ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

এভিয়াট্যুর

পুঁতিগন্ধময় তেলাপোকার সার্ভিস ইউনাইটেডে!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৫৮ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৪
পুঁতিগন্ধময় তেলাপোকার সার্ভিস ইউনাইটেডে!

ঢাকা: মাহবুবুর রহমানের অভিজ্ঞতাই শুনুন। গত ডিসেম্বরে কক্সবাজার থেকে ঢাকার পথে ইউনাইটেডের নানা কষ্ট সয়ে জার্নি করছিলেন।

তবে কষ্ট তার ভয় আর ঘৃণায় পরিণত হলো যখন মাথার ওপর দেখতে পেলেন বড় আকারের একটি তেলাপোকা। ইউনাইটেডকে ডোবাতে নিশ্চয়ই নয়, স্রেফ খেয়ালের বশে একটি ছবিও তিনি তুলে ফেলেছিলেন নিজের স্মার্ট ফোনে।

শোভন আকন্দ ইউনাইটেডকে ‘ফালতু মার্কা সার্ভিস’ বলতেও ছাড়েন নি। শোভন আকন্দ’র অভিজ্ঞতাটি অনেকটা আনকোড়া। গত ২৫ মার্চ ঢাকা থেকে যাচ্ছিলেন চট্টগ্রাম এই ‘ফালতু মার্কা’, তার ভাষায়, সার্ভিসে। ফ্লাইটে ওঠার পর জানেন সেটির এসি নষ্ট। ৪০ মিনিটের যাত্রা। যাত্রীরা ঘেমে জবজবে। গরমে তেতে ওঠা মেজাজে ইউনাইটেডকে গালি ঝাড়লেন যে যার স্টাইলে।

বিমানবালাকে শোভন জিজ্ঞাসা করলেন, এটাকে কি সার্ভিস বলে? তিনি উত্তর দিলেন এটা মেরামতের কাজ চলছে! কতদিনে শেষ হবে জানতে চাইলে এর কোনো উত্তরই দিতে পারেন নি। অবশেষে উপসংহার টানলেন শোভন: ঢাকার রাস্তায় ৬ নাম্বার বাস এর চেয়ে শত গুণে ভালো।

তিনি বলেন, সেইদিনই ভেবেছি আর কোনোদিন এই গরুর গাড়িতে উঠব না। এটাকে গরুর গাড়ি বললে গরুর গাড়িকে অপমান করা হয়...... যাত্রীসেবার নাম করে ইউনাইটেড করছে যাত্রী হয়রানি আর হাতিয়ে নিচ্ছে টাকা।

1bg

শোভনের সঙ্গে অভিজ্ঞতার মিল রয়েছে সোহেল আজিজ নামে অপর এক যাত্রীর। ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের অভিজ্ঞতাকে তার জীবনের সবচেয়ে খারাপ বিমানভ্রমণ-অভিজ্ঞতা বলেছেন সোহেল আজিজ। অফিসের কাজে তাকে প্রায়ই চট্টগ্রামের পথে উড়তে হয়। এরই মধ্যে বাধ্য হয়ে বার কয়েক ইউনাইটেডেও উড়েছেন। অধিকাংশ সময়ই দেখেছেন এয়ারক্র্যাফটের এসি কাজ করছে না। কেবিন ক্রুদের কাছে জানতে চেয়েও এর কোনো সদুত্তর তিনি পান নি। আর সোহেল বলেছেন কেবল তিনিই নন, তার আরও বন্ধু ও সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছেন তাদেরও একই অভিজ্ঞতা।

এক্ষেত্রে সোহেল আজিজ অবশ্য একটি বাড়তি তথ্য শেয়ার করেছেন, তিনি বলেছেন, টেকঅফের পরপরই এসি বন্ধ করে দেয় ইউনাইটেড। আর তা নাকি জ্বালানি খরচ বাঁচাতে। এটা কতটা সত্য তাই ইউনাইটেড কর্তৃপক্ষই জানে। তবে সোহেলের মতে এমন ফালতু ঘটনা পৃথিবীর আর কোথাও ঘটে বলে তার জানা নেই। তার ভাষায় বেশি টাকা খরচ করে এমন কষ্টকর ভ্রমণ করার অভিজ্ঞতা ইউনাইটেডেই হচ্ছে।  

মুহাম্মদ বেলাল উদ্দীন লিখেছেন কুনিরবিল, আনোয়ারা, চট্রগ্রাম থেকে। তার চিঠিটি হুবহু তুলে ধরা হলো পাঠকের জন্য। ভুক্তভোগী অগণিত গ্রাহকদের হয়রানির বিষয়ে বাংলানিউজের সাহসী অবস্থান সত্যিই প্রশংসনীয়। বাংলানিউজকে আন্তরিক মোবারকবাদ। আমি আমার ব্যক্তিগত হয়রানির চিত্র তুলে ধরলাম।

নিতান্তই গরিব ঘরের সন্তান হিসেবে শৈশব থেকে স্বপ্ন ছিল বিমানে চড়ার। আমি কখনো পরিবারের সাথে এই স্বপ্নটি শেয়ার করিনি সংগত কারণে। বেসরকারি বহুজাতিক কোম্পানিতে চাকরির সুবাদে সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছিল গত বছরের নভেম্বরে অফিস বসের সাথে ঢাকা গমন করে। বিমানে ওঠার আগমুহূর্ত পর্যন্ত ছিলাম স্বপ্নপূরণে বিভোর উদগ্রীব এক রাজা। কিন্তু বিমানে ওঠার পর থেকে অফিস এবং অদ্যাবধি দিনটি আমার জন্যে আক্ষেপের, ক্ষোভের। যদিও সহযাত্রী বস আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করলেন বাস্তবতা, কারণ বস যেহেতু মাসে কয়েকবার আসা যাওয়া করেন, উনি এটা স্বাভাবিকভাবে মেনে নিচ্ছেন বা নেওয়ার অভিনয় করছেন। আমারটাসহ অনেকগুলো সিটের উপর পড়েছিল বিভিন্ন কোম্পানীর লিফলেট, সিগারেটের অংশবিশেষ, চুইংগামের খোসা আরো কত কি? এগুলো পরিস্কার করার জন্য এক কেবিন ক্রুর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি এমন ভাব দেথালেন যেন আমিই সেই ব্যক্তি যে তার প্রমোশন আটকে রেখেছে। ইচ্ছা থাকা সত্বেও বিমানের ভিতরে ছবি তোলার সুযোগ হয়নি। প্রায় ৫০ মিনিটের এই ভ্রমণটি ছিল অপরিচ্ছন্নতা ও  দুর্ব্যবহারের যন্ত্রণার। গরুর গাড়িতে চড়ার সুযোগ হয়নি কখনো কিন্তু আমার কাছে ভ্রমণটি অনেকটা গরুরগাড়ির ভ্রমণের মতই মনে হয়েছিল। সিটি বাসের সমতুল্য আচরণও পাইনি আমি।

শওকত মোস্তফা বলেন, এমন একটি ফালতু এয়ারওয়েজ কিভাবে আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট চালায় তা জানা নেই।
আর সিভিল এভিয়েশন থেকে এরা কিভাবে অনুমতি পেয়েছে তা জানতে চান শোভন। ইউনাইটেডে এক বোতল পানি বাড়তি চেয়েও পাওয়া যায় না, এমনই সার্ভিসের অবস্থা, বলেন শওকত।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৫ ঘণ্টা, মে ২৫, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।