ঢাকা, শনিবার, ২৮ চৈত্র ১৪৩১, ১২ এপ্রিল ২০২৫, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৬

বইমেলা

সন্ধ্যার ঠিকানা বইমেলা

আদিত্য আরাফাত, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০১৫
সন্ধ্যার ঠিকানা বইমেলা ছবি: আনন্দ/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বইমেলা থেকে: কী আছে মেলায়? শুধুই বই, স্টলে স্টলে বই। মেলাজুড়ে হাজারো বই।

কেবল বই নিয়েই বইমেলা। তাই বলে কি এ মেলাতে কেবলই বইয়ের বিকিকিনি? একদম না।

এ মেলা যে কেবলই বই বিক্রি-বাট্টার মেলা নয়। মেলাকে ঘিরে জমে ওঠে আড্ডা। রাজধানীর কারো কারো সন্ধ্যার ঠিকানা হয়ে উঠে অমর একুশে গ্রন্থমেলার প্রাঙ্গণ। এই যেমন বাংলা একাডেমিতে রোজ সন্ধ্যার আড্ডার ঠিকানা গড়েছেন নওশাদ ও তার বন্ধুরা।

নওশাদ একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএতে পড়ছেন। প্রতি সন্ধ্যায় তাদের আড্ডার ঠিকানা অমর একুশে গ্রন্থমেলার দুই প্রাঙ্গণ। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মেলা ঘুরে তারা আড্ডা জমান বাংলা একাডেমির পুকুর পাড়ে।

নওশাদ বাংলানিউজকে বলেন, এটাতো স্রেফ মেলা নয়, উৎসবও। প্রতি সন্ধ্যায় এখানে উৎসবের আমেজ থাকে তাই বন্ধুরা মিলে এখানে চলে আসি।

মতিঝিলে বেসরকারি একটি ব্যাংকে কর্মরত আলফাজ হোসেনও বললেন এমন সুরে। কয়েকজন সহকর্মীসহ মেলার শুরু থেকেই মেলায় এসেছেন তিনি।

বুধবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যার মুখরিত বইমেলায় এমন অনেক আড্ডারুর দেখা মিলেছে।  

একাডেমির নতুন ভবনের সামনে পুকুর পাড়ে, লিটল ম্যাগ চত্বরে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চের আশপাশে ও কালি মন্দিরের পুকুর পাড়েও থেমে নেই এই আড্ডা। দেশের চলমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটসহ নানা বিষয় উঠে আসছে তাদের আড্ডায়। দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে যেমন আলোচনা হচ্ছে, তেমনি আলোচিত হচ্ছে মেলায় কী বই কেনা যেতে পারে। বই আর আড্ডার মধ্য দিয়েই কেটে যাচ্ছে গ্রন্থমেলার দিনগুলো।

এদিকে আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনের সুবাদে দেশ-বিদেশের সাহিত্যিকদের আড্ডায় সরব হয়ে উঠেছে মেলা।
 
চতুর্থ দিনে ১০২ বই
বুধবার মেলার চতুর্থ দিনে এসেছে ১০২টি বই। এর মধ্যে উপন্যাস ১৫টি, কবিতা ১৯টি, গল্প ১১টি, প্রবন্ধ ১০টি, মুক্তিযুদ্ধ ৩টি, ভ্রমন ১টি, ছড়া ৬টি, গবেষণা ১টি, জীবনী ৭টি, বিজ্ঞান ৩টি, নাটক ১টি, ধর্মীয় ২টি, রম্য ১টি, ইতিহাস ৪টি, সায়েন্স ফিকশন ২টি ও অন্যান্য ১৬টি।

undefined


উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে, আগামী প্রকাশনী থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘দারিদ্র্য দূরীকরণ: কিছু চিন্তা ভাবনা’, নবরাগ প্রকাশনী থেকে আনু মুহাম্মদের ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, সাম্রাজ্যবাদ ও ভারত প্রশ্ন’, অনন্যা থেকে বোরহানউদ্দীন খান জাহাঙ্গীরের ‘সম্রাট জাহাঙ্গীরের আত্মজীবনী’, ঐতিহ্য থেকে শারমিন আহমদের ‘৩ নভেম্বর: জেলহত্যার পূর্বাপর’, বিভাস থেকে যতীন সরকারের ‘সাহিত্যের কাছে প্রত্যাশা’, আগামী থেকে মৌলি আজাদের ‘রুপালি জোছনায় ভেজা জীবন’, আফসার ব্রাদার্স থেকে মুহম্মদ জাফর ইকবালের ‘একজন সাধাসিধে মা এবং অন্যান্য’, নন্দিতা প্রকাশ থেকে সরকার আমিনের ‘মুহূর্তের দর্শন’, আফসার ব্রাদার্স থেকে মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের ‘শ্রেষ্ঠ প্রবন্ধ’, সময় প্রকাশন থেকে আবুল মাল আবদুল মুহিতের ‘বসবাসের উপযুক্ত বাংলাদেশ চাই’। গ্রন্থমেলার নজরুল মঞ্চে ২টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হয়েছে।

শেষ হলো আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলন
রোববার শুরু হওয়া আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনের শেষদিন ছিলা বুধবার। চতুর্থ দিনে ‘এই সময়ের সাহিত্য: নাটক’ শীর্ষক প্রথম অধিবেশনে সমকালীন নাটকের প্রবণতাসমূহ বিষয়ক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার।
এরপর বাংলা ও বিশ্বনাটক বিষয়ে মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন সুইজারল্যান্ডের তবিয়াস বিয়ানকনে, ভারতের প্রখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্ব অশোক মুখোপাধ্যায়, বাংলাদেশের বিশিষ্ট নাট্যজন সৈয়দ শামসুল হক, মামুনুর রশীদ, অধ্যাপক সৈয়দ জামিল আহমেদ, নাট্য-অনুবাদক অধ্যাপক আবদুস সেলিম, নাট্যকার সামিনা লুৎফা নিত্রা প্রমুখ।

তারা বলেন, ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় নাটক শিল্পমাধ্যম হিসাবে আজ এক নতুন দিগন্তের সামনে এসে উপস্থিত। সারা বিশ্বের শৈল্পিক উত্তরাধিকারকে বহন করে বাংলা নাটকে সাম্প্রতিক সময়ে প্রান্তিক মানুষের জীবনছবি, নারীদের জীবনসংগ্রাম এবং সর্বতোমুখী বৃত্ত ভাঙার প্রয়াসে ঋদ্ধ। মৌলিক নাটকের পাশাপাশি অনূদিত ও রূপান্তরিত নাটকের সুবিশাল সম্ভার বাংলা নাট্যভুবনের বৈশ্বিক অভিযাত্রাকে চিহ্নিত করে। পাশাপাশি ঐতিহ্যবাহী থিয়েটারের সমান্তরালে সাম্প্রতিক সময়ে প্রত্ন-থিয়েটার, পরিবেশ-থিয়েটার, মুক্তিযুদ্ধের নানামাত্রিক স্মৃতি অন্বেষামূলক নাট্যচর্চা আমাদের থিয়েটারকে শিল্পসত্য ও মানবমুক্তির সত্যের মুখোমুখি করে।

এই অধিবেশন সঞ্চালনা করেন নাট্যব্যক্তিত্ব আতাউর রহমান।
 
বিকেল আড়াইটায় বাংলাদেশের দশটি নাটকের চুম্বক অংশ পরিবেশ করা হয়।

সাহিত্য সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠান
সন্ধ্যা ৬টায় বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে চারদিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য রাখেন সম্মেলনের বিদেশি অতিথি ফ্রাঁস ভট্টাচার্য, হান্স হার্ডার, সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক প্রমুখ।

তারা বলেন, এটি ছিল এক ঐতিহসাকি সাহিত্য সম্মেলন। এতে সাহিত্যবিষয়ক আলোচনার পাশাপাশি সৃজনশীল সাহিত্যমাধ্যমের উপস্থাপনা ও পরিবেশনায় শ্রোতা-দর্শক সমকালীন সাহিত্য সম্পর্কে বিস্তৃত ধারণা লাভ করেছেন। ভাষার জন্য বাঙালির অনন্য আত্মত্যাগ যেমন বিশ্বে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে তেমনি এ ধরনের সম্মেলনের মধ্য দিয়ে বৈশ্বিক পরিসরে বাংলা সাহিত্যের সংযোগ প্রসারিত হবে। সাহিত্য সম্মেলনে বিদেশি সাহিত্যিকরা আসায় অনুষ্ঠান শেষে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক সবাইকে ধন্যবাদ জানান।

মূলমঞ্চের আয়োজন
গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশে ছড়াসাহিত্য শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ছড়াকার সুজন বড়ুয়া।

রফিকুল হকের সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধে সুজন বড়ুয়া বলেন, বাংলাদেশের ছড়াকারেরা ছড়া লেখেন শিশুহৃদয়ের অকৃত্রিম সরলতা দিয়ে। আমাদের ছড়া সামাজিক অঙ্গীকারের চেতনায় পরিপুষ্ট। সামাজিক অসঙ্গতি-অন্যায়-শোষণ ইত্যাদির বিরুদ্ধে শানিত কণ্ঠের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের অবিনাশী আলোয়ে স্নাত আমাদের ছড়ার ভুবন।

আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন রফিকুর রশিদ, আসলাম সানী, রাশেদ রউফ এবং আলম তালুকদার।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০১৫

** প্রাণে প্রাণে জমে ওঠে বইমেলা
** বইমেলার তথ্য মিলবে দুই কেন্দ্রে
** মেলায় আসছে ‘জীবনানন্দ, সময়ের নিঃসঙ্গ নাবিক’

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।