ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

এভিয়াট্যুর

তেলিয়াপাড়া: ইতিহাস-প্রকৃতির মাখামাখি

রুবায়াত সাকী, সিনিয়র নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৪৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০১৪
তেলিয়াপাড়া: ইতিহাস-প্রকৃতির মাখামাখি ছবি: তেলিয়াপাড়া

সকাল ১০টা। গ্রীষ্মকাল বিবেচনায় বেলা অনেক।

কিন্তু গাছ-গাছালির আড়ালে তখনো বেশ সকাল সকাল লাগছিল। অনেকটাই বৃষ্টিস্নাত স্নিগ্ধ সকাল। গত রাতের কাল বৈশাখীর রেশ তখনো কাটেনি। আম গাছগুলোর নিচে তখনো পড়ে আছে ছোট ছোট ডালাপালা, কাঁচা আম। আমি নিমিষেই হারিয়ে যাই শৈশবে। একটা-দুটো করে আম কুড়াচ্ছি। এর মধ্যেই চা বাগানের নীরবতা ভেঙে আমাদের সামনে খুলে গেল ইতিহাসের দুয়ার। জানানো ছিল আগেই, তাই ডাকবাংলোর কর্মচারী ফটক খুলে দিয়ে আমাদের সম্ভাষণ জানালো।

আমি সেই বাংলোর কথা বলছি। যেখানে মুক্তিযুদ্ধের শপথ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই এপ্রিলেই। মুক্তিযুদ্ধের প্রথম রণ পরিকল্পনা সাজানো হয়েছিল বাংলোটিতে বসে। মুক্তিযুদ্ধকে ভাগ করা হয়েছিল ১১টি সেক্টরে।

এটি এখন তেলিয়াপাড়া চা বাগানের ম্যানেজারের বাংলো। হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলায় এর অবস্থান। ঢাকা থেকে  যেতে সিলেট বিভাগের প্রথম চা বাগানও এটি। বলা ভালো, প্রকৃতি দুই হাত উজার করে সিলেট বিভাগকে যে সৌন্দর্য দিয়েছে, ঢাকা থেকে সড়ক পথে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সেই লীলাভূমির প্রথম দর্শনীয় এবং ঐতিহাসিক স্থানও এটি। বৃহত্তর সিলেট ভ্রমণও শুরু করা যেতে পারে এই স্থানটি দর্শন করেই।

ইতিহাস আর প্রকৃতি কেমন করে একে অপরের গর্বে উচ্ছ্বসিত, তেলিয়াপাড়ার সেই বাংলো এলাকাটি না দেখলে বিষয়টি কখনো উপলদ্ধি করতে পারতাম না। শুধু বাংলো, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ, আর চা চাগানেই সীমাবদ্ধ নয় এলাকাটি। এর পাশেই রয়েছে অনন্য সুন্দর প্রাকৃতিক হ্রদ। সিলেটের বনাঞ্চলের ভেতর এ রকম একটি হ্রদ আছে, তা আমার জানাই ছিল না। সেখানে দর্শনীয় স্থান বলতে ওই এলাকাটিই নয়। এর কয়েক কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যেই রয়েছে পার্শ্ববর্তী চুনারুঘাট উপজেলার রঘুনন্দন বনবিটের অন্তর্ভূক্ত সংরক্ষিত সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান, হবিগঞ্জ গ্যাস ফিল্ডের ভেতরে টিলার ওপর অসাধারণ দৃষ্টিনন্দন স্থাপনা ফ্রুটস ভ্যালি, শাহজিবাজার রাবার বাগান, আর এশিয়ার বৃহত্তম চা বাগান সুরমাসহ আরো কতো কি।

ঢাকা থেকে তেলিয়াপাড়া যাওয়ার আগের দিন আমি রাত কাটাই হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলা শ্বশুড় বাড়িতে। তেলিয়াপাড়ায় আমার সফরসঙ্গী বলতে আমার স্বামী, আমার তিন বছরের মেয়ে ঋক্‌থী এবং স্বামীর স্থানীয় এক বন্ধু।

