ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বইমেলা

মধুসূদনকে বিকৃত উপস্থাপন বাংলা একাডেমির!

সাখাওয়াত আমিন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৫
মধুসূদনকে বিকৃত উপস্থাপন বাংলা একাডেমির!

বইমেলা থেকে: আধুনিক বাংলা সাহিত্যের দিকপাল মাইকেল মধুসূদন দত্তের অমর সৃষ্টি ‘বঙ্গভাষা’ সনেটটিকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে এবারের অমর একুশে গ্রন্থমেলায়।

মেলার বাংলা একাডেমি অংশের প্রবেশ পথে হাতের ডানদিকের অংশে সাঁটানো হয়েছে মধুসূদনের ‘বঙ্গভাষা’ সনেটটির শেষের পাঁচটি লাইন উদ্ধৃত করে।


এতে লেখা হয়েছে, ‘ওরে বাছা মাতৃ-কোষে রতনের রাজি, এ ভিখারী-দশা তবে কেন তোর সাজি?’

তবে কবির ‘চতুর্শদপদী কবিতাবলী’ কাব্যগ্রন্থে ‘বঙ্গভাষা’ সনেটটির চরণ এমন- ‘এ ভিখারী-দশা তবে কেন তোর আজি?’

১৯৬০ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে কবি মধুসূদন তার বন্ধু রাজনারায়ণ বসুকে লেখা একটি চিঠিতে এ সনেট লেখার কথা বলেন। তখন এটির নাম ছিল ‘কবি-মাতৃভাষা’। পরে কিছুটা পরিবর্তিত রূপে এটি ‘বঙ্গভাষা’ নামে কবির ‘চতুর্শদপদী কবিতাবলী’ কাব্যগ্রন্থে সংকলিত হয়। বর্তমানে এই সনেটটি উচ্চ মাধ্যমিক বাংলা প্রথম পত্র বইয়ে পাঠ্য হিসেবেও রয়েছে।

বিষয়টিকে বাংলা একাডেমির উদাসীনতা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন বাংলা ভাষা ও সাহিত্য গবেষক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘এটা বাংলা একাডেমির উদাসীনতা। কারণ মূল কবিতায় লেখক লিখেছেন ‘আজি’। সেখানে ‘সাজি’ কোনোভাবেই হতে পারে না।
এতে কবিতার বক্তব্যই পরিবর্তন হয়ে যায়। ’

অধ্যাপক সৌমিত্র আরও বলেন, ‘কবিতাটি উচ্চ মাধ্যমিকে পাঠ্য। তাই পরীক্ষায় ভালো নম্বর পাওয়ার জন্য শিক্ষার্থীরা এটি মুখস্ত করেন। তাদের দৃষ্টিতে এটি পড়লে তারা বিভ্রান্ত হবেন। ’

এসব ব্যাপারে বাংলা একাডেমিকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এ ব্যাপারে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খানের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বাংলা বাংলানিউজকে বলেন, ব্যাপারটি আমার জানা ছিল না। আমি ব্যবস্থা নিচ্ছি। ’

তবে ভুলের দায়-দায়িত্ব মেলার মিডিয়া সহযোগী স্টেপ মিডিয়ার ওপর চাপিয়েছেন তিনি। এসব প্রচারণার দায়িত্ব তাদের ছিল বলে জানান বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক।

এদিকে বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে মেলায় আসা পাঠক-দর্শকদের মাঝেও। কারণ কবিতার লাইনগুলোকে এমন জায়গায় স্থাপন করা হয়েছে যে মেলায় প্রবেশ পথে এটি সবার চোখেই পড়বে।

মিরপুর থেকে মেলায় আসা উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী তাসকিন মাহমুদ বাংলানিউজকে বলেন, কবিতাটি আমাদের বাংলা বইয়ে পাঠ্য। তাই এটি আমার মুখস্থ। কিন্তু মেলায় এসে এটি দেখে আমি দ্বিধান্বিত হয়ে পড়েছি যে আসলে সঠিক হবে কোনটি। কারণ বাংলা একাডেমির তো ভুল করার কথা নয়। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।