বাংলাদেশের ভেতরে ১৪২৪ বঙ্গাব্দে প্রকাশিত বই থেকে সৃজনশীল শাখায় যৌথভাবে মাসুদ খানের কাব্য ‘প্রসন্ন দ্বীপদেশ’ ও সুমন রহমানের গল্পগ্রন্থ ‘নিরপরাধ ঘুম’ মনোনীত হয়েছে। আর মননশীল শাখায় পুরস্কৃত হয়েছে শাওন আকন্দের গবেষণাগ্রন্থ ‘বাংলাদেশের তাঁতশিল্প’।
শনিবার (১৯ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনের প্রধান মিলনায়তনে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বই তিনটির লেখকদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। তবে মাসুদ খান দেশের বাইরে থাকায় তার ভগ্নিপতি আফজাল হোসেন পুরস্কার গ্রহণ করেন।

লোক-সংস্কৃতিবিদ ও বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খানের সভাপতিত্বে ফয়জুল লতিফ চৌধুরী, অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী, কথাসাহিত্যিক শাহীন আখতার ও মোহাম্মদ আজমের সমন্বয়ে গঠিত বিচারকমণ্ডলী সম্প্রতি পুরস্কারের জন্য বই তিনটি চূড়ান্তভাবে নির্বাচন করেন।

অনুষ্ঠানে অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান বলেন, সাহিত্যের পুরস্কার পাওয়ার জন্য বেশ বড় বড় তদবির হয়। সেটার জন্য আমরাও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ি। তবে এবারে ব্যতিক্রম। এই পুরস্কারের জন্য কেউ তদবির করেনি। যারা পুরস্কার পেয়েছেন তাদের অভিনন্দন জানাই, শুভেচ্ছা জানাই।
শামসুজ্জামান খান বলেন, সত্যিকার অর্থে আমাদের মধ্যের লেখকদের অনেকের লেখা পড়া যায় না, সেই তুলনায় এখানে যারা লিখেছেন তাদের লেখা চমৎকৃত করে। তাদের লেখা অভিভূত হয়েছে।
প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, হাজারো বইয়ের ভিড়ে মননশীল বইয়ের চাহিদা থাকে সবসময়।
যারা লিখতে চান তাদের উৎসাহ দিয়ে তিনি বলেন, মানসম্মত হলে তা প্রচার ও প্রকাশের ব্যবস্থা করবো আমরা।
প্রথম আলো সম্পাদক আরও বলেন, বই দেখতে ও পড়তে ভালো লাগে, নতুন বইয়ের গন্ধ শুকতেও ভালো লাগে। আমরা দেখেছি দিনে দিনে সারা বাংলাদেশে বইয়ের ব্যাপারে মানুষের মধ্যে তীব্র আবেগ এবং ভালোবাসা আছে। বাংলা একাডেমিতে আমাদের দেশের মানুষের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ তৈরি হয়। আমাদের উদ্দীপনা ফিরে এসেছে যে মানুষ বই কেনে, বই সংগ্রহ করে। কবিতা, গল্প, উপন্যাস ছাড়াও মননশীল বইয়ের প্রতি আগ্রহ বেশি। রাজনীতি, সামাজিক, ইতিহাস, আত্মজীবনী বই সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়। যদিও ধর্মের বই সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় এবং বিজ্ঞানের বই তার পরের স্থানে।
শাওন আকন্দের লেখা ‘বাংলাদেশের তাঁতশিল্প’ বইটি প্রকাশ করেছে ‘দেশাল’ প্রকাশন। প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে শাওন বলেন, তাঁত শিল্পের খোঁজে বাংলাদেশের তাঁত সমৃদ্ধ প্রতিটি গ্রাম ছাড়াও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বেনারস যেতে হয়েছে। এই বইটি ভবিষ্যত গবেষকদের জন্য গবেষণার উপাদান যোগাবে বলে আশা করছি।