পূর্ব প্রস্তুতি অনুযায়ী, সকাল ৯টায় সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে চুনারুঘাটের শ্বশুড়বাড়ি থেকে রওয়ানা দেই তেলিয়াপাড়ার উদ্দেশে। কয়েক মিনিটের মধ্যেই গ্রামের কাঁচা রাস্তা পেরিয়ে আমরা উঠি ঢাকা-সিলেট পুরাতন মহাসড়কে। চুনারুঘাট উপজেলা সদরে পৌঁছে আমরা কিনে নেই পানি, প্রয়োজনীয় নাস্তা, বাচ্চার জন্য খাবার এবং পানীয়। সেখান থেকে সিএনজি স্টার্ট করার পর কিলোমিটার চারেক যেতেই চোখে পড়ে নয়নাভিরাম চান্দপুর চা বাগান। এর আগে পাহাড়ি মাটিতে তরমুজ ক্ষেতগুলো থেকে সদ্য তোলা তরমুজ কেনার লোভ সামলাই সময়ের অভাবের কথা ভেবে।

আমাদের ছোট্ট গাড়িটি চলছে, চা বাগানের ভেতর দিয়ে। মনে মনে ধন্যবাদ দেই সিএনজি অটোরিকশাকে। বৈশাখের গরমে দুদিক খোলা এমন বাহনের বিকল্প বোধ করি আর কিছু হতেই পারে না।

এর মধ্যেই আমরা সাতছড়ি সংরক্ষিত জাতীয় উদ্যানের পিকনিক স্পটের সামনে চলে এলাম। নামতে চাইলাম। কিন্তু বাধা এলো- ‘এটা পরে। আগে তেলিয়াপাড়া। ইতিহাস দর্শন দিয়েই শুরু হোক’। তাই সাতছড়ির ঘন জঙ্গল, উঁচু উঁচু গাছ-গাছালি, বন বিভাগের রেস্ট হাউজ আমাদের দৃষ্টিসীমার মধ্যে থাকলেও আমরা ছুটলাম ইতিহাসের পানে।

এরই মধ্যে আমরা ঢুকে গেছি সুরমা চা বাগানে। কয়েক কিলোমিটার গাড়ি চললো, কিন্তু সুরমা চা বাগান আর শেষ হয় না। স্থানীয় বন্ধুটি জানালো, এটাই বৃহত্তম চা বাগান। এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতেই আমাদের গাড়ি হঠাৎ করে ঢাকা-সিলেট পুরাতন মহাসড়ক ছেড়ে বামদিকে ইটের খোয়া বিছানো রাস্তায় ঢুকে পড়লো। জানতে পারলাম, আমরা তেলিয়াপাড়া চা বাগানের সেই বাংলোর দিকে যাচ্ছি।

চা বাগানের ফাঁকে ফাঁকে শুকনো পাহাড়ি ছড়ায় ‘কাঁচ বালুর’ চিকমিক করে ওঠা আনন্দ দেখতে দেখতে আমরা হাজির হই সেই বাংলোর সামনে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সামনে।

দুঃখজনকভাবে আমাদের গর্বের, বহু ত্যাগের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সাক্ষী বাংলোটি এখনও মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের অধীনে আসেনি। এখনো সেটি তেলিয়াপাড়া চা বাগানের ম্যানাজারের বাংলো হিসেবেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তাই ভেতরে গেলাম না, সুযোগও ছিল না। কারণ সেখানে ম্যানেজারের পরিবারের সদস্যরা থাকেন। বাংলোর ফটক খোলার আগে কুড়িয়ে নিলাম কয়েকটি ঝড়া আম। জানা গেল, বাংলোর ভেতরে মুক্তিযুদ্ধের অসামান্য ঘটনাটির স্মৃতি সংরক্ষণে কোনো ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়নি। তাই এমএজি ওসমানীর নেতৃত্বে সেই রণ পরিকল্পনার সভা, শপথ অনুষ্ঠান কল্পনায় অনুভব করে নিলাম। বাংলোর সামনেই আমাদের বসার ব্যবস্থা করা হলো, আম গাছের ছায়ায়।

