ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

বই মানব সভ্যতা সৃষ্টি করেছে: আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০০ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০২৩
বই মানব সভ্যতা সৃষ্টি করেছে: আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ

রাজশাহী: বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেছেন, বই হচ্ছে পরিশীলন, বই হচ্ছে রুচি। বই মানব সভ্যতা সৃষ্টি করেছে।

যদি বই থাকে তাহলে সভ্যতা থাকবে। আর যদি বই চলে যায় তাহলে সভ্যতা চলে যাবে। পৃথিবীতে আবারও সেই জন্তু জানোয়ারের যুগ চলে আসবে।

শনিবার (২৫ জুন) সন্ধ্যায় রাজশাহীতে ‘বাতিঘর’-এর নতুন আউটলেটের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, আমরা বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র থেকে চেষ্টা করে বাংলাদেশের প্রতিটি স্কুলে বই পড়া কর্মসূচি চালু রাখতে পেরেছি। এখন ১৫ হাজার স্কুলে বই পড়া কর্মসূচি চলছে। আগামী তিন মাস পর ৩০ হাজার স্কুলে এই কর্মসূচি চলবে। এছাড়া ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি সারা দেশে চালু আছে। তারপর ভ্রাম্যমাণ বইমেলা চালু করেছি। সেটাকেও আমরা বড় করব। এক সময় প্রত্যেক জায়গায় বইমেলা হবে। কারণ, আমাদের সমস্ত জাতির বই কেবল একটামাত্র মেলায় গিয়ে জমা পড়ে। সেটা কোনটা? একুশে বইমেলা। কিন্তু এটা দিয়ে কী একটা জাতি চলতে পারে? একটা শহরে চলতে পারে, একটা গ্রামে চলতে পারে। কিন্তু একটা জাতির কী একটা মেলা দিয়ে চলতে পারে? তাই প্রত্যেকটা জায়গায় বইমেলা হতে হবে। সরকার মাঝে মাঝে একটা চেষ্টা করে বাইরে বইমেলা আয়োজনের। কিন্তু পাবলিশার্সরা আসতে পারে না। এটা সম্ভব হয় না। আর ঢাকার বাইরে বইমেলা করে টাকা ওঠে না। এই সময় বাতিঘরের দীপঙ্কর যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা প্রশসংসার দাবি রাখে। আমার কাছে যখন পরামর্শ চাইলো তখন আমি বললাম শিগগিরই করো। এরপর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রেও বাতিঘর করা হলো। আপনারা যদি সেখানে একবার যান, তাহলে কথা দিচ্ছি, তাজমহল আর দেখতে যেতে হবে না। এটি এত সুন্দর!

স্কুলে স্কুলে বই পড়া কমে যাওয়ার কথা বলতে গিয়ে অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, এরশাদ সরকার আসার পরে একটা কমিটি গঠিত হলো। কর্নেল এনাম কমিটি। সেই কমিটি এসে কী করল? মানে আমাদের শেষ পর্যন্ত যা আশা-ভরসা ছিল, উনি সেটাকে শেষ করে দিলেন! উনি দেশের সমস্ত স্কুল থেকে লাইব্রেরিয়ানের পদ বিলুপ্ত করে দিলেন। এখন স্কুলে আর বই নাই। স্কুলে বই নাই মানে কী? ছাত্রের কাছে বই নাই মানে কী? সারা জাতির কাছে বই নাই! তারপরও ছেলেপেলেরা যেন বই কাকে বলে, তা চোখে দেখতে না পারে সেই জন্য বইগুলোকে সব ঢোকানো হলো কাঠের আলমারির মধ্যে। লোহা-কাঠের আলমারি এবং সামনে বাজারের সবচেয়ে ভয়াবহতম তালা এনে লাগানো হলো। স্কুলের মধ্যে যে শিক্ষক সবচেয়ে ভয়াবহ দর্শন, যাকে দেখলে ছাত্ররা দৌড় দেয়, তাকে লাইব্রেরিয়ানের ভারপ্রাপ্ত করা হলো। বই দেওয়া হবে না, কিন্তু বইগুলোকে তো রাখতে হবে!

‘এরপর আস্তে আস্তে লাইব্রেরি শেষ হয়ে গেল! শিক্ষা আরও নিচের দিকে নামল। তখন আমরা এই এরশাদ আমলের শেষদিকে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র করার কথা চিন্তা করলাম, যেহেতু একটা জাতি বইহীন হয়ে গেছে। এখন এই জাতির মধ্যে বই আনতে হবে। ব্রিটিশরা যে রকম আমাদের চা ধরিয়েছিল। আমরা তেমনি এই জাতিকে বই ধরাব। দেখা যাক, যেমন করে পারি বই আনব। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন ৭ মার্চের ভাষণে। ভাষণের সময় আমি ঠিক বঙ্গবন্ধুর থেকে ৩০ হাত দূরে ছিলাম। আমি ওই তেজ দেখেছি। মাইক্রোফোনে শুনেও বোঝা যায় না, আর ভিডিওতেও বোঝা যায় না। উনি বলেছিলেন যে, ‘যার যা আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে’। আমরা ঠিক করলাম, যে যত দিক থেকে পারা যায়, এই জাতির হাতে বই নিয়ে যেতে হবে আমাদের। কারণ বই হচ্ছে পরিশীলন। ’

বরেণ্য এই শিক্ষাবিদ আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিঘরের রাজশাহী আউটলেটের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। সাহিত্য, সংস্কৃতি ও জ্ঞানচর্চায় নতুন মাত্রা যোগ করতে রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানার পেছনে খানসামার চকে এই আউটলেট করা হলো। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান যেন কবি-সাহিত্যিকদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছিল। হাজির হয়েছিলেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও।

এতে অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন লেখক মহিউদ্দিন আহমেদ, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার জিএসএম জাফরউল্লাহ, রাজশাহী মহানগর পুলিশের কমিশনার মো. আনিসুর রহমান, রাজশাহী জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ, রাজশাহী কবিকুঞ্জের সভাপতি রুহুল আমিন প্রামাণিক।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাতিঘরের স্বত্বাধিকারী দীপঙ্কর দাশ ও জেনারেল ম্যানেজার মো. কাইয়ুম। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন বাতিঘরের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রধান সম্পাদক জাফর আহমদ রাশেদ।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ঈদের দিন ব্যতীত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বাতিঘরের রাজশাহীসহ প্রতিটি আউটলেট খোলা থাকবে। এখানে বাতিঘর ছাড়াও দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রকাশনীর বই পাওয়া যাবে।

বাতিঘরে রয়েছে বাংলা ও ইংরেজি দুই ভাষার বইয়ের বিপুল সংগ্রহ। কথাসাহিত্য, গল্প-কবিতা-প্রবন্ধ, শিল্প-দর্শন-ইতিহাস-রাজনীতি, মনোবিজ্ঞান, নাট্যতত্ত্ব, স্থাপত্যশিল্পসহ বিবিধ বিষয়ের বইয়ের সম্ভার আছে ছেলে-বুড়ো সবার জন্য। বাতিঘরের প্রতিটি শাখায় ছোটদের জন্য রয়েছে আলাদা শিশু-কিশোর কর্নার। গল্প, রহস্য, বিজ্ঞান, ছবির বই, ভূতের বই, গোয়েন্দা বই, কমিকস নিয়ে খুদে পাঠকদের উচ্ছ্বাস ভবিষ্যতের পাঠকপ্রজন্ম নিয়ে আশার সঞ্চার করে।

প্রতিষ্ঠাতা দীপঙ্কর দাশের প্রত্যাশা দেশের সব বিভাগে এবং পর্যায়ক্রমে জেলা পর্যায়ে গ্রন্থবিপণিটির শাখা চালু করার। নিশ্চয়ই পাঠক, লেখক, শুভাকাঙ্ক্ষীদের অনুপ্রেরণায় পুরো বিশ্বে পৌঁছে যাবে ‘বাতিঘর’ নামের বইয়ের সাম্রাজ্যের দীপ্তি। আর এখানে কেবল বাতিঘর নয় বাংলাদেশসহ পৃথিবীর যে কোনো দেশের মুদ্রিত বই ও প্রকাশনীর বিশাল সংগ্রহ মিলবে। বাতিঘরের নতুন সংযোজন www.baatighar.com ওয়েবসাইট।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৪ ঘণ্টা, জুন ২৪, ২০২৩
এসএস/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।