‘বাংলাদেশের তাঁতশিল্প’ বই নিয়ে শামসুজ্জামান খান বলেন, বইটা এতটাই তথ্যপূর্ণ যে আমরা সবাই বিস্মিত হয়েছি। মনে হয়েছে যে এ ধরনের বই পুরস্কার পেলে সত্যিই ভালো লাগে।
শাওন আকন্দকে নিয়ে অভিজ্ঞানপত্রে ফয়জুল লতিফ চৌধুরী বলেন, বস্ত্রকে নিয়ে গবেষণা এক অসম্ভব প্রকল্প। এ অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন তিনি। তার লেখা বইটি এদেশের বস্ত্রশিল্পের এক তুলনাহীন দলিল। এতে বিলুপ্ত মসলিন ও জামদানির ইতিহাসও তুলে ধরা হয়েছে। এ গবেষণা গ্রন্থে এমন সব তথ্য আছে যা কোনো বাংলা গ্রন্থে অন্তত পাওয়া যাবে না।
‘প্রসন্ন দ্বীপদেশ’ বইটি প্রকাশ করেছে পাঞ্জেরী প্রকাশনী।
‘প্রসন্ন দ্বীপদেশ’র লেখক মাসুদ খানকে নিয়ে অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম অভিজ্ঞানপত্রে বলেন, তার কবিভাষায় আছে স্বচ্ছ প্রচ্ছন্নতা, যার দৃষ্টিগ্রাহ্য রূপ নির্মিতি সফলতায় পাঠককে উদার আহ্বান জানায় কাব্য ভোগের পরিচ্ছন্ন আয়োজনে। আর সে আয়োজনে আছে অচেনা শব্দের কৌশলী সংস্থান, চেনা শব্দের অভাবনীয় ব্যবহার।
প্রবাস থেকে ভিডিও কলে মাসুদ খান বলেন, তার লেখালেখি মান ও পরিমাণের দিক থেকে সামান্য। এ পুরস্কার এক প্রকার অনুপ্রেরণা ও উৎসাহের। আমি অনুপ্রাণিত।
সুমন রহমানের ‘নিরপরাধ ঘুম’ প্রকাশ করেছে প্রথমা।
‘নিরপরাধ ঘুম’ নিয়ে অভিজ্ঞানপত্রে অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী বলেন, বইয়ের ছয়টি গল্পে নানা বৈচিত্র্য। গল্পগুলোতে বাংলাদেশ আছে, কুশলী হাতে তিনি আলোকিত অঞ্চল থেকে কুয়াশা ঢাকা প্রকৃতিতে নিয়ে গেছেন। তার লেখায় একদিকে রাষ্ট্র এবং প্রভাবশালী ব্যক্তির বিপক্ষে তাকে দাঁড়াতে হয়েছে নিরীহ ব্যক্তির সঙ্গে। বইটিতে বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ডের বিবরণী ছড়িয়ে দিয়েছেন শহরের গলিপথে। গল্পের লেখক নিজেই সুপার হিরো হয়ে উঠেছেন।
এক প্রতিক্রিয়ায় সুমন রহমান বলেন, গল্পগুলো অনেক ছোট। বইয়ের আকার দিতে গিয়ে নানা রকম কসরত দিতে হয়েছে প্রকাশককে। বিচার বর্হিভূত হত্যার উপর অনেক ভাবনা নিয়ে বিপন্নতাবোধ থেকে বইটি লেখা।
পুরস্কৃত সবাইকে অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন প্রথমা প্রকাশনার প্রধান মতিউর রহমান।
কবি সাজ্জাদ শরিফ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পেছনে সাহিত্যের ভূমিকা ছিল এক নম্বরে। পৃথিবীর কোনো দেশে স্বাধীনাতা ভূমিকা রাখেনি। একাত্তরের আগে সাহিত্যের যে ভূমিকা ছিল স্বাধীনতার পরে তা উল্টে গেছে। সাহিত্য মানুষর স্বপ্ন ও মনকে জাগিয়ে রাখে সমস্ত প্রতিকূলতার মধ্যেও।
শুভেচ্ছা বক্তব্য ও অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করে কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক। অনুষ্ঠানে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর সম্পাদক জুয়েল মাজহার ছাড়াও কবি, লেখক, সাহিত্যিক এবং বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত ছিলেন। আর গান পরিবেশন করেন শিল্পী সায়ান।
বাংলাদেশ সময়: ২১০১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০১৯
এমআইএইচ/এইচএ/এসএইচ