ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

এভিয়াট্যুর

তাসবিরের সেলামি ৪১ লাখ টাকা!

ইশতিয়াক হুসাইন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩৪৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০১৪
তাসবিরের সেলামি ৪১ লাখ টাকা!

ঢাকা: বাংলাদেশ ফ্লাইং একাডেমি থেকে উড়োজাহাজ চালানোর লাইসেন্স নিয়ে বেরিয়েছেন শফিউল ইসলাম (ছদ্মনাম)। এরপর চাকরির জন্য পরীক্ষা দিয়েছেন বেসরকারি এয়ারলাইন্স ইউনাইটেডে।

পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে উল্লসিত শফিউল।  

কিন্তু গণ্ডগোল বাঁধলো নিয়োগপত্রের শর্ত দেখে। চাকরিতে যোগদানের জন্য তাকে নগদ জমা দিতে হবে ১০ লাখ টাকা। এছাড়া বেতন থেকে কাটা হবে আরো ১০ লাখ টাকা। এর বাইরে জমা দিতে হবে ২০ লাখ টাকার চেক। কোর্স ফি বাবদ দিতে হবে এক লাখ টাকা।

শফিউলের বাবা সরকারি চাকুরি থেকে অবসর নিয়েছেন। জীবনের সব সঞ্চয় দিতে ছেলেকে পাইলট (বৈমানিক) হিসেবে তৈরি করেছেন। পাইলট  হিসেবে তৈরি হতে তার এরই মধ্যে প্রায় ৩০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এখন আরো ৪১ লাখ টাকা কোথা থেকে দেবেন—এ নিয়ে চিন্তায় পড়ে যান তার বাবা। ফিকে হয়ে যেতে থাকে মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্ম নেওয়া শফিউলের স্বপ্নও।
 
বাংলানিউজের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে পাইলটদের চাকরির নামে বেসরকারি এয়ারলাইন্স ইউনাইটেডের চাঁদাবাজির এসব তথ্য।

শফিউলের সঙ্গে পরীক্ষা দিয়েছিলেন আরো ২২ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ১৪ জন বাংলাদেশ ফ্লাইং একাডেমি থেকে পাস করা। বাকি ৬ জন বিমানবাহিনী থেকে আসা। বিপুল অংকের টাকা দিয়ে চাকরির শর্তে অনেকেই ভড়কে যান। তবে শেষ পর্যন্ত এক থেকে দুই মাসের মধ্যে দুইজন ছাড়া সবাই ওই শর্ত মেনেই চাকরিতে যোগ দেন। শফিউল পাস করেছেন দুই বছর আগে।

শফিউলের মতো চাকরিতে যোগ দিতে পারলেন না রাসেল আহমেদ (ছদ্মনাম)। তার বাবার পক্ষেও এতো টাকা দেওয়া সম্ভব ছিলো না।

বাংলাদেশ ফ্লাইং একাডেমি থেকে বছরে ৮ জন পাইলট পাস করে বের হয়। তবে অনেকেরই চাকরি জোটে না। ফ্লাইং একাডেমি ছাড়াও আরিরাং, গ্যালাক্সিসহ কয়েক বেসরকারি ফ্লাইং একাডেমি থেকে প্রতি বছর সবমিলিয়ে ২৫ জনের মতো পাইলট বের হচ্ছেন। এর এদের সবাই চাকরি পাচ্ছেন না। আর যারা পাচ্ছেন তাদের মধ্যে কারো কারো পক্ষে বিপুল পরিমাণ টাকা ডোনেশান দিয়ে চাকরি নেওয়া সম্ভবও হচ্ছে না।  

অথচ সাবেক বিমান মন্ত্রী ফারুক খান তার সময়ের পুরোটা জুড়েই বিভিন্ন সভা-সেমিনারে অধিক সংখ্যক পাইলট তৈরির জন্য বারবার তাগাদা দিয়েছেন। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান মাহমুদ হোসেনও সারাবিশ্বে শতশত পাইলটের প্রয়োজন হবে- এ ধরনের কথা প্রায়শ বলেছেন এবং এখনো বলছেন।  

বিমানমন্ত্রী কিংবা বেবিচক চেয়ারম্যানের এই কথা ও কাজের কোনো বাস্তব চিত্র দেখতে পান না শফিউল ইসলাম ও রাসেল আহমেদের মতো পাইলটরা।  

এবিষয়ে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের চেয়ারম্যান তাসবিরুল আহমেদ চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তার প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তিনি ব্যস্ততার কারণে এ বিষয়ে কথা বলতে পারবেন না।
 
এরপর ইউনাইটেডের মুখপাত্র ও অ্যাসিসট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার (এজিএম) কামরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, পাইলট নিয়োগে কারো কাছ থেকে কোনো ধরনের বাড়তি টাকা নেয় না ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ। শুধুমাত্র নিরাপত্তা জামানত হিসেবে কিছু টাকা নেওয়া হয়।    

বাংলাদেশ সময়: ০৪০২ ঘন্টা, ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।