ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

এভিয়াট্যুর

চিরসবুজ শান্তিধাম মিরিঞ্জা পর্যটনকেন্দ্র

নুরুল করিম আরমান, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১৪
চিরসবুজ শান্তিধাম মিরিঞ্জা পর্যটনকেন্দ্র ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বান্দরবান (লামা): প্রকৃতিকে সঙ্গে নিয়ে পর্যটকদের অনাবিল আনন্দ দিতে চিরসবুজ সাজে সেজেছে বান্দরবানের লামার মিরিঞ্জা পর্যটন কমপ্লেক্স। এখানে সুউচ্চ সবুজ পাহাড়-বনানীঘেরা আঁকাবাঁকা পথ, আকাশ, মেঘ, নদী আর সাড়া জাগানো টাইটানিক জাহাজের মনোরম ভাস্কর্যে এ পর্যটনকেন্দ্রটিকে দিয়েছে নয়নাভিরাম নৈসর্গিক সৌন্দর্য।



প্রকৃতি যেন তার উদার হাতে সুনিপুণ কারিগরের মতো মুকুটশিখর মিরিঞ্জা পাহাড়কে মোহনীয় করে সাজিয়ে রেখেছে।

ঘন সবুজের আবরণে আবৃত মিরিঞ্জা পর্যটনে অবসরের প্রতিটি ক্ষণ ভরে উঠবে। এ চড়াই-উৎরাইয়ে শান্ত বনতলে ঘুরে বেড়াতে কোনো ক্লান্তি আসে না।

নির্মল আনন্দের রাজ্যে নগরের যান্ত্রিক জীবনের ক্লান্তি দূর করতে গড়ে উঠেছে প্রকৃতির বুকচিরে আকাশ ছোঁয়া চিরসবুজ এক শান্তিধাম। এখানে দেখা যায় পাহাড় ও মেঘের মিতালী। পর্যটকদের অপেক্ষায় পথ চেয়ে আছে  এ পর্যটনকেন্দ্র। সেখানে গেলে যে কারো মনে প্রকৃতিপ্রেম জাগবেই।

সাগরপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৫শ ফুট উঁচু মিরিঞ্জা পর্যটন পাহাড়। এখানে ওঠা মাত্রই দৃষ্টিগোচর হয় লতাগুল্মের দৃশ্যশোভা, পাখ-পাখালির কল-কাকলি। এসব চোখ, কান, মন সব ভরিয়ে তোলে। মাথার উপর টুকরো নীল আকাশ, প্রতিনিয়ত মেঘ ছুঁয়ে যায় মিরিঞ্জা পাহাড়ের গায়। লতাগুল্মের কারুকার্যময় অনেক বড় বড় গাছের উপর আকাশ যেন ছাদ।

এছাড়া জংলি ফুলের মৌ মৌ গন্ধে মাখামাখি, পাহাড়ের নীচে লুকানো ঝরণা, চূড়ায় উপজাতীয় টংঘর, জুম চাষ আর অরণ্যরাণীর ঐতিহ্যের পোশাক। তাদের পায়ের খাড়ুর ঝন ঝন আরও কত কি!

পর্যটনশিল্পকে আকর্ষণীয় করে তুলতে গড়ে তোলা হয়েছে সাড়া জাগানো টাইটানিক জাহাজের ভাস্কর্য। এ পাহাড় চূড়ায় দাঁড়িয়ে সূর্যাস্তের দৃশ্য উপভোগ আর দিগন্ত রেখায় ডুবন্ত রবির রক্তিম আবহ দর্শন।

এখানে রয়েছে পশ্চিমের পাহাড়-টিলার দৃষ্টিনন্দন চিরসবুজ পোশাক। সুউচ্চ পাহাড়ের শিখর থেকে কক্সবাজারের সাগরের উত্তাল তরঙ্গমালার মনোমুগ্ধকর নৃত্য ও সাগরের উপর চলমান জাহাজের সম্মুখযাত্রার দুর্লভ দৃশ্য। এছাড়া এ পাহাড়ে দাঁড়িয়ে পৃথিবীর দীর্ঘতম সৈকত ও বঙ্গোপসাগরে রাত্রিকালীন শোভা লাইট হাউসের আলোর ঝিলিক দেখার সুযোগ। যা ভ্রমণ পিপাসুদের মনকে উদ্বেল করে তুলবে। মেঘমুক্ত আকাশে তারার মেলা, মনে হয় সু-উচ্চ মিরিঞ্জা’র হাতের নাগালে। কখনো বা পাহাড়ের সঙ্গে মেঘের লুকোচুরি।

পার্বত্য লামা-আলীকদম উপজেলার ভূমির অসংখ্য উৎস থেকে জন্ম নেওয়া স্রোতস্বিণী মাতামুহুরী নদীর স্বপ্নীল গতিধারা ভ্রমণ পিপাসুদের মুগ্ধ করার আপেক্ষ রাখে না। পাহাড়ের দক্ষিণ প্রান্তে সেই ১৯১২ সালে আটলান্টিক মহাসাগরে ডুবে যাওয়া প্রমোদ-জাহাজের রেপ্লিকা দেখা যাবে এখানে এলে।   এখানে নির্মাণ করা হয়েছে টাইটানিক জাহাজের ভাস্কর্য। ভাস্কর্যটির পাশে এসে দাঁড়ালে প্রেমিক-প্রেমিকাদের মনে পড়ে যাবে ট্রাইটানিক ট্র্যাজেডি ও তাকে ঘিরে এক অমর প্রেমের কাহিনী।

এ চূড়া থেকে বঙ্গোপসাগরের সমুদ্র সৈকতের ঢেউ, ভাসমান জাহাজ স্বচক্ষে দেখার জন্য বসানো হয়েছে বাইনোকুলার। এটি ভ্রমণ পিয়াসীদের আনন্দকে আরো বাড়িয়ে দেয়। নির্মাণ করা হয়েছে সুরম্য গিরিদ্বার, রেস্ট হাউজ কাম ওয়েটিং শেড বনরত্না।

আপনজনকে নিয়ে নির্জনে বসে গল্প করার স্থান সংযোগ সেতুসহ দুই স্তরের গোলঘর মালঞ্চ। নির্মাণ করা হয়েছে টেলিস্কোপ ঘর এবং প্লাটফরম। জোৎস্নারাতে চাঁদ দেখার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে চন্দ্রমা গোলঘর। শিশুদের বিনোদনের জন্য রয়েছে মিনি শিশুপার্ক। এখানে রয়েছে শিক্ষা সফর ও পিকনিক পার্টি আয়োজনের সু-ব্যবস্থা।

ভ্রমণ পিপাসুদের নিরাপত্তার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে স্পেশাল পুলিশ ফাঁড়ি। এ পর্যটন কমপ্লেক্সকে আর বহুমাত্রিক মাত্রা দিতে ক্যাবল কার, পৃথিবীর দীর্ঘতম ঝুলন্ত সেতু আর প্রায় ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ লেক নির্মাণের পরিকল্পনাও হাতে নেওয়া হয়েছে।

পর্যটনের পূর্ব দিগন্তজোড়া সবুজ পাহাড়ের সারিতে চোখ রাখলে আর পলকও পড়ে না। ছোট ছোট কুঁড়েঘর। প্রায় ১ হাজার ফুট গভীর ঝিরি থেকে উৎসারিত জলের বিরামহীন কলরব। চোখে পড়ে  বনমোরগ, খরগোশ, মায়াবী বুনো হরিণের অবাধ বিচরণ। রযেছে আরো কতো কি!

উপজাতীয়দের টং-ঘরে পাহাড়ি নর-নারীর সরল জীবনযাপন, এ যেন এক অনন্য ভুবন। মিরিঞ্জা চূড়া যেন এক সবুজ মায়া; টিলা-টক্কর, পাহাড়ি ঝরণা, কাঁকর বিছানো পথ--- এখানে কতো যে আমোদ ছড়ানো পথে পথে তা এখানে না এলে বোঝাই যাবে না। এখানকার মানুষের হৃদয়ে রয়েছে দিগন্তের বিস্তার আর আতিথ্যের ঐশ্বর্য।

শীতের এ মৌসুমেও এখানে  গাছে গাছে নতুন পত্র-পল্লব, প্রকৃতি নতুন উদ্যমে সেজেছে। বেড়ানোর প্রবল ইচ্ছা মনের ভেতর ঘুরেফিরে। পর্যটনকেন্দ্রটির কাছেই উপজেলা সদরে আরো থাকছে, মুরং, মার্মা, ত্রিপুরাসহ ১১ ভাষার সম্প্রদায় উপজাতির সংস্কৃতি ও লোকাচারের সান্নিধ্য। শতশত বর্ষ আগের বিশাল বৌদ্ধ মূর্তি। থাকছে সুখী ও দুঃখী নামের দুটি ১ হাজার ফুট উঁচু ২টি পাহাড়ের বুকচিরে বয়ে চলা আঁকাবাঁকা মাতামুহুরী নদী।

এছাড়াও মিরিঞ্জা ঘুরে ১ ঘণ্টার মধ্যে সরাসরি ডুলাহাজরার সাফারি পার্কে বা পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত দেখতে কক্সবাজার চলে যাওয়া যায়।
 
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সামসুন নাহার সুমি বাংলানিউজকে জানান, ভ্রমণ পিপাসুদের কক্সবাজারের পাশাপাশি বাড়তি আনন্দ দেবে মিরিঞ্জা পর্যটন কমপ্লেক্সর অপরূপ সৌন্দর্য। এখানে পর্যটকদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা রয়েছে।

কিভাবে যাবেন: রাজধানী ঢাকার ফকিরাপুল, সায়েদাবাদ, রাজারবাগ ও চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের চিরিঙ্গা/চকরিয়ার টিকিট কাটুন।

এরপর চিরিঙ্গা/চকরিয়া বাস টার্মিনাল থেকে বাস অথবা চাঁদের গাড়িতে করে চকরিয়া-লামা সড়কের মিরিঞ্জা পর্যটনে নামুন।

অথবা কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে চট্টগ্রাম নামুন। চট্টগ্রাম থেকে বাস যোগে চিরিঙ্গা/চকরিয়া বাস টার্মিনালে আসুন। আর যারা ঢাকা থেকে বিমানে যেতে চান তারা ঢাকা থেকে সরাসরি কক্সবাজার নামুন। সেখান থেকে চিরিঙ্গা/চকরিয়া বাস টার্মিনাল থেকে একই ভাবে যাওয়া যায়। এ জন্য সময় লাগবে ২৫ মিনিট।
 
কোথায় থাকবেন: সারাদিন মিরিঞ্জা পর্যটন কমপ্লেক্স ঘুরে ফিরে সন্ধ্যায় লামাবাহী বাস কিংবা চাঁদের গাড়ি করে উপজেলা সদরে যেতে পারবেন। সেখানে উন্নতমানের খাওয়া ও থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।

আবাসিক বোর্ডিং এর মধ্যে রয়েছে হোটেল মিরিঞ্জা, হোটেল প্রিজন ও হোটেল সি হিল। এখানে আপনি রাত্রী যাপন করতে পারেন। আর না হয় কক্সবাজার গিয়ে সূর্য্যডোবার সৌন্দর্য অবলোকন করে নিজের পছন্দসই হোটেলে রাত্রী যাপন করা যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ১২১৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১৪
সম্পাদনা: শামীম হোসেন, নিউজরুম এডিটর/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।