ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বইমেলা

স্বাধীনতা সম্মাননাপ্রাপ্ত উর্দুভাষার কবি ফয়েজের কবিতা বইমেলায়

বইমেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৬
স্বাধীনতা সম্মাননাপ্রাপ্ত উর্দুভাষার কবি ফয়েজের কবিতা বইমেলায়

বইমেলা থেকে: অমর একুশে গ্রন্থমেলায় বাংলা অনুবাদে প্রকাশিত হলো উর্দুভাষার বিখ্যাত কবি ফয়েজ আহমদ ফয়েজের কবিতা।

ফয়েজের জন্ম অবিভক্ত ভারতের পাঞ্জাবে, ১৯১১ সালে।

সর্ব-ভারতীয় প্রগতিশীল লেখক সংঘ প্রতিষ্ঠাতাদের একজন তিনি। দু’বার নোবেল মনোনয়ন ও ১৯৬২ সালে পেয়েছেন লেনিন শান্তি পুরস্কার। মারা যান ১৯৮৪ সালে।

সাম্রাজ্যবাদ আর প্রতিক্রিয়াশীলতার বিরুদ্ধে লড়াই করে সাম্যবাদী ফয়েজকে বরণ করতে হয়েছে জেল ও নির্বাসিত জীবন।

ফয়েজ আহমদ ফয়েজের কবিতা প্রসঙ্গে বিখ্যাত ফিলিস্তিনি দার্শনিক এডওয়ার্ড সাঈদ বলেছেন, ফয়েজকে বুঝতে হলে একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমলে নেয়া দরকার। আর তা হলো এই যে, গার্সিয়া মার্কেজের মতো ফয়েজকেও সাহিত্যের অভিজাত থেকে আমজনতা—দু’পক্ষই পড়েছে এবং শুনেছে। তার সবচেয়ে বড় অর্জন বিভিন্ন সুরের মিশ্রণে এমন এক অলংকার ও লয় সৃষ্টি করা যেখানে তিনি ধ্রুপদি ফর্ম ব্যবহার করেছেন, আবার পাঠকের সামনে সেগুলোর রূপ বদলে দিচ্ছেন পুরাতন ফর্ম থেকে পাঠককে বিচ্ছিন্ন না করেই।

যেকোনো ভাষাতেই এমন অর্জনকে অনন্য আখ্যায়িত করে এডওয়ার্ড আরো বলেছেন, ফয়েজের স্পষ্টতা ও শুদ্ধতা বিস্ময়কর। কল্পনা করুন—এমন একজন কবি যার কবিতায় ইয়েটসের সংবেদনশীলতা আর নেরুদার শক্তি এক হয়ে গেছে। