ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

‘মেহেরপুরে কমেছে পাটের আবাদ’

জুলফিকার আলী কানন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৯ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০২৪
‘মেহেরপুরে কমেছে পাটের আবাদ’

মেহেরপুর: পাটের ন্যায্য মূল্য না পাওয়া, খাল-বিল ভরাট, অনাবৃষ্টি, শ্রমিক সংকটসহ নানা প্রতিকূলতায় মেহেরপুর জেলায় প্রতি বছরই কমেছে পাটের আবাদ। পরিকল্পনা ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে বার বার লোকসানের মুখে পড়ছেন কৃষক।

যে কারণে পাটের পরিবর্তে জেলার কৃষকরা এখন ঝুঁকছেন সবজি চাষে।  

কৃষি বিভাগ বলছে, পাটচাষে আগ্রহী করার জন্য চাষিদের প্রণোদনাসহ অন্যান্য সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও বিকল্প পদ্ধতিতে পাট পচানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।  

মেহেরপুর জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় চলতি বছরে মেহেরপুরে পাট চাষ হয়েছে ১৬ হাজার ৬৩০ হেক্টর জমিতে। অথচ, পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২২ হাজার হেক্টও জমিতে। এ বছরে জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫ হাজার ৩৭০ হেক্টর কম চাষ হয়েছে।  

কৃষি বিভাগ জানায়, জেলায় জেআরও ৫২৪, বি জে আর আই তোষাপাট-৮, ভারতীয় কৃষি কল্যাণ, মহারাষ্ট্র ও চাকা জাতের পাট আবাদ করে থাকেন চাষিরা।

গাংনীর চৌগাছা গ্রামের আমিরুল ইসলাম অল্ডাম বলেন, আমি নিয়মিত পাট চাষ করতাম। প্রায় আট থেকে দশ বছর হলো আর পাট চাষ করিনি। পাট চাষে বেশি পরিশ্রম, পাট পচানো পানি আর শ্রমিকের অভাব। তারপরেও ন্যায্য মূল্য পাওয়া যায় না। পাটের পরিবর্তে আমি বিভিন্ন ধরনের সবজি আবাদ করে থাকি।

জেলা সদর উপজেলার কালিগাংনী গ্রামের হারেস উদ্দীন বলেন, প্রতি বছর আমি পাঁচ থেকে ছয় বিঘা জমিতে পাটের চাষ করি। মাঠে পাটের ফলন ভালো হলেও পাট চাষিরা নানা সমস্যায় ভোগেন। বিগত বছরগুলোতে দীর্ঘ অনাবৃষ্টি থাকার কারণে পুকুর, খাল-বিল ও নালাগুলোতে পানি ছিল না। যে কারণে কৃষকরা পাট জাগ দেওয়ার ক্ষেত্রে বড় সমস্যায় ভোগেন। পাট জাগ দেওয়ার মতো পানির ব্যবস্থা না থাকায় অনেকে পুকুর ভাড়া করে সেখানে পানি দিয়ে পাট জাগ দেন। তাতে খরচ বাড়ে অনেক। আবার অনেকেই জমিতেই বাঁধ তৈরি করে পানি জমিয়ে কাদা মাটি দিয়ে পাট জাগ দেন। ফলে পাটের মান নষ্ট হওয়ায় ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হন কৃষক।

মুজিবনগর উপজেলার গৌরীনগর গ্রামের আবুল হাসেম বলেন, চলতি বছরে আমার তিন বিঘা জমিতে পাট চাষ আছে। গত বছরে আমি সাত বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলাম। পাট জাগ দেওয়া ও শ্রমিকের অভাবে হিমশিম খেতে হয়েছিল। তাই এই বছর পাট চাষ কমিয়ে এনেছি।   

হাড়াভাঙ্গা গ্রামের কৃষক সলেমান ও জাহাঙ্গীর বলেন, পাট পচানোর জন্য কোনো উন্মুক্ত জলাশয় না থাকায় চাষিরা পাট চাষ করতে অনীহা প্রকাশ করছেন। খাল-বিল সংস্কার ও দখল হয়ে যাওয়া জলাশয় উন্মুক্ত ঘোষণা করার আহ্বান জানান।

চাষিদের দাবি, হাজা-মজা, খাল-বিল সংস্কার করে পানি প্রবাহ ঠিক রাখলে পাট পচানো সম্ভব। চাষিরা উন্মুক্ত জলাশয়ে পাট জাগ দিতে পারলে পাট চাষ বাড়বে।

মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার (ডিডি) কৃষিবিদ বিজয় কৃষ্ণ হালদার বলেন, চলতি মৌসুমে পাটের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। অনাবৃষ্টির কারণে অনেকেই পাট বীজ বপন করতে পারেননি। আর যারা আবাদ করেছেন, পানির অভাবে পাটগাছ বাড়েনি।  

অন্যদিকে, পাট পচানো নিয়েও চাষিরা নানা বিড়ম্বনায় পড়েন। তবুও চাষিদের প্রণোদনাসহ অন্যান্য সুবিধা দেওয়া হচ্ছে পাট চাষে আগ্রহী করে তোলার জন্য। বিকল্প পদ্ধতিতে পাট পচানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৫ ঘণ্টা,, মে ২৯, ২০২৪
এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।