সেখানে কিছুক্ষণ জিরিয়ে নেওয়ার পর আমরা দেখতে যাই বাংলো লাগোয়া মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধটি। বুলেট আকৃতির সৌধটি দেখে বুঝতে অসুবিধা হয় না, কতটা ‘বুলেট-পণ’ ছিল মুক্তিযুদ্ধের সেই শপথ অনুষ্ঠান। সেখানে  কতক্ষণ ইতিহাস চর্চা চললো।

স্মৃতিসৌধের মূল প্রবেশপথের দুই পাশে ফলকে লেখা কবি শামসুর রাহমানের ‘স্বাধীনতা তুমি কবিতার পঙক্তিমালা। দক্ষিণ দিকে লাগানো ফলক জানালো এ স্থানটি শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে নির্মিত। হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার তেলিয়াপাড়া চা বাগানের এই বাংলোটি ছিল ১৯৭১ এ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠন মুক্তিবাহিনীর আনুষ্ঠানিক প্রথম সদর দপ্তর।
 
স্মৃতি ফলকের ৩৩ জনের নামের তালিকায় রয়েছে রাজনৈতিক নেতা সাবেক সেনা ও সরকারি কর্মকর্তা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের নাম। এর মধ্যে রয়েছে প্রথম সেনা প্রধান কর্নেল আতাউল গণি ওসমানী, হবিগঞ্জেরই কৃতি সন্তান মুক্তিযুদ্ধে সহ-সেনা প্রধান কর্নেল এমএ রব, মেজর কেএম সফিউল্লাহ, মেজর খালেদ মোশাররফ, মেজর জিয়াউর রহমান, মেজর আবু ওসমান চৌধুরী, হবিগঞ্জের আরেক কৃতি সন্তান মেজর সি আর দত্তের নাম।

বেদির পূর্ব পাশে লাগানো ফলকে লেখা রয়েছে ‘শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মরণে নির্মিত এ স্মৃতিসৌধটি উদ্বোধন করেন মেজর জেনারেল এম শফিউল্লাহ বীর উত্তম, সেনা প্রধান ৩ নম্বর সেক্টর কমান্ডার, সন ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দ। ম‍ূলত তেলিয়াপাড়া চা বাগানের ডাক বাংলোতে মুক্তিয‍ুদ্ধের প্রথম বৈঠক এ স্থানটিকে বিশেষ ঐতিহাসিক গুরুত্ব এনে দিয়েছে।

সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
দিনটি ঐতিহাসিক ৪ এপ্রিল। ১৯৭১ সালের এই দিনে বাংলোটিতে দেশকে স্বাধীন করার জন্য ঐতিহাসিক এক শপথ অনুষ্ঠিত হয়। এ শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ২৭ জন সেনা কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। এ বৈঠকেই সমগ্র রণাঙ্গনকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করেন মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল আতাউল গণি ওসমানী। বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন মেজর সি আর দত্ত, মেজর জিয়াউর রহমান, কর্নেল এম এ রব, ক্যাপ্টেন নাসিম, আব্দুল মতিন, মেজর খালেদ মোশাররফ, কমান্ডেন্ট মানিক চৌধুরী, ভারতের ব্রিগেডিয়ার শুভ্রমানিয়ম, মৌলানা আসাদ আলী, লে. সৈয়দ ইব্রাহীম, মেজর কে এম শফিউল্লাহ প্রমুখ।

তেলিয়াপাড়া চা বাগান ম্যানেজারের বাংলোটিকে ৩ নম্বর সেক্টরের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বৈঠক শেষে এম.এ.জি ওসমানী নিজের পিস্তলের ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণের শপথ করেন। ওসমানী ও রবের নেতৃত্বে স্বাধীনতা যুদ্ধের নকশা প্রণয়ন এবং যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার শপথ অনুষ্ঠিত হয়। শপথবাক্য পাঠ করান এম.এ.জি ওসমানী।

মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ৩ নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর কেএম শফিউল্লাহ্ তাঁর হেড কোয়ার্টার স্থাপন করেন এই তেলিয়াপাড়া চা বাগানে। সড়ক ও রেলপথে বৃহত্তর সিলেটে প্রবেশের ক্ষেত্রে হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার তেলিয়াপাড়ার গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। এখান থেকে মুক্তি বাহিনী বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করা ছাড়াও তেলিয়াপাড়া চা বাগানে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি বড় প্রশিক্ষণ ক্যাম্প গড়ে ওঠে।

মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এমএজি ওসমানীসহ কয়েকটি সেক্টরের কমান্ডারেরা কার্যোপলক্ষে বিভিন্ন সময়ে তেলিয়াপাড়া সফর করেন। ম্যানেজার বাংলোসহ পার্শ্ববর্তী এলাকা ছিল মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও সেনা নায়কদের পদচারণায় ম‍ুখরিত। ১৯৭১ সালের ২১ জুনের পরে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণের কারণে তেলিয়াপাড়া চা বাগানে স্থাপিত সেক্টর হেড কোয়ার্টার তুলে নেওয়া হয়।

চোখ জুড়িয়ে যায়:

ইতিহাস চর্চা শেষ করে আমরা স্মৃতিসোধ প্রাঙ্গণ পেরিয়ে কাছেই অবস্থিত পাহাড়ি হ্রদটি দেখতে যাই। হ্রদটির কোনো সংস্কার নেই। এ নিয়ে পর্যটন করপোরেশন ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দৃশ্যমান কোনো ভূমিকা না থাকলেও এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে আমার মুগ্ধতা আর কাটছিল না। চার দিকে চা বাগান। মাঝে হ্রদ। আবার হ্রদর মাঝখানে রয়েছে একটি দ্বীপ, মানে একটি টিলা। এর মধ্যেও দৃস্টিনন্দন ঢেউ খেলানো চা বাগান।

জনমানবহীন হ্রদের পাড় দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে আমরা এক পর্যায়ে হাজির হলাম এক চা শ্রমিকের বাড়িতে। জানতে পারলাম এই পরিবারটি জাতে গোয়ালা। এক মধ্যবয়স্ক নারী চা শ্রমিককে বাড়ির সামনে পেয়ে জিজ্ঞাস করলাম, ‘এটা আপনার বাড়ি, আপনারা জাতে গোয়ালা?’ বললেন, ‘না, এটা আমার মেয়ের বাড়ি। আর আমাদের জাত গোয়ালা নয়। আমরা পানতাতী। ’

কাছে দাঁড়ানো তার পাঁচ বছরের নাতনিটি বলে উঠলো, ‘না, আমরা খালি গোয়ালা নয়, আমরা ‘কৃষ্ণ গোয়ালা’। তখন তিনিও মাথা নেড়ে বললেন, ‘হ ওরা কৃষ্ণ গোয়ালা। ’ আমি বললাম, ‘আপনারা পানতাতী, আর আপনার মেয়ের জামাই গোয়ালা। তাহলে এই দুই জাতের বিয়ে হয়?’ ওনি বললেন, ‘বিয়ে হয় না। কিন্তু ওরা নিজেরা পছন্দ করে বিয়ে করেছে। কি করবো। মেনে নিছি। ’

