ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিএনপি

দুই জোট নিয়ে ভোট: আসন ভাগাভাগির সংকটে বিএনপি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪১ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১৮
দুই জোট নিয়ে ভোট: আসন ভাগাভাগির সংকটে বিএনপি

ঢাকা: বিএনপির নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোটকে ২০১২ সালে সম্প্রসারিত করে ১৮ দলীয় জোট গঠন করেন দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। পরে এতে আরও দু’টি দল যোগ দেওয়ায় সেটি ২০ দলীয় জোটে পরিণত হয়। কয়েকদিন আগে আরও তিনটি দল যোগ দিয়েছে এই জোটে। সর্বশেষ জোটটিতে দলের সংখ্যা ২৩। অপরদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ড. কামাল হোসেনের গণফোরাম, আসম আব্দুর রবের জেএসডি, মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্য, বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগসহ কয়েকটি দল নিয়ে নিয়ে ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’ গঠন করে বিএনপি।

২৩ দলীয় জোটে যেমন সবচেয়ে বড় শরিক দল বিএনপি, তেমনি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টেও বড় শক্তি তারা। কিন্তু, এই দলের দুশ্চিন্তার বিষয় হলো, তাদের একই গলায় দুই মালা নিয়ে পথ চলতে হচ্ছে।

একদিকে দীর্ঘদিনের মিত্র ২০ দল। অন্যদিকে নতুন জোট ঐক্যফ্রন্ট। দু’টি জোটকে নিয়েই ‘আলাদা’ ঘোষণায় ‘একইসঙ্গে’ নির্বাচনে যাওয়ার কথা দিয়ে বিএনপি এখন পড়েছে আসন ভাগাভাগির সংকটে। কারণ ভোটের মাঠে যতোটা না ক্ষমতাবান দুই জোটের শরিক দলগুলো, তার চেয়ে বেশি তারা ক্ষমতা দেখায় আসন ভাগাভাগির ক্ষেত্রে।  

রাজনীতি বিশ্লেকরা মনে করেন, ধানের শীষের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করলে জামানাত ঠেকানো কঠিন হতো ওই দলগুলোর অনেক নেতাকেই। কিন্তু তাতে কী, জোট করেছেন ভোট করতে হবে- এ ধারণা নিয়েই দরকষাকষি শুরু করেছেন তারা। যদিও গণফোরাম, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, নাগরিক ঐক্যসহ জোটের সব দলই ধানের শীষ প্রতীকে ভোট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন বাকি আসন ভাগাভাগি। কার ভাগ্যে কয় আসনে লড়াইয়ের সুযোগ জুটবে, তা নিয়ে চলছে দেন-দরবার। তবে জটিলতাটা তৈরি হচ্ছে- জোটবদ্ধ হওয়ায় অনেক হেভিওয়েট রাজনীতিকই এখন একই আসনে লড়তে চাইছেন বিধায়।

দুই জোটেরই নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঢাকা-৩ আসনে প্রার্থী হওয়ার জন্য দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছেন বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। একই আসনে নির্বাচন করতে আগ্রহী গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য এবং আওয়ামী লীগের সাবেক ডাকসাইটে নেতা মোস্তফা মহসিন মন্টু। আসনটি কাকে রেখে কাকে দেবে এ নিয়ে চিন্তিত বিএনপির হাইকমান্ড। ঢাকা-২ আসনটিতেও নির্বাচন করতে চান মোস্তফা মহসিন মন্টু। ওই আসনে বিএনপির প্রার্থী হতে চান সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান।  

এ বিষয়ে জানতে চাইলে গণফোরাম নেতা রফিকুল ইসলাম পথিক বাংলানিউজকে বলেন, মন্টু ভাই ঢাকা-২ আসন থেকে নির্বাচন করবেন বলে জানি।  

চট্টগ্রাম-১৪ আসন নিয়ে চলছে ত্রিমুখী সংকট। এই আসনটিতে লড়তে চান ২০ দলীয় জোটের নতুন প্রধান সমন্বয়ক এলডিপির সভাপতি ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ। এ আসনে জামায়াতের রয়েছেন দু’জন প্রার্থী, সাবেক এমপি আনম শামসুল ইসলাম ও শাহজাহান চৌধুরী। একই আসনে লড়তে চাইছেন গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী।

নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য মাহমুদুর রহমান মান্না চাইছেন ঢাকা-১২ আসনটি। এই আসনে বিএনপিরও দু’জন প্রার্থী রয়েছেন, একজন যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নীরব এবং আরেকজন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক মো. শাহাব উদ্দিন। এদিকে মান্নার নিজ আসন বগুড়া-২ নিয়েও রয়েছে দ্বন্দ্ব। ওই আসনটি নিয়ে আগে থেকেই বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে। সেখানে বিএনপির সাবেক এমপি হাফিজুর রহমান এবারও মনোনয়ন চান। অপরদিকে জামায়াতও ছাড়তে নারাজ। আসনটি শেষ পর্যন্ত কে পাবে তা বোঝা দিনে দিনে দুঃসাধ্যই হয়ে পড়ছে।

লক্ষীপুর-৪ জেএসডি সভাপতি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য আসম আব্দুর রবের আসন। এ আসনে ১৯৯৬ সালে আসম আব্দুর রব বিজয়ী হলেও ১৯৯১, ২০০১ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী বিজয়ী হন। এ আসনে রবের পাশাপাশি বিএনপির সাবেক হুইপ আশরাফ উদ্দিন নিজান ও জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শফিউল বারী বাবুও মনোনয়ন চান।

কুমিল্লা-৪ আসনে জেএসডির নেতা ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য আব্দুল মালেক রতন প্রার্থী হতে চান। এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন চান সাবেক এমপি দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য মনজুরুল আহসান মুন্সী। ইতোমধ্যে তিনি নিজে, তার স্ত্রী ও ছেলে একই আসন থেকে দলের মনোনয়ন পাওয়ার জন্য ফরম সংগ্রহ করেছেন।

নাগরিক ঐক্যের উপদেষ্টা এস এম আকরাম আওয়ামী লীগের হয়ে ১৯৯৬ সালে নারায়ণগঞ্জ–৫ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের নির্বাচনে তিনি হেরেছেন বিএনপির আবুল কালামের কাছে। আওয়ামী লীগে থাকতে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে আকরাম যোগ দেন নাগরিক ঐক্যে। ঐক্যফ্রন্টের হয়ে এ আসনে এবার প্রার্থী হতে চান তিনি। কিন্তু বিএনপির ছয়বারের প্রার্থী সাবেক এমপি আবুল কালামও চান দলের মনোনয়ন।

মৌলভীবাজার-২ আসনে ২০ দলীয় জোটের দু’জন মনোনয়নপ্রত্যাশী হলেন জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) প্রেসিডিয়াম সদস্য নওয়াব আলী আব্বাস খান ও জেলা বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট আবেদ রাজা। আসনটিতে হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর।

চট্টগ্রাম-৫ আসনে বিএনপির তিনজন হেভিওয়েট প্রার্থী থাকলেও আসনটি জোটের শরিক মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমকে ছেড়ে দিতে হবে। এ আসনে বিএনপির প্রার্থী যারা আছেন তারা হলেন- দলের ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, দলের সাবেক সহ-কোষাধ্যক্ষ ও বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি এএস এম ফজলুল হক, প্রয়াত হুইপ ওয়াহিদুল আলমের মেয়ে ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মীর হেলাল।

পাবনা-১ আসনটি ছিল জামায়াতের আমির ও যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসিতে ঝোলা মতিউর রহমান নিজামীর। এখন এই আসনে জামায়াত দাঁড় করাতে চাইছে স্থানীয় নেতা ডা. বাসেত খানকে। অপরদিকে স্থানীয় জামায়াত নেতারা ইতোমধ্যে নিজামীর ছেলে ব্যারিস্টার নাজিব মোমেনের নামেও মনোনয়ন তুলেছেন। যদিও নাজিব মোমেন দেশে নেই। তবু জামায়াতের একটা অংশ চায় নাজিবকে মাঠে নামাতে। এই আসনে জোটের শরিক কল্যাণ পার্টির মহাসচিব এমএম আমিনুর রহমানও মনোনয়ন চান। আবার বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন তুলেছেন সাবেক মন্ত্রী মেজর (অব.) মঞ্জুর কাদের।

পিরোজপুর-২ আসনে মনোনয়ন চান ২০ দলের শরিক লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান। এ আসনে জামায়াতের মনোনয়নপ্রত্যাশী যুদ্ধাপরাধের দায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে শামীম সাঈদী। আসনটিতে বিএনপি থেকে প্রার্থী হতে চান সাবেক এমপি নুরুল ইসলাম মঞ্জুরের ছেলে আহমেদ সোহেল মঞ্জুর সুমন ও কাউখালী উপজেলা পরিষদের দু’বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান এস এম আহসান কবীর।

জানতে চাইলে কল্যাণ পার্টির মহাসচিব আমিনুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, আমরা ১২ জনের তালিকা দিয়েছি। জোট যে সিদ্ধান্ত নেবে তার পক্ষে কাজ করবো।

লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. ইরান বলেন, গত দশ বছর মামলা, হামলা, নির্যাতনের মধ্যেই জোট ছাড়ার অনেক প্রলোভন পেয়েছি। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগেও অনেকে ডেকেছে। কিন্তু জোট ছাড়িনি। আমি জোটের কাছে দু’টি আসন চেয়েছি। আশা করি শীর্ষ নেতারা বিষয়টি বিবেচনা করবেন।

এছাড়া আরও বেশ কিছু আসনে বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থীদের জায়গায় জোটেরও অনেক মনোনয়ন দাবিদার রয়েছেন। সেসব আসনে কিভাবে মনোনয়ন দেওয়া হবে, সেদিকেই তাকিয়ে বিএনপিসহ তার দুই জোটের তৃণমূলকর্মীরা।
 
বাংলাদেশ সময়: ১২৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১৮
এমএইচ/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।