ঢাকা, রবিবার, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২, ১১ মে ২০২৫, ১৩ জিলকদ ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

তুলির পিক্সেলে দেশ-কাল-ইতিহাস

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩:১৭, অক্টোবর ৭, ২০১৫
তুলির পিক্সেলে দেশ-কাল-ইতিহাস ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: চিত্রের বহুভাষা এক করে হাজার পিক্সেলের সমারোহ রংতুলিতে দেখে একটু অবাক হওয়ারই কথা। কাজটি শিল্পী রত্নেশ্বর সূত্রধরের।

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অংকন ও চিত্রায়ন বিভাগ থেকে চিত্রকলায় স্নাতকোত্তর পাঠ সম্পন্ন করেছেন। চিত্রভাষা নির্মাণে তার সুনিপুণ কাজ মুগ্ধ করেছে চিত্রবোদ্ধাদের। তার ক্যানভাসে উঠে এসেছে চলমান ঘটনার সব অস্থিরতা।  

‘পিক্সেল এরর’ শিরোনামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের জয়নুল গ্যালারি-১ এ চলছে নবীন এ শিল্পীর প্রথম একক চিত্র প্রদর্শনী।

undefined


বুধবার (০৭ অক্টোবর) সপ্তাহব্যাপী এ প্রদর্শনীর শেষ দিন। বর্গাকার পিক্সেলে আঁকা ২৩টি আলোকচিত্র নিয়ে চলা এ প্রদর্শনী শেষ হচ্ছে রাত ৮টায়। প্রদর্শনীর অর্জিত অর্থের একাংশ ব্যয় হবে পথশিশুদের জন্য শিক্ষা সামগ্রী সংগ্রহে।
 
শিল্পী রত্নেশ্বর সূত্রধর তার চিত্রকর্মে সড়ক দ‍ুর্ঘটনা, সংখ্যালঘু নির্যাতন, যৌন হয়রানি, সাভার ট্র্যাজেডি, অগ্নিদগ্ধ মুখ তুলে ধরেছেন শৈল্পিক ভাষায়। দেওয়ালে শোভিত কিংকর্তব্যবিমূঢ় প্রতিকৃতির প্রায় সবই নিরাশা আর ঘটনার আকস্মিকতায় স্তব্ধ জীবনের প্রতিনিধিত্ব করছে।

undefined


মঙ্গলবার (০৬ অক্টোবর) সন্ধ্যায় প্রদর্শনী ঘুরে দেখছেন সৌখিন আলোকচিত্রী ফয়সাল ইসলাম। তিনি বলেন, আধুনিক চিত্রকর্ম মনে হয় এটাই। পিক্সেল এরর আকৃতির চিত্রকর্ম ও প্রদর্শনী আগে দেখিনি। এটাকে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম মনে হচ্ছে।

গ্যালারির বাঁ দিক থেকে শুরু করলে প্রথম ছবিটি সহিংসতায় আক্রান্ত মানবতার বীভৎস চেহারা মনে করিয়ে দেয়। আগুনে পুড়ে যাওয়া মুখচ্ছবি ও তার যন্ত্রণা ফুটিয়ে তুলেছেন শিল্পী।

undefined


পরের ছবিগুলোও যন্ত্রণা আর অস্থিরতার দিকে নিয়ে যায়। শুধু দেশ নয়, সমসাময়িক বৈশ্বিক বীভৎসতা আর নিষ্ঠুরতায় থেমে যাওয়া জীবনও ঠাঁই পেয়েছে তার চিত্রকর্মে। এঁকেছেন গাজায় নিষ্ঠুর ইসরায়েলি হামলায় আক্রান্ত শিশুর ছবি।

গ্যালারির মধ্যভাগে সবচেয়ে বড় চিত্রকর্মটি অনেকটা তাক লাগানো। যে কাউকে অনেকক্ষণ থামিয়ে দেয় এ প্রতিকৃতি। শত শত পিক্সেলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের টুকরো টুকরো ছবিতে বিশাল আকারে বঙ্গবন্ধুর মুখাবয়ব চিত্রিত করেছেন শিল্পী।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নাসিমুল খবির বলেন, রত্নেশ্বর ডিজিটাল ইমেজের বর্গাকার এককগুলো মূর্ত করে চিত্র আঙ্গিকের সঙ্গে সংমিশ্রণ করেন। প্রথাগত বাস্তবানুগ বর্ণনার সঙ্গে একীভূত হয় ডিজিটাল ডিভাইসের দৃশ্যগত অভিজ্ঞতা। কম রেজ্যুলেশনের চিত্র বা বিঘ্নিত প্রবাহের কারণে যে ভিজ্যুয়াল এরর তৈরি হয়, সেই অভিজ্ঞতা ক্যানভাসে রং ও তুলিতে তিনি রূপ দিয়েছেন পরিকল্পিতভাবে।

undefined


নিজের চিত্রকর্ম ঘুরে দেখিয়ে রত্নেশ্বর সূত্রধর বাংলানিউজকে বলেন, সামাজিক দায়বদ্ধতার সতর্ক কোনো চর্চাও নয়, চলমান ঘটনার অস্থিরতাই আমাকে বিষয় নির্বাচনে তাড়িত করেছে।

এসব অস্থিরতা অসঙ্গত নির্বাক স্থবিরতায় প্রকাশ করেছি হ্যাং হয়ে পড়া দুর্বল ভিডিও ফাইলের স্ক্রিনশটের মতো ভেঙে যাওয়া পিক্সেলে- বলেন শিল্পী রত্নেশ্বর।

বাংলাদেশ সময়: ১৩১৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৭, ২০১৫
এসএ/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।