ঢাকা, বুধবার, ২৪ বৈশাখ ১৪৩২, ০৭ মে ২০২৫, ০৯ জিলকদ ১৪৪৬

এভিয়াট্যুর

‘লালপানি’তে পর্যটনের অতিথি সেবা

ইশতিয়াক হুসাইন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮:১০, আগস্ট ৩, ২০১৪
‘লালপানি’তে পর্যটনের অতিথি সেবা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: ২২ জুন ভোর সাড়ে ৫টা। গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে দেশের প্রধান স্থল বন্দর বেনাপোলে।

বৃষ্টির মধ্যেই গাড়ি থেকে নামলাম। গন্তব্যস্থল পর্যটনের মোটেল। রিকশা, ভ্যান কিছুই নেই। এগোতে থাকলাম পায়ে হেঁটেই।

কাকভেজা হয়েই পর্যটন মোটেলের গেটে দাঁড়িয়ে আছি। চিৎকার করে ডাকলাম। ভেতর থেকে কারো গেট খোলার নাম নেই। এভাবে বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা শেষে যেতে পারলাম ভেতরে। অভ্যর্থনা কক্ষে ঢুকে রুম চাইলাম। সেখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এক ব্যক্তি ছাড়া আর কেউই নেই। তিনি বললেন, ঢাকা থেকে বুকিং দিয়ে না এলে রুম পাওয়া যায় না।

অনিশ্চয়তার মধ্যেই বসে রইলাম। এভাবে আধাঘণ্ট কেটে গেল। কিন্তু পর্যটন করপোরেশনের নিরাপত্তা কর্মীর মন গলছে না। একটু পর শশ্ম্রুমণ্ডিত ওই নিরাপত্তা কর্মী বললেন, বসেন, দেখি কিছু করা যায় কিনা। এভাবে ঘণ্টা দেড়েক বসার পর নিচতলায় একটি কক্ষের ব্যবস্থা করলেন তিনি।

রুমে ঢুকে হোঁচট খেলাম। নোংরা পরিবেশ। দেওয়াল থেকে চুন-সিমেন্ট খসে পড়ছে। ওয়াশরুমের অবস্থা আরো বেহাল। উপায়ান্তর না দেখে এখানেই থাকার সিদ্ধান্ত নিলাম। ওয়াশরুমে ঢুকে হাত-মুখ ধুতে গিয়ে আঁতকে উঠলাম। বেসিনের ট্যাপ ছাড়তেই লাল পানি বের হতে লাগল। বেল টিপলাম। কোনো রুম অ্যাটেনডেন্ট এলেন না। বসে রইলাম।

undefined


এদিকে ক্ষুধায় পেট চো চো করছে। তাই আধাঘণ্টা পর গিয়ে আবার ট্যাপ ছাড়লাম। আবারও সেই লালপানি। শেষ পর্যন্ত ওই পানি দিয়েই হাত ও মুখ ধুয়ে নিলাম। অভ্যর্থনা কক্ষে গিয়ে ওই নিরাপত্তা কর্মীকে পেলাম।

তিনি জানালেন, পানির ট্যাংকি পরিষ্কার করা হয়েছে। তাই একটু লাল পানি আসছে। একটু পর ঠিক হয়ে যাবে।  

মোটেলের ক্যাফেতে সকালের নাস্তা করতে ঢুকলাম। খাবারের জন্য অপেক্ষা করছি। আশপাশে চোখ পড়লো। পুরো ক্যাফের দেওয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ছে। উঁকি দিয়ে কিচেনের দিকে চোখ রেখে অপরিষ্কার পরিবেশের চিত্র দেখলাম। এর ভেতরেই খাবার এলো। খাবার খেয়ে বিল দিতে গিয়ে মনে হলো দামটা অনেক বেশি।

যা হোক। খাবার পর্ব সেরে গোসলের প্রস্তুতি নিয়ে ফের ওয়াশরুমে ঢুকলাম। যথারীতি ট্যাপ ছেড়ে সেই অপরিষ্কার পানি পেলাম। পানির লালচে ভাবটি রয়েই গিয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানলাম, দোতলা এই মোটেলে রুম সংখ্যা মোট ২০টি। বেনাপোল স্থলবন্দরে ভালো মানের কোনো হোটেল নেই। তাই পর্যটনের এই অব্যবস্থাপনাময় মোটেলই অতিথিদের ভরসা। তাই যাচ্ছেতাইভাবে সবকিছু পরিচালনা করছে কর্তৃপক্ষ। কারণ সেবার মান ভালো হোক বা না হোক অতিথি এখানে আসবেই।

দিনের কাজ শেষে রাতে মোটেলে ফিরে খাবারের জন্য গেলাম। খাবার শেষে বিল দিয়ে গিয়ে আবারও হলাম অবাক। বিলের মাত্রা এবারও বেশি। জানতে চাইলে ক্যাফের দায়িত্বে থাকা জহির জানালেন, বেনাপোলের মানুষের টাকার অভাব নেই। তাই সবকিছুর দাম একটু বেশি।  

ঘুমাতে গিয়ে টের পেলাম মশার উপদ্রব। বিছানা বালিশ লেপটে এতটাই নিচু হয়ে গিয়েছে যে ঘুমানোর উপায় নেই। অতিরিক্ত বালিশ চেয়েও মিললো না। রুমের দরজা আটকাতে গিয়ে দেখি তা লাগছে না। বহু কষ্টে খিড়কি বন্ধ করতে পারলাম, তবে তা ছিল নড়বড়ে।

এই কয়েকদিনে মোটেলে থেকে টের পেলাম এখানকার ম্যানেজার রফিকুল ইসলাম কোনো রকমে এটি চালাতে পারলেই চাকরি রক্ষা হবে- এমন মনোবৃত্তি নিয়ে কাজ করছেন। পর্যটন করপোরেশনের ঢাকা অফিস সূত্রে জানা যায়, রফিকুল ইসলামের পানিশমেন্ট পোস্টিং। তাই অতিথি সেবা ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে তার কোনো মাথাব্যাথা নেই।  

মোটেলের ম্যানেজার রফিকুল ইসলামের কাছে এসব অব্যবস্থাপনার বিষয়ে জানতে চাইলে নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করে বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজর না থাকলে সেবার মান বাড়ানো সম্ভব নয়।

এক সময় দেশের পর্যটন সেবার আস্থাস্থল ছিল জাতীয় পর্যটন করপোরেশন (বিপিসি)। স্বাধীনতার পরপর সারাদেশে পর্যটন করপোরেশনের সেবার বিকল্প কিছুই ছিল না। ধীরে ধীরে বেসরকারি খাতে আগমনে পর্যটনের একচ্ছত্র ব্যবসায় ভাটা লাগে। বেনাপোলের মোটেলে এসে মনে হচ্ছে পর্যটনের সেবার মানে ভাটা নয়, মড়ক লেগেছে।     

বাংলাদেশ সময়: ০৮০৯ ঘণ্টা, আগস্ট ০৩, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।