে পেরে ভীষণ ভালো লাগছে। খুব মুগ্ধ হয়েছি।

এর আগে ২০১১ সালে খুলনায় সর্বপ্রথম ত্বীন গাছের দেখা মেলে। বটিয়াঘাটা উপজেলার সোসাইটি অব সোশ্যাল রিফর্ম স্কুলের আঙিনায় গাছটি এনে এলাকাবাসীকে দেখানো হয়। সোসাইটি অব সোশ্যাল এন্ড টেকনোলজিক্যাল সার্পোট কুয়েতের সাবেক মহাপরিচালক আবু মুহাম্মদ আসসাওয়াদফি আল ফিকাহ মিসর থেকে শখের বসে এই গাছটি আনেন।  

গাছটি  রোপণ করেন দাওহাতুল খাইর কমপ্লেক্স এর পরিচালক সুফি সালাইমান মাসদ। বর্তমানে গাছটি বেঁচে আছে এবং নিয়মিত ফল ধরছে।

তবে খুলনায় প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিকভাবে ত্বীন চাষ শুরু করেন ডুমুরিয়া উপজেলার কৃষক নিউটন মণ্ডল ও নবদ্বীপ নামের ২ যুবক।

জানা যায়, মধ্যপ্রাচ্য এবং পশ্চিম এশিয়ায় এ ফলের উৎপাদন বাণিজ্যিকভাবে করা হয়। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসল। আফগানিস্তান থেকে পর্তুগাল পর্যন্ত এই ফলের বাণিজ্যিক চাষ হয়ে থাকে। এর আদি নিবাস মধ্যপ্রাচ্যে।

কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তর খুলনা অঞ্চলের পার্টনার প্রকল্পের সিনিয়র মনিটরিং অফিসার মোছাদ্দেক হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, নিউটন ও নবদ্বীপ প্রথম বাণিজ্যিকভাবে ত্বীন চাষ শুরু করেন ২০২০ সালে। ত্বীন বিক্ষিপ্তভাবে কয়েকটি বাড়িতে চাষ হচ্ছে। এটি দেশের একটি সম্ভাবনাময় ফসল। নতুন এই ফসল সম্প্রসারণের চেষ্টা করা হচ্ছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক ড. শামীম আহমেদ ত্বীন গাছ প্রসঙ্গে  বলেন,পবিত্র কোরআনে ত্বীন ও জয়তুন ফলের গুণাগুণ সম্পর্কে উল্লেখ রয়েছে। সেই ত্বীন বা ডুমুর গাছগুলো সাধারণত পাতলা, দ্রুত বর্ধনশীল এবং বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। যার ফলে গাছগুলো উচ্চতার চেয়ে প্রস্থে বেশি হয়ে থাকে। ত্বীন চরম জলবায়ু অর্থাৎ শুষ্ক ও শীত প্রধান দেশে চাষ হলেও আমরা প্রমাণ করেছি নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ুতেও ৩৬৫ দিন এ ফল উৎপাদন সম্ভব। সৌদি আরব ও বাংলাদেশ এই ফলকে ত্বীন (ডুমুর) নামে ডাকলেও অন্যান্য দেশ, বিশেষ করে ভারত, তুরস্ক, মিসর, জর্দান ও যুক্তরাষ্ট্রে এটি আঞ্জির নামে পরিচিত।  

ডুমুরের অনুমোদিত কোনো জাত নাই। তবে বাংলাদেশে গ্রামেগঞ্জে ডুমুরের যে গাছগুলো হয় সে ডুমুরগুলো হলো জগডুমুর। জগডুমুরের বিভিন্ন প্রজাতি রয়েছে। কোনোটি বিশ-ত্রিশ গ্রাম, আবার কোনোটি  পঞ্চাশ-ষাট গ্রাম ওজনের হয়। পাকলে কোনোটি লাল, আবার কোনোটি হলুদ রঙ ধারণ করে।

এ ছাড়াও আরেক প্রজাতির মূল্যবান ডুমুর আছে, যেটিকে মিসরীয় ডুমুর বা ত্বীন বলা হয়। এটি খুব রসালো ফল ও অনেক বড় হয়। এটি দুইভাবে খাওয়া যায়। একটি হলো কাচা সরাসরি খাওয়া যায়। অন্যটি হলো রোদে শুকিয়ে কাচের কন্টেইনারে রেখে সারা বছর খাওয়া যায়।

প্রতিটি গাছ থেকে প্রথম বছরে এক কেজি, দ্বিতীয় বছরে ৭ থেকে ১১ কেজি, তৃতীয় বছরে ২৫ কেজি পর্যন্ত ফল ধরে। এভাবে ক্রমবর্ধিত হারে একটানা ৩৪ বছর পর্যন্ত ফল দিতে থাকে। গাছটির আয়ু হলো প্রায় ১০০ বছর। তিন মাসের মধ্যেই শতভাগ ফলন আসে। প্রতিটি পাতার গোড়ায়  গোড়ায় ত্বীন ফল জন্মে থাকে।

ত্বীন ফলের পুষ্টি গুণাবলি সম্পর্কে ড. শামীম আহমেদ বলেন, ডুমুরে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি ১, ভিটামিন বি ২, ছাড়াও প্রায় সব রকমের জরুরি নিউট্রিশনস যেমন ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, সোডিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, পটাশিয়াম ইত্যাদি আছে। ভিটামিন-এ, ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়ামের অভাবজনিত রোগে এটি বেশ কার্যকরী। কার্বোহাইড্রেট, সুগার, ফ্যাট, প্রোটিন, থায়ামিন, রিবোফ্লাবিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন ছাড়াও বিভিন্ন পুষ্টিগুণে ভরপুর এই ডুমুর। পুষ্টিগুণের পাশাপাশি ডুমুরের অনেক ঔষধি গুণও রয়েছে। ডুমুর কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে সহায়তা করে। ডুমুর দেহের ওজন কমানো, পেটের সমস্যা দূর করা এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখাসহ নানা উপকার করে থাকে। মৃগীরোগ, প্যারালাইসিস, হৃদ্‌রোগ, ডিপথেরিয়া, প্লীহা বৃদ্ধি ও বুকের ব্যথায় ডুমুর কার্যকরী। ডুমুর শরীরে এসিডের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। শরীরে পিএইচের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে। ডুমুর পাতা ডায়াবেটিক রোগীদের ইনসুলিন ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা কমিয়ে দেয়। সেক্ষেত্রে প্রতিদিন সকালের নাশতার সঙ্গে ডুমুরের পাতার রস খেতে হবে। ডুমুর ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক হিসেবে কাজ করে। এছাড়াও ডুমুর গাছের কষ পোকাকামড় বা হুল ফুটানো ব্যথা নিরাময়ে কার্যকরী।

ভিডিওতে দেখুন -

 

বাংলাদেশ সময়: ১০৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৮, ২০২৩
এমআরএম/এসএএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।