ঢাকা, রবিবার, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বইমেলা

তারুণ্যের চোখ সায়েন্স ফিকশনে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৪
তারুণ্যের চোখ সায়েন্স ফিকশনে

ঢাকা: ক্ষ্যাপাটে বিজ্ঞানী ভিক্টর ফ্রাঙ্কেনস্টাইন অপ্রথাগত বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় তৈরি করেন এক বুদ্ধিমান প্রাণী। সেই বুদ্ধিমান প্রাণী একের পর এক ঘটিয়ে যায় সব অদ্ভুত সব কর্মকাণ্ড।

মেরি শেলী ১৮১৮ সালে ‘ফ্রাঙ্কেনস্টাইন’ শিরোনামে সায়েন্স ফিকশন গল্পে তুলে ধরেন এই ক্ষ্যাপাটে বিজ্ঞানীর গল্প। সেই থেকে শুরু।

বিশ্বজুড়ে কিশোর পাঠকের আগ্রহের শীর্ষে এখন সায়েন্স ফিকশন। সেই ধারাবাহিকতায় বাংলা সাহিত্যেও একটি স্থান দখল করে নেয় কল্পবিজ্ঞানভিত্তিক গল্প-উপন্যাস। ১৮৯৬ সালে জগদীশচন্দ্র বসু রচনা করেন সায়েন্স ফিকশন ‘পলাতক তুফান’। এরপর সত্যজিৎ রায়ের ‘প্রফেসর শঙ্কু’ সিরিজ প্রকাশের পর বহু কিশোর পাঠক গল্প-উপন্যাস ছেড়ে কল্পবিজ্ঞানের দিকে ঝুঁকে পড়ে।

বাংলাদেশের কথাসাহিত্যেও সায়েন্স ফিকশন একটি বড় জায়গা দখল করে নিয়েছে। নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ‘তোমাদের জন্য ভালোবাসা’ আর মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘বিজ্ঞানী সফদর আলী’, ‘ওমিক্রনিক রূপান্তর’, ‘ক্রুগো’, ‘ট্রাইটন একটি গ্রহের নাম’, ‘ক্রোমিয়াম অরণ্য’ বইগুলো প্রকাশের পরে বইবিমুখ তারুণ্যের হাতে ফেরে বই।

এ বছরও বইমেলায় বেশ কয়েকটি প্রকাশনী সায়েন্স ফিকশনের বই এনেছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো দীপু মাহমুদের ‘ট্র্যাপডোর’ (সময়), মস্তক আহমেদের ‘দ্য ওল্ড ওয়ার্ল্ড’ (অনিন্দ্য প্রকাশ); মোস্তফা আলমের ‘ট্রিলিটি ও মালিহা’ (পাঞ্জেরী); বিশ্বজিৎ দাসের ‘নাবা’ (সময়); মায়িশা ফারজানার ‘এনট্রপি’ (সময়); রুশদী শামসের ‘অদ্ভুত যন্ত্রেরা সব’ (সময়); সেজান মাহমুদের ‘নির্বাচিত সায়েন্স ফিকশন’ (ঝিঙেফুল); মোস্তফা আহসান হাবীবের ‘ইন্টার গ্যালাকটিক মিশন’ (রূপ প্রকাশনী); উচ্ছ্বাস তৌফিকের ‘ফ্লাই ল্যান্ড: বহুমাত্রিক জগতের খোঁজে’ (আফসার ব্রাদার্স); সুলায়মান সুমনের ‘শিকারি ছায়া’ (ভাষাপ্রকাশ)।

সায়েন্স ফিকশনের পাশাপাশি বইমেলায় তরুণদের আগ্রহের শীর্ষে থাকে থ্রিলারধর্মী উপন্যাস। এই রহস্য-রোমাঞ্চপ্রিয় পাঠকের জন্য ১৯৮৫ সালের আগস্টে বিশ্বসাহিত্যের ক্লাসিক থ্রিলার সিরিজগুলোর অনুবাদ প্রক্রিয়া শুরু করে সেবা প্রকাশনী। বিদেশি কাহিনীগুলো অবলম্বনে রাকিব হাসান লিখতে শুরু করেন জনপ্রিয় তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই তিন গোয়েন্দা সিরিজ লুফে নেন কিশোর পাঠক। পাশাপাশি সেবা প্রকাশনীতে কাজী আনোয়ার হোসেনের অনুবাদে আসতে থাকে বিশ্বখ্যাত লেখক-ঔপন্যাসিক রহস্য-রোমাঞ্চের গল্প-উপন্যাসগুলো। ৩৯ বছর ধরে থ্রিলারধর্মী গল্প-উপন্যাসের পাঠকদের বড় ভরসা হয়ে আছে এই প্রকাশনী।

অমর একুশে বইমেলায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সেবা প্রকাশনীর স্টলে গিয়ে দেখা গেল রহস্যপ্রেমী পাঠকের বেশ বড় জটলা। ‘তিন গোয়েন্দা’র ১৯৪তম ভলিউম আর ‘মাসুদ রানা’র সর্বশেষ সিরিজ ‘কালবেলা’র সংস্করণ কিনে নিলেন পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাতুল আহমেদ। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমি থ্রিলার পড়তে ভালোবাসি। ওয়েস্টার্ন সিরিজও বেশ ভালো লাগে। আর এসব কিছু একসঙ্গে পেতে গেলে আসতে হয় সেবা প্রকাশনীতে।

সেবা প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক মো. আব্দুস সালাম বাংলানিউজকে জানান, তিন গোয়েন্দার কাহিনীর সংখ্যা ৫০০ ছাড়িয়ে গেছে। পুনর্মুদ্রণের চাপ কমাতে এই সিরিজটিকেও আমরা ভলিউম আকারে প্রকাশ করছি। দুই বা তিন খণ্ড এখন একত্রে প্রকাশ করতে বাধ্য হয়েছি। শুরুতে কেবল প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য রচিত হলেও পরবর্তী সময়ে এর কিছু অংশ সম্পাদনা করে সব বয়সী পাঠকের জন্য উপযোগী করে ছাপা হচ্ছে।

বাতিঘর প্রকাশনী থেকে এবার সাতটি থ্রিলারধর্মী উপন্যাস এসেছে। এগুলোর মধ্যে তানজীন রহমানের ‘অক্টারিন জগত সবুজ’ বইটি তরুণদের বেশ কজন কিনে নেন। তাদের একজন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় অব টেকনোলজির জাওয়াদ মাহাদী বলেন, এ বছর থ্রিলারধর্মী বইয়ে লাভক্রাফ্টিয়ান বা কসমিক হরর ঘরানার একটা ছাপ দেখছি। পাশ্চাত্যে এই ঘরানার থ্রিলারের বেশ চাহিদা আছে। বাংলাদেশে লিখতে শুরু করেছে কয়েকজন। এখন তাদের বই পড়ব।

বইমেলায় আসা থ্রিলারধর্মী বইয়ের মধ্যে রয়েছে আসিফ মেহদীর ‘সেরা চার অ্যাডভেঞ্চার’ (অনন্যা); আফসানা নীতুর ‘অতি সাধারণ (চলন্তিকা); মাইনুল এইচ সিরাজীর ‘শনিবার মধ্যরাতে’ (কথাপ্রকাশ); আলম সিদ্দিকীর ‘স্বীকারোক্তি’ (কথাপ্রকাশ); নাজিম উদ দৌলার ‘সত্যের মত বদমাশ’ (গ্রন্থকুটির) ইত্যাদি।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৪
এইচএমএস/এসআইএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।