George_Orwell_inner
___________________________________
শুরু থেকে পড়তে ক্লিক করুন
তৃতীয় খণ্ডের ৭ম কিস্তি
___________________________________
লোকটির চেহারা ততক্ষণে ফ্যাকাশে হয়ে এমন রঙ ধরেছে যে উইনস্টনের কাছে অবিশ্বাস্য ঠেকছে, এমনটা হতে পারে। নিশ্চিত আর নির্ভুলভাবে সে রঙটি ছিল সবুজাভ।
‘আমাকে নিয়ে যা মন চায় করুন’—চিৎকার করে উঠলেন লোকটি। ‘আপনারা আমাকে সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে না খাইয়ে রেখেছেন। এবার ক্ষ্যামা দিন, আমাকে মরতে দিন। আমাকে গুলি করুন, ফাঁসি দিন। পঁচিশ বছরের কারাদণ্ড দিন। আর কার কথা আপনারা আমার কাছে জানতে চান? বলুন কে? আপনারা যা চান আমি তাই বলব। কাউকে নিয়ে আর আমার চিন্তা নেই, কে তা নিয়েও আমি পরোয়া করি না। আমার এক স্ত্রী আর তিন সন্তান। সবচেয়ে বড়টির এখনো ছয় বছর হয়নি। আপনারা ওদেরও নিয়ে যেতে পারেন, আমার সামনেই ওদের জিহ্বা কেটে ফেলতে পারেন, আমি স্রেফ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখব। কিন্তু আমাকে ওই ১০১ নম্বর রুমে নেবেন না!’
‘রুম ১০১’—শীতল উচ্চারণ কর্মকর্তাটির।

undefined
আমাকে গুলি করুন, ফাঁসি দিন। পঁচিশ বছরের কারাদণ্ড দিন। আর কার কথা আপনারা আমার কাছে জানতে চান? বলুন কে? আপনারা যা চান আমি তাই বলব। কাউকে নিয়ে আর আমার চিন্তা নেই, কে তা নিয়েও আমি পরোয়া করি না। আমার এক স্ত্রী আর তিন সন্তান। সবচেয়ে বড়টির এখনো ছয় বছর হয়নি। আপনারা ওদেরও নিয়ে যেতে পারেন, আমার সামনেই ওদের জিহ্বা কেটে ফেলতে পারেন, আমি স্রেফ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখব।

undefined
ক্ষিপ্ত চাহনি দিয়ে কক্ষের অন্য কয়েদীদের বিঁধতে থাকলে লোকটি, চোখের ভাষা যেন বলছে, তার স্থানে এদের মধ্য থেকে আরেকজনকে পাঠিয়ে দিতে পারবেন কিনা সেটাই খুঁজছেন। এরপর চোখদুটি গিয়ে স্থির হলো চোয়ালহীন থেঁতলানো মুখটির ওপর। সব ক্ষোভ যেন তারই ওপর। ওর দিকে ক্ষীণকায় একটি বাহু ছুঁড়তে শুরু করলেন।
‘আমাকে নয়, তোমাদের উচিত ওঁকে নিয়ে যাওয়া!’—চিৎকার করে বললেন তিনি। ‘তোমরা শোনোনি, মুখখানি থেঁতলে দেওয়ার পর সে কী বলেছে। আমাকে বলতে দাও, ওর প্রতিটি শব্দ আমি তোমাদের বলে দেব। আসলে আমি নই, সেই হচ্ছে পার্টি বিরোধী। ’
নিরাপত্তা রক্ষীরা সামনে এগিয়ে এলো। লোকটির কণ্ঠ তীক্ষ্ণতর হলো, তোমরা শুনতে পাচ্ছো না আমার কথা! বারবার বলতে লাগলেন তিনি। ‘টেলিস্ক্রিনে কিছু একটা সমস্যা হয়েছে। তোমরা আসলে আমাকে নয় ওকে নিতে চাচ্ছো। ওকেই নিয়ে যাও, আমাকে নয়!’
দুই রক্ষী লোকটির দুই বাহু লক্ষ করে এগিয়ে গেল আর ধরতে উদ্যত হলো। কিন্তু ঠিক তখনই মেঝেতে শুয়ে পড়লেন তিনি আর বেঞ্চিটির একটি লোহার পায়া দুই হাতে শক্ত করে ধরে ফেললেন। এবার কোনো কথা নেই। মুখ থেকে ভেসে আসছে পশুর মতো গোঙানির শব্দ। রক্ষীরা তাকে ধরে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে কিন্তু বিস্ময়কর শক্তি দিয়ে তিনি আঁকড়ে ধরে আছেন লোহার পায়া। সম্ভবত বিশ সেকেন্ড রক্ষীরা তাকে টানাটানি করল। বাকি কয়েদীরা মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছেন, যার যার হাত হাঁটুর ওপর আড়াআড়ি করে রাখা। প্রত্যেকেরই নিজ নিজ সম্মুখপানে দৃষ্টি। গোঙানি থেমেছে। ফাঁসিতে ঝোলানোর জন্য প্রয়োজনীয় নিঃশ্বাসটুকু ছাড়া লোকটির কাছে তখন আর অবশিষ্ট কিছুই নেই। এরপর শুরু হলো ভিন্ন রকমের কান্না। রক্ষীদের একজনের কষে মারা বুটের লাথিতে লোকটির একহাতের সবগুলো আঙুল ভেঙে গেল। এরপর তার পা ধরে ওরা দুজন তাকে টেনে হিঁচড়ে বের করল।
‘রুম ১০১’—বললেন কর্মকর্তাটি।
তৃতীয় খণ্ডের ৯ম কিস্তির লিংক

undefined
বাংলাদেশ সময়: ১৫৩১ ঘণ্টা, আগস্ট ২৫, ২০১৫