ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

এভিয়াট্যুর

নীলাভ স্বপ্নের দ্বীপে...

মো. রেজাউল করিম মামুন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭০৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০১৪
নীলাভ স্বপ্নের দ্বীপে... ছবি: সংগৃহীত

সেন্টমার্টিন, নীলাভ স্বপ্নের দ্বীপ। বাংলাদেশে এত সুন্দর একটা দ্বীপ আছে, না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন।

চারদিকে শুধু নীল আর নীল। উপরে নীল আকাশ, নিচে তারই প্রতিচ্ছবি জলের শরীরে। অফিসিয়াল ভ্রমণে ৩ জানুয়ারি ২০১৩ গিয়েছিলাম প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে।

এখানে দুই ধরনের পর্যটক আসে। কেউ কেউ সেন্টমার্টিন এসে ঐদিনই ফিরে যায়। আবার কেউ কেউ রাত্রি যাপন করে। যারা দিনে এসে দিনই চলে যান তাদের দেখার সুযোগ খুব কম। কিন্তু যারা রাতে থাকেন তাদের জন্য রয়েছে অপার সুযোগ। আমি ছিলাম সেন্টমার্টিন এসে ঐদিনই ফিরে যাওয়ার পর্যটক।

টেকনাফ হতে সেন্টমার্টিন যাওয়ার পথটি মন্দ নয়। গাংচিল আর ডলফিন দেখতে দেখতে  দুই থেকে আড়াই ঘণ্টার ভ্রমণটি মুহূর্তেই কেটে যাবে। আর দূর সাগরের নীলাভ অথৈ পানির মাঝে যখন সবুজে ঢাকা দ্বীপটি আপনার দৃষ্টিগোচর হবে সারা রাতের দীর্ঘ ভ্রমণের ক্লান্তি দূর হয়ে যাবে নিমিষেই। দ্বীপটি যতই কাছে আসতে থাকে আপনার ব্যকুলতা ততই বাড়তে থাকবে। ইচ্ছে করবে যেন সাগরে ঝাপ দিয়েই চলে যাই সৈকতে।

দ্বীপে পা দিয়েই বুঝতে পারবেন একে নিয়ে মানুষ কেন এতো মাতামাতি করে, কেনইবা একে বলা হয় সুন্দরের লীলাভূমি।

বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের মাঝে অসংখ্য প্রবাল মিলে মিশে একাকার হয়ে তৈরি করেছে দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন । সাগরের সুনীল জলরাশি আর নারকেল গাছের সারি এই দ্বীপকে দিয়েছে অপার সৌন্দর্য। প্রকৃতি দু’হাত মেলে সৌন্দর্য ঢেলে দিয়েছে এখানে। বালুকাময় সৈকত, প্রবালের প্রাচীর আর কেয়া গাছের সারি এই দ্বীপকে দিয়েছে আলাদা এক বৈশিষ্ট্য যা আর কোথাও নেই।

উত্তাল সাগরের নোনা জল যখন আছড়ে পরে কেয়া গাছের ফাঁকে, ঝিরি ঝিরি বাতাসে তৈরি হয় সফেদ ফেনা, সে এক মাতাল করা দৃশ্য। রাতের জোৎস্না এসে যখন লুটোপুটি খায় চিকচিকে বালুর বুকে, নীল আকাশ তখন আরও নীলাভ হয়। সুনসান নীরব রাতে চারদিকে শুধু সাগরের হুংকার আর ঢেউয়ের আছড়ে পড়ার গর্জন। অপূর্ব, অসাধারণ, অদ্ভুত সুন্দর, অসহ্য সুন্দর। হাজারো জোৎস্না রাতের চেয়েও সুন্দর সেন্টমার্টিনের একটি নির্ঘুম চাঁদনী রাত, এখানে সময়ের কাটা এগিয়ে চলে কিন্তু সৌন্দর্য পিপাসার তৃষ্ণা মেটে না।

অসংখ্য নারকেল গাছ, কেয়া গুল্ম আর সবুজ বনানী এই দ্বীপকে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা। পুরো দ্বীপ ঘুরলে মনে হবে নারকেল বাগান এটি। আপনি চাইলে অর্থের বিনিময়ে তৃষ্ণা মেটাতে পারেন নারকেল জলে। এখানে হাজার তিনেক লোকজন বসবাস। সিংহভাগই মুসলমান। খুবই ধার্মিক ও সহজ সরল প্রকৃতির মানুষ এরা। তাই কোনো প্রকার চুরি ছিনতাইয়ের সম্ভাবনা নেই এখানে। গভীর রাত পর্যন্ত আপনি জোৎস্না স্নান করতে পারেন নির্বিঘ্নে।

এটি সত্যিই একটি ভিন্ন প্রকৃতির দ্বীপ। এর একদিকে যেমন প্রবাল প্রাচীর ঘিরে রেখেছে, অন্যদিকে বালুকাময় সৈকত প্রহর গুনছে আপনার অপেক্ষায়। সমুদ্রজলে অনায়াসেই আপনি সেরে নিতে পারেন স্নানের কাজটি। এই সৈকতের লাল কাকড়া আর নুড়ি পাথর আপনাকে নিঃসন্দেহে আকৃষ্ট করবে। অবচেতন মনেই আপনি কুড়িয়ে নেবেন বিভিন্ন রং আর ঢংয়ের নুড়ি পাথর, সঙ্গে ঝিনুক খণ্ড।

এখানে থাকার জন্য বেশ কয়েকটি হোটেল, মোটেল ও কটেজ রয়েছে। ব্লুমেরিন, অবকাশ পর্যটনসহ বেশ কয়েকটি উন্নতমানের হোটেল রয়েছে। কটেজগুলোও চমৎকার। কটেজের বারান্দায় বসে চা খেতে খেতেই উপভোগ করতে পারবেন সাগরের মায়াবীরূপ। এখানকার তাজা রুপচাঁদা মাছের ফ্রাই আপনার জিহ্বায় জল আনবেই। চাইলে জেলেদের কাছ থেকে তাজা মাছ কিনে এনে হোটেলে ভেজে নিতে পারেন। আর একটি বিখ্যাত জিনিস এখানে পাবেন, সেটা হলো শুটকি। নানা প্রজাতির মাছের হরেক রকম শুটকি পাওয়া যায় এখানে। খুব সহজে ও সুলভ মূল্যে এখান থেকে শুটকি সংগ্রহ করতে পারেন।

দ্বীপের শেষ মাথায় সরু লেজের মতো আর একটি অবিচ্ছিন্ন দ্বীপ রয়েছে, যার নাম ছেঁড়াদ্বীপ। জোয়ারের সময় পানি এসে এটিকে মূল দ্বীপ থেকে বিচ্ছিন্ন করে বলেই এর নামকরন করা হয়েছে ছেঁড়াদ্বীপ। ভাটার সময় পানি নেমে গেলে এটি আবার মূল দ্বীপের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে যায়। তখন পায়ে হেঁটেই চলে যাওয়া যায় সেখানে। এখানে কোনো বসতি নেই। এই অংশটি একেবারেই প্রবালময়। এখানে স্বচ্ছ জলের নীচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে হাজার ধরনের প্রবাল। নানা রংয়ের মাছেরা খেলা করে প্রবালের ফাঁকে। সত্যিই সে এক দেখার মতো দৃশ্য।

বাংলাদেশে যতগুলো দৃষ্টিনন্দন পর্যটন এলাকা রয়েছে সেন্টমার্টিন তার মধ্যে অন্যতম। দ্বীপটি দৈর্ঘ্য প্রায় ৮ কিলোমিটার এবং প্রস্থে কোথাও ৭০০ মিটার আবার কোথাও ২০০ মিটার। সেন্টমার্টিন দ্বীপের পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম জুড়ে রয়েছে প্রায় ১০-১৫ কিলোমিটার প্রবাল প্রাচীর।
 
টেকনাফ উপজেলা থেকে ৩৮ কিলোমিটার দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত সেন্টমার্টিন। বাংলাদেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন ১৯৮৩ সালে ইউনিয়ন হিসেবে উন্নীত হয়। ৮ কিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট সেন্টমার্টিনের দৈর্ঘ্য প্রায় চার কিলোমিটার আর প্রস্থ দুই কিলোমিটার। পূর্বে এর নাম ছিলো নারিকেল জিনজিরা। ৭ম-৮ম শতাব্দীতে সুদূর মধ্যপ্রাচ্য থেকে আরব বণিকরা জাহাজযোগে আকিয়াব ও রেঙ্গুন যাতায়াতের সময় এ দ্বীপে সাময়িক বিশ্রাম নিতেন। আরবি শব্দ জাজিরা অর্থ দ্বীপ। এ দ্বীপে প্রচুর নারকেল গাছ রয়েছে। প্রায় ত্রিশ হাজার নারকেল গাছ রয়েছে বলে এলাকাবাসীদের ধারণা। সে থেকেই এটি নারিকেল জিনজিরা হিসেবেই পরিচিত হয়ে আসছিলো।

সেন্টমার্টিন নামে এলাকাটির বহুল প্রচার থাকলেও সরকারি কাগজপত্র, রেকর্ডপত্র, মানচিত্র ও দলিল দস্তাবেজে নারিকেল জিনজিরা লিপিবদ্ধ রয়েছে। এখানে একটি লাইট হাউস রয়েছে যা গভীর সমুদ্রে চলাচলরত জাহাজ, নৌকা ও নাবিকদের দিক নির্দেশনা দিয়ে আসছে। সেন্টমার্টিন নামে জনৈক ধর্মযাজক জাহাজযোগে এ দ্বীপে কিছুদিন অবস্থান করেছিলেন বলে জনশ্রুতি আছে। তার নামানুসারে এলাকাটি নামকরণ বলে মনে করা হয়।

পটুয়াখালী জেলার কুয়াকাটা সি-বিচের ন্যায় সেন্টমার্টিন থেকেও সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত উপভোগ করা যায়।

ভ্রমণ যাদের নেশা, বেড়ানোর সুযোগ এলে যারা উড়িয়ে দেন সব বাধা, কাজের অংশ হিসেবে যারা ভ্রমণ করেন কিংবা যাদের কালেভদ্রে সুযোগ হয় ভ্রমণের তারা সবাই হতে পারেন ট্রাভেলার্স নোটবুক’র লেখক। আপনার ভ্রমণের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারেন বাংলানিউজের পাঠকদের সঙ্গে। আর মাস শেষে ‘ট্রাভেলার্স নোটবুক’র সেরা লেখকের জন্য তো থাকছেই বিশেষ আকর্ষণ..

আর একটা কথা লেখার সঙ্গে ছবি পাঠাতে ভুলবেনই না, সেই সঙ্গে বাতলে দিন সেখানে যাওয়ার পথঘাটের বিবরণও।  

প্রিয় পাঠক, আপনার ভ্রমণ আনন্দ বিশ্বজুড়ে বাঙালির কাছে ছড়িয়ে দিতে আমাদের ই-মেইল করুন- [email protected] এই ঠিকানায়।

বাংলাদেশ সময়: ০৭১৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৭ , ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।