মুক্তিযুদ্ধ—আমাদের গৌরব আমাদের অহঙ্কার। লক্ষ প্রাণের রক্তের বিনিময়ে এসেছে মুক্তিযুদ্ধে বিজয়।
১৯৬৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ছিল ৩৩টি। ১৯৭০ সালে সেটা বেড়ে হয়েছিল ৪১। যুদ্ধের আগে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ছাড়া ১৯৭১-এ আর কোনও ছবি নির্মাণ সম্ভব ছিল না। কিন্তু যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে যুদ্ধের আগের নির্মীয়মাণ ছবিসহ ৭২ সালেই ২৯টি ছবির মুক্তি পায়। ১৯৭২, ১৯৭৩ এবং ১৯৭৪ সালে মোট দশটি মুক্তিযুদ্ধকেন্দ্রিক চলচ্চিত্র তৈরি হয়। ২০০৪ সালে আবার একই বছরে তিনটি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র নির্মিত হয়।

[ওরা ১১জন চলচ্চিত্রের একটি দৃশ্য]
মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন চাষী নজরুল ইসলাম। চলচ্চিত্রটির নাম ‘ওরা ১১ জন’। ছবিটি পরিচালনা করেছিলেন মাসুদ পারভেজ, জাগ্রত কথাচিত্রের ব্যানারে। চাষী নজরুল ইসলামের এটিই প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য কাহিনীচিত্র যার কাহিনীকার আল মাসুদ, চিত্রনাট্যকার কাজী আজিজ, সংলাপে এটিএম শামসুজ্জামান। অভিনয় করেছিলেন খসরু, শাবানা, রাজ্জাক, নূতন, সুমিতা দেবী, রওশন জামিল, এটিএম শামসুজ্জামানসহ আরও অনেকে। ১১ই আগস্ট ১৯৭২ এ মুক্তি পায় এই চলচ্চিত্রটি।

মুক্তিযুদ্ধের তৃতীয় ও চতুর্থ চলচ্চিত্র ‘রক্তাক্ত বাংলা’ এবং ‘বাঘা বাঙালী’ মুক্তি পায় ১৫ ডিসেম্বর ১৯৭২ সালে। ‘রক্তাক্ত বাংলা’ পরিচালনা করেন মমতাজ আলী এবং ‘বাঘা বাঙালী’ পরিচালনা করেন আনন্দ। ১৯৭৩ সালে মুক্তি পায় আলমগীর কবির পরিচালিত ‘ধীরে বহে মেঘনা’, আলমগীর কুমকুম পরিচালিত ‘আমার জন্মভূমি’ এবং খান আতাউর রহমান পরিচালিত ‘আবার তোরা মানুষ হ’। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তরুণ প্রজন্ম কী করছে তা নিয়ে তৈরি হয় ছবিটি।
পরিচালক আলমগীর কবিরের নির্মিত ‘ধীরে বহে মেঘনা’ চলচ্চিত্রটিতে অভিনয় করেছেন বুলবুল আহমেদ, জয়শ্রী কবির, আনোয়ার হোসেন প্রমুখ। এটি আলমগীর কবিরের প্রথম চলচ্চিত্র। ১৯৭৩ সালে নির্মিত অন্যান্য ছবিগুলো হলো, আলমগীর কুমকুম পরিচালিত ‘আমার জন্মভূমি’। ১৯৭৪ সালে মুক্তি পায় চাষী নজরুল ইসলামের ‘সংগ্রাম’, নারায়ন ঘোষ মিতার ‘আলোর মিছিল’ এবং আনন্দের ‘কার হাসি কে হাসে’।
নারয়ণ ঘোষ মিতা পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘আলোর মিছিল’ ছবিতে অভিনয় করেন রাজ্জাক-সুজাতা। পুরস্কারপ্রাপ্ত ছবি এটি।

১৯৯৩ সালে লেখক শাহরিয়ার কবিরের লেখা এবং নাসির উদ্দীন ইউসুফ-এর পরিচালনায় নির্মিত ছবি ‘একাত্তরের যীশু’। ছবির প্রধান চরিত্রগুলোতে অভিনয় করেছেন পীযূষ বন্দোপাধ্যায়, হুমায়ূন ফরীদি, জহির উদ্দিন পিয়াল, আবুল খায়ের, আনওয়ার ফারুক, কামাল বায়েজীদ ও শহীদুজ্জামান সেলিম। এছাড়া বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন ইব্রাহীম বিদুৎ, শতদল বড়ুয়া বিলু, সাইফুদ্দিন আহমেদ দুলাল, ফারুক আহমেদ, ইউসুফ খসরু, দেলোয়ার হোসেনসহ আরও অনেকেই। ১৯৯৩ সালে হারুন উর রশীদ পরিচালিত ‘মেঘের অনেক রং’ ও ‘আমরা তোমাদের ভুলব না’ নির্মিত হয়। ১৯৯৪ সালে তানভীর মোকাম্মেল পরিচালিত ‘নদীর নাম মধুমতি’।

১৯৯৭ সালে সেলিনা হোসেনের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত ছবি ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’ মুক্তি পায়। একই বছরে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে তিনটি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পায় ছবিটি। তারেক মাসুদ পরিচালিত ও ক্যাথরিন মাসুদ প্রযোজিত ১৯৯৯ সালে নির্মিত ছবি ‘মুক্তির কথা’। ১৯৯৮ সালে নির্মিত হুমায়ূন আহমেদের ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’। ২০০২ সালে তারেক মাসুদ নির্মাণ করলেন ‘মাটির ময়না’।
২০০৪ সালে হুমায়ূন আহমেদের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নির্মিত চলচ্চিত্রের মধ্যে আরেকটি বিশেষ ছবি ‘শ্যামল ছায়া’। এছাড়া একই বছর তৌকির আহমেদ নির্মাণ করেন জয়যাত্রা, হুমায়ূন আহমেদ পুনরায় নির্মাণ করলেন মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র শ্যামল ছায়া। ২০০৪ সালে চাষী নজরুল ইসলামের ‘মেঘের পর মেঘ’।
২০০৬ সালের ১৬ ডিসেম্বর মুক্তি পায় চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত ছবি ‘ধ্রুবতারা’। এ ছবির বিশেষ ভূমিকায় অভিনয় করেন মৌসুমী। মৌসুমী অভিনীত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রথম ছবি এটি। ২০০৬ সালে মোরশেদুল ইসলাম নির্মাণ করেন ‘খেলাঘর’।

মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আরও ছবি হলো, শাহজাহান চৌধুরীর ‘আত্মদান’। ছবিতে অভিনয় করেছেন নিরব ও নিপুন। যুদ্ধপরবর্তী সময়ে একজন মুক্তিযোদ্ধা ভিক্ষুকের গল্প নিয়ে খালিদ মাহমুদ মিঠু নির্মাণ করে ‘গহীনে শব্দ’। ছবিতে মুক্তিযোদ্ধার চরিত্রে অভিনয় করেছেন মাসুম আজিজ। সোহেল আরমান পরিচালিত ‘এই তো প্রেম’। ইলাজার ইসলাম পরিচালিত ‘দীপ নেভার আগে’।
এ ছবিটি জাহানারা ইমামের উপন্যাস ‘একাত্তরের দিনগুলি’ অবলম্বনে নির্মিত। মুক্তিযুদ্ধের নির্মিত চলচ্চিত্র ‘কারিগর’। ইমপ্রেস টেলিফিল্ম প্রযোজিত স্বাধীনতা দিবসকে উদ্দেশ্য করে, গত ২৩ মার্চ বলাকা সিনেওয়ার্ল্ডে মুক্তি পেয়েছে এ ছবিটি। এ ছবিতে অভিনয় করেছেন রোকেয়া প্রাচী, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, সুষমা সরকার, রাণী সরকার, হিমা মৃধা, গোলাম মোস্তফা, মাসুদ আলম বাবু, শামীম খান প্রমুখ।
আমাদের চেতনা জুড়ে ছড়িয়ে আছে মুক্তিযুদ্ধ। আমাদের জাতীয় জীবনে সবচেয়ে গৌরব ও তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা মুক্তিযুদ্ধ। স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসকে মর্যাদার সঙ্গেই চলচ্চিত্রে তুলে ধরেছেন আমাদের অভিনয় শিল্পী, নির্মাতারা। যা দিয়ে আমাদের আগামী প্রজন্ম জানতে পারবে আমাদের গৌরব সম্পর্কে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৮ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০১৫