ঢাকা, শনিবার, ২৯ চৈত্র ১৪৩১, ১২ এপ্রিল ২০২৫, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৬

কৃষি

মেঘ দেখলেই ভয়...

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২৪ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০১৭
মেঘ দেখলেই ভয়... বন্যার পানিতে নষ্ট হয়েছে ফসল-ছবি-বাংলানিউজ

রংপুর থেকে: দু'দফা বন্যায় আমন ধান ও উঠতি রবি শষ্যের ক্ষতি এবং পুকুরের মাছ ভেসে যাওয়ার পর এখন মেঘ দেখলেই চমকে উঠেন কৃষক। বন্যার পানিতে তলিয়ে আমন ক্ষেতের চারা নষ্ট হয়ে গেছে। সেই জমিতে আবারও চারা রোপণ করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন তারা। আর এই মুহূর্তে রবি শষ্যের দিকে মনোযোগ নেই। কারণ রবি শষ্যের উ‍ঁচু জমি এখন পতিত অবস্থায় রয়েছে।

উত্তরাঞ্চলের অন্য জেলার মতো রংপুরেও বন্যার ক্ষত আছে। অসময়ের বন্যা কৃষকদের স্বপ্ন ভাসিয়ে নিয়ে গেছে।

সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে উজানের জেলা দিনাজপুরের পার্শ্ববর্তী বদরগঞ্জ, লালমনিরহাট-কুড়িগ্রামের পার্শ্ববর্তী গঙ্গাচড়া এবং সদর উপজেলায়।  

বদরগঞ্জ উপজেলার লোহানীপাড়া গ্রামের মো. রিপন জানান, বন্যার প্রায় এক সপ্তাহ আগে লাগানো চার বিঘা আমন ধান পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে। পানি নেমে যাওয়ার পর ধানের চারা কিনে রোপণ করা হয়েছে। এখন মেঘ দেখলেই ভয় হয়। আবার যদি পানিতে তলিয়ে যায়!

সদর উপজেলার কেশবপুর গ্রামের শফিউলের আট বিঘা ধানের ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। ১০-১২ দিন পর পানি নেমে যাওয়া শুরু করায় নতুন করে রোপণ শুরু করেছেন। তবে পুরোপুরি পানি না নামায় এবং ধানের চারার সংকটের কারণে ক্ষেতের পুরোটা রোপণ করা যায়নি। তার ক্ষেতের পাশে লাগানো পেঁপের আড়াইশ গাছও বন্যার পানিতে মরে গেছে।

আবারও চারা রোপণ করছেন মোজাম্মেল হক-ছবি-বাংলানিউজ

আবারও চারা রোপণ করছেন মোজাম্মেল হক-ছবি-বাংলানিউজ

একই উপজেলার এন্তাজ আলী পালিচড়ার বিলে চার বিঘা জমির পুকুরে বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ১০ লাখ মাছের পোনা ছেড়েছিলেন। বন্যার পানিতে অধিকাংশ মাছ ভেসে গেছে। এতে মাথায় হাত পড়েছে তার।

বন্যায় বিভিন্ন এলাকার রবি শষ্যেরও ক্ষতি হয়েছে চোখে পড়ার মতো।

পালিচড়া বলের ডোবায় টিকা নেওয়া জমিতে এক দফা আমন রোপণ করেছিলেন মোজাম্মেল হক। বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় আবারও রোপণ করেছেন এক বিঘা জমিতে। অনেক খোঁজাখুঁজির পর ধানের চারা কিনেছেন দ্বিগুণ দামে। এতে দ্বিগুণ খরচ ও শ্রম গেছে তার।  

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, বন্যায় ৩৮ হাজার ২০০ হেক্টর জমির আমনের ক্ষেত পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এরমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৭ হাজার ২২৫ হেক্টর জমির আমন। এসব জমিতে চারা রোপণের কিছুদিনের মধ্যে বন্যা হয়। ক্ষতিগ্রস্ত জমির মধ্যে ১২ হাজার ৬৭৫ হেক্টর জমিতে পুনঃরোপণ করা হয়েছে।

বন্যার পানিতে ভেসে গেছে পুকুরের মাছ-ছবি-বাংলানিউজ

বন্যার পানিতে ভেসে গেছে পুকুরের মাছ-ছবি-বাংলানিউজ

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক স.ম. আশরাফ আলী বাংলানিউজকে বলেন, জেলার ৮শ’ কৃষকের মধ্যে আমনের চারা বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত জমির প্রায় শতভাগের মতো চারা পুনঃরোপণ করা হয়েছে। ঈদের পর ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চারা রোপণ চলবে। এর আগে তারা ভাসমান বীজতলায় চারা তৈরি করে কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ করেন।

তবে অনেকেই চারা পাননি বলেও জানান কৃষক মোজাম্মেল।

এবার ১ লাখ ৬২ হাজার ৪১৯ হেক্টর জমি আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও এ পর্যন্ত ১ লাখ ৬২ হাজার ৮শ’ হেক্টর জমিতে আমনের চারা রোপণ করা হয়েছে।

বন্যার পানির কারণে পলিপড়া এবং মাটির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পাওয়ায় এবার ফসলের টার্গেট বৃদ্ধি পাবে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রতিবার পানি সংকটে চাষ হয় না। এবার সেই সংকট নেই। অনেকে উঁচু জায়গাতেও আমন চাষ করছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৫ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০১৭
এমআইএইচ/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।