বৃদ্ধা আর তার নাতনির কথা বুঝতে আমার অসুবিধা হয় না, এত বঞ্চনার মধ্যেও চা শ্রমিকরা জাতপাতের চর্চা ভালোভাবেই করে চলেছে। পরে আবারো আমরা লেকের পাড়ে এলাম। তাতে একটি মাত্র নৌকা। আমার মেয়ে ‌ঋক্‌থী তার বাবার কাছে আবদার করলো, ‘বাবা, আমি নৌকায় উঠবো। কিন্তু খালি নৌকাটিতে কেউ না থাকায় লেকে ঘোরার সাধ পুরোটা মেটাতে পারলাম না। লেকের পাড়ে একটি গাছে ছায়ায় বসে আমরা সঙ্গে আনা খাবার-পানীয় দিয়ে হালকা নাস্তা সেড়ে নিলাম। পরে সেখান থেকে পরবর্তী গন্তব্যের দিকে ছুটলো আমাদের গাড়ি।

যেভাবে যাবেন :
ঢাকা থেকে সড়ক পথে সিলেট বা হবিগঞ্জগামী যে কোনো দূর পাল্লার গাড়িতে করে যেতে পারেন। যেতে পারেন ট্রেনেও। বাসে গেলে আপনি নেমে যাবেন ঢাকা সিলেট মহাসড়কের মাধবপুর উপজেলার জগদীসপুর মোড়ে। সেখান থেকে একটি সিএনজি ভাড়া করে নিলে ভাল। জগদীসপুর থেকে ঢাকা সিলেট পুরাতন মহাসড়ক ধরে আপনি তেলিয়াপাড়ার বাজার অতিক্রম করার পরই পাবেন সুরমা চা বাগান। এর কিছুক্ষণ পর ডান দিকে মোড় নিয়ে ‘মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধ’ লেখা সাইনবোর্ডটি দেখে ঢুকে পড়বেন।

প্রায় দেড় কিলোমিটার যাওয়ার পর আপনি পৌঁছে যাবেন সেই ডাক বাংলোটিতে। এই জায়গাটি ভ্রমণ শেষ করে আপনি সুরমা চা বাগানসহ অন্যান্য চা বাগান, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান, সাতছড়ি প্রত্নতাত্ত্বিক নির্দশনও দেখে আসতে পারবেন। ট্রেনে গেলে শায়েস্তাগঞ্জ রেল স্টেশনে নেমে একটি সিএনজি অটোরিকশা চুনারুঘাট সদর হয়ে সরাসরি তেলিয়াপাড়ায় যেতে পারবেন। না হলে বাসে অথবা মেক্সি সার্ভিসে প্রথমে চুনারুঘাট এবং পরে তেলিয়াপড়ায় যেতে পারবেন।

রাতযাপনের সুবিধা: তেলিয়াপাড়া-সাতছড়ির উদ্দেশে গেলে আপনার থাকার ব্যবস্থাও আছে। বন বিভাগের সঙ্গে আপনার জানাশোনা থাকলে আপনি সাতছড়ি বন বিভাগের রেস্ট হাউজে রাতযাপন করতে পারেন। না হলে সমস্যা নেই। মাধবপুর উপজেলায় ঢাকা সিলেট মহাসড়কের পাশে হাইওয়ে হোটেল ‘হাইওয়ে ইন’ অথবা ‘আল আমিন’ হোটেলে রাতযাপন করতে পারবেন। এমন উদ্দেশ্য থাকলে আপনি সরাসরি হাইওয়ে ইন অথবা আল আমিনে উঠে ফ্রেশ হয়ে পরে যেতে পারবেন তেলিয়াপাড়া ও সাতছড়িতে। খুব ভালো ব্যবস্থা না থাকলেও চুনারুঘাট বা মাধবপুর উপজেলা সদরেও আপনি আবাসিক হোটেলে থাকতে পারবেন। থাকা-খাওয়ার খরচ থাকবে আপনার সাধ্যের মধ্যেই। তবে সবচেয়ে ভালো তথ্যটি হলো, ঢাকা থেকে যেতে যেহেতু তিন থেকে চার ঘণ্টা লাগবে, সে ক্ষেত্রে আপনি দিনে দিনেই একটি ট্রিপ দিতে পারেন তেলিয়াপাড়ার উদ্দেশে।

বাংলাদেশ সময়:  ০১৪৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৭, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।