ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কৃষি

আগাম আলু চাষের এখনই সময়

কাওছার উল্লাহ আরিফ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১, ২০২৪
আগাম আলু চাষের এখনই সময়

বগুড়া: একটু লাভের আশায় বগুড়ায় প্রতিবছর আগাম আলু চাষা করে থাকেন চাষিরা।  

জেলার ১২টি উপজেলায় এখনো রোপা-আমন ধান কাটা-মাড়াই শেষ হয়নি।

তবে সদ্য ফাঁকা হওয়া জমিগুলোতে এখন আগাম আলু চাষ করে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন চাষিরা।  

বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) বগুড়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলার বিভিন্ন উপজেলার তুলনামূলক উঁচু জমিগুলোতে আগাম আলু চাষ শুরু করেছেন চাষিরা।

জানা গেছে, সবজির জেলা হিসেবে পরিচিত বগুড়া। এ জেলায় জমি কখনো ফেলে রাখেন না চাষিরা।

অ্যাস্টেরিক ও কার্টিনাল নামে আগাম জাতের আলু চাষ করা হয়েছে। এ দুই জাতের আলু রোপণের ৫৫ থেকে ৬০ দিনের মাথায় বিক্রির উপযোগী হয়। এসব আলুতে পুষ্টি বেশি আবার কম সময়ে বিক্রির উপযোগী হয়। ফলে লাভ বেশি।  

এজন্য গতবারের মতো এবারও আগাম আলু চাষে নেমেছেন চাষিরা।  

বগুড়ার বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে দেখে যায়, জেলার বিভিন্ন উপজেলায় এখনো বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে রয়েছে কাঁচা-পাকা ধান। আগামী দুই-তিন সপ্তাহের মধ্যেই পুরোদমে ধানগুলো কাটা ও মাড়াই শুরু হয়ে যাবে। ধান তোলা হয়ে গেলেই লাগানো হবে বিভিন্ন জাতের আলু। এখন মাঠে মাঠে চাষিরা একদিকে তাদের জমিগুলো প্রস্তুত করতে হাল দিচ্ছেন, আলগা মাটি সমান করতে জমিতে মই দিচ্ছেন, অন্যদিকে আলু বীজ বপনে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কেউ কেউ। সময়ে বাতাস আবার সময়ে ভ্যাপসা গরমের মধ্যেই চাষিরা কাজ করে চলেছেন।

শিবগঞ্জ উপজেলার শিবু ঘোষ, মোমিনুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, প্রায় প্রতি বছরই আগাম আলু চাষ করে থাকেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বিগত কয়েক বছর ভালো দাম পাওয়ায় এখন আলু চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন অনেক চাষি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আলুর বাম্পার ফলন হওয়ার আশা করছেন তারা। কৃষি বিভাগ থেকে আলু চাষের প্রশিক্ষণ ও উৎপাদিত আলু সরকার সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে কিনলে কৃষকরা বেশি লাভবান হবেন। সেই সঙ্গে আলু চাষে আরও আগ্রহী হবেন বলে মনে করেন তারা।

তারা বলেন, গেল বছরের মতো এ বছর আলুর বীজের দাম তুলনামূলক বেশি। বীজ কিনতে অনেকেই হিমশিম খাচ্ছেন। দ্বিগুণ দামে আলুর বীজ কিনতে হচ্ছে তাদের। বর্তমানে বাজার থেকে তারা লাল পাকরি আলুর বীজ কিনছেন প্রতিকেজি ৪৫-৫৫ টাকা দরে এবং কার্ডিনাল প্রতিকেজির দাম ৪০-৪৫ টাকা।

সদর ও শাজাহানপুর উপজেলার চাষি আইনুর ইসলাম, আব্দুর রশিদ বাংলানিউজকে জানান, সিংহভাগ জমিতে এখনও ধান রয়েছে। যে সব জমিতে মৌসুমি বিভিন্ন সবজি লাগানো হয় সেসব জমিতে আলু চাষের প্রস্তুতি চলছে। বাকি জমিগুলোর ধান কাটা শেষ হওয়ার অপেক্ষা। আগামী কিছুদিনের মধ্যেই ধান কাটা শুরু হয়ে যাবে। তারপরই এক যোগে চলবে আলুর আবাদ।

তারা বলেন, আবহাওয়া ভালো থাকলে (অতি বৃষ্টিপাত না হলে) আগাম মৌসুমে আলুতে ভালো দাম পাওয়া যাবে। এবার তারা আলু চাষে মনোযোগ দিয়েছেন। গতবছর তারা সাত ও সাড়ে ১২ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছিলেন। এ বছর দাম বেশি থাকায় সমপরিমাণ জমিতেই আলুর চাষ শুরু করেছেন। তবে বীজের দাম বেশি থাকায় এবং শ্রমিকের মজুরি বাড়ায় গতবারের চেয়ে এবার আলু চাষের খরচ বেড়েছে। তবু ফলন ভালো ফলন ও উপযুক্ত দাম পেলে লাভবান হবেন তারা।

আব্দুল হান্নান, মিজানুর, সাজ্জাদ আলী নামে তিন দিনমজুর বাংলানিউজকে জানান, অন্যের জমিতে কাজের জন্য তাদের ছয়জনের একটি টিম রয়েছে। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে সদরের সাখারিয়া এলাকায় দুই কৃষকের প্রায় ১২ বিঘা জমিতে আগাম অ্যাস্টেরিক জাতের আলু চাষ করছেন তারা। এসব জমিতে দিনমজুর দিচ্ছেন। বিনিময়ে দিনশেষে তারা ৫৫০-৬০০ টাকা পেয়ে থাকেন। সেই সঙ্গে দুপুরে একবেলা খাবার রয়েছে। এতে তাদের যা আয় হয়, তা দিয়ে চলে সংসার। আগামী কিছুদিনের মধ্যে এ জেলায় ধান কাটা শুরু হবে। তার পরপরই একযোগে শুরু হবে আলু চাষ। পরে তারা সেই কাজে নিযুক্ত হবেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী পরিচালক মো. ফরিদুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, আলু চাষের জন্য বেলে দোআঁশ বা দোআঁশ মাটি সবচেয়ে উপযোগী। বগুড়া জেলার চাষিরা আগাম আলু চাষাবাদ করে থাকেন। আলু চাষে প্রয়োজন শুকনো মাটির জমি। যা এ জেলায় রয়েছে। জেলার বিভিন্ন এলাকায় তুলনামূলক উঁচু জমিগুলোতে আলু চাষ শুরু হয়েছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪০৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১, ২০২৪
কেইউএ/এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।