ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বইমেলা

মন খারাপের গাড়ি’র মোড়ক উন্মোচন

মাহবুবুল হক শাকিলের কবিতা বন্দনায় বোদ্ধারা

আদিত্য আরাফাত, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৬, ২০১৬
মাহবুবুল হক শাকিলের কবিতা বন্দনায় বোদ্ধারা ছবি: রানা/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

গ্রন্থমেলা থেকে: নিজেকে ‘কবি’ না বললেও মাহবুবুল হক শাকিলের ভাবনাগুলো কবিতা হয়ে উঠেছে। এসব ভাবনা রূপান্তর হয়েছে কবিতায়।

চিন্তা-চেতনা ও বোধের গভীরতায় তিনি পরিপূর্ণ এক কবি।

মাহবুবুল হক শাকিলের কবিতা পড়ে এভাবেই মূল্যায়ন কবিতা বোদ্ধাদের। শনিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বাংলা একাডেমির শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে বইটির প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বক্তারা মাতেন শাকিলের কবিতা বন্দনায়।

মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে দেশের খ্যাতনামা সাহিত্যিকরা তার কবিতার নানা দিক নিয়ে কথা বলেছেন।

ইমিরেটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, দু’একটি ব্যতিক্রম থাকলেও থাকতে পারে; কিন্তু এ বইয়ের কবিতাগুলোর সবই খুব ব্যক্তিগত অনুভূতির কবিতা। কবি নিজের সঙ্গে কথা বলেছেন, তার প্রেম যেমন ব্যক্তিগত তার প্রকৃতিও তেমন ব্যক্তিগত।
 
তিনি বলেন, ‘সে চারপাশে যা দেখছে এটাকে নিজের করে নিয়েই প্রকাশ করেছে। শাকিলের কবিতা কোন পরিণতির দিকে যাচ্ছে বলা মুশকিল, তবে এতে বোঝা যায় যে অনুভুতির তীব্রতাই এখন পর্যন্ত তার কবিতার প্রধান। ’

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান বলেন, শাকিল যে কবি এ বিষয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। তার কবিতায় শব্দের বিন্যাসে শিল্পিত বোধের অভিজ্ঞতা হয়। বর্তমান সময়ের কবিদের চেয়ে তিনি কিছুটা আলাদা। তার কবিতায় গীতিলতা, নস্টালজিয়া, বাংলাদেশ, সমকালের চেহারা, মানবিক নানা বিষয় রয়েছে। তার কবিতা অনেক পরিণত।

সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার বলেন, আমি যতটুকু পড়েছি অভিভূত হয়েছি। শাকিল তার কাব্যে জাতীয়তা ও আন্তর্জাতিকতার সমন্বয় ঘটিয়েছেন। তার কবিতার অনেক জায়গায় মনে হয়েছে জীবনানন্দ দাশের মতো প্রকৃতি প্রেমের অংশ রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, শাকিল বলেছেন, তিনি নিজের কথা বলেন। কিন্তু এর সঙ্গে আমরাও কথা বলছি। আমার মনে হচ্ছে, শাকিল আমাদের কথা বলছেন। শাকিলের কবিতায় প্রেম ও অপ্রেমের দ্বন্দ্ব রয়েছে। যাতে শেষ পর্যন্ত প্রেম জয়যুক্ত হয়েছে।

কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, এ বইয়ের ভূমিকা লেখার দায়িত্ব আমার ওপর এসে পড়েছিল, ভূমিকা লিখে অনেক আনন্দ পেয়েছি। কিছু কিছু মূল্যায়ন করার চেষ্টাও করেছি। আপনারা গ্রহণ নাও করতে পারেন। কারণ আমি একটি দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেছি।

তিনি বলেন, শাকিল যে ধারার কবি যাদের ‘স্বীকারোক্তি কবি’ বলে। যিনি প্রথমে নিজের কাছে, পরে সমাজ বা জগতের কাছে স্বীকারোক্তি দেন। সমাজ বা জগৎ তার কথা শুনলো কি না তা নিয়ে কোন মাথাব্যথা নেই। তিনি নিজের কাছে স্বীকারোক্তি করেই যাচ্ছেন। শাকিলের কবিতায় তা আমি দেখেছি। প্রত্যেকটি কবিতা তার হৃদয় নিংড়ানো।

কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, শাকিলের মন খারাপের গাড়ির যাত্রা শুরু হয়েছে। আমি আশা করবো এ যাত্রা আমৃত্যু চলবে। যাত্রা তখনই শেষ হবে যখন শাকিল নিজে থামবেন। কিন্তু একজন কবি কখনও থামেন না। তিনিও থামবেন না।

নিজের অনুভূতি ব্যক্তকালে মাহবুবুল হক শাকিল বলেন, একজন কবি বলতে যা বোঝায়, আমি তা কোনোদিনই ছিলাম না; এখনও নেই। কবিতার ব্যাকরণ, প্রকরণ, কাব্যরীতি কোনোকিছুই আমি জানি না। আমি নিজের সঙ্গে নিজে যে কথা বলি, তাই এক সময় কাগজে লিখতাম। পরে ফেলে রাখতাম। এই টুকরো কাগজগুলোকে এক করলে আমি আমার যাপিত সময়কে মনে করতাম। অতিক্রম করা সময়কে ধরার চেষ্টায় কবিতাগুলোকে বই আকারে প্রকাশ করেছি।
তিনি বলেন, আমি জানি না, আমার এ কথোপকথন সবার ভালো লাগবে কি না। আমি শুধু নিজের কথা বলেছি।

নাট্যজন পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঞ্চালনায় শাকিলের কবিতার ওপর আরও আলোচনা করেন অধ্যাপক ফকরুল আলম, অন্বেষা প্রকাশনের সত্ত্বাধিকারী শাহাদাত হোসেন প্রমুখ।

শাকিলের প্রথম কবিতার বই ‘খেরোখাতার পাতা থেকে’। প্রথম কবিতার বইয়ের মাধ্যমে যে যাত্রা সূচনা করেছিলেন সে অভিযাত্রায় এবার সংযোজন করলেন ‘মন খারাপের গাড়ি’।

কবি হলেও মাহবুবুল হক শাকিল প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী হিসেবে কাজ করছেন।

কবি বইটি উৎসর্গ করেছেন দগ্ধ সময়কে। উৎসর্গে কবি লিখেছেন ‘দগ্ধ সময়কে/ যাকে ধরতে চেয়েছিলাম/ আমারই রক্তে-কষ্টে কলমে’। ১০২ পৃষ্ঠার এ বইয়ে মোট ৯২টি কবিতা রয়েছে। বইটির প্রচ্ছদ করেছেন ধ্রুব এষ। বইটির মূল্য ২০০ টাকা।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৬, ২০১৬
এডিএ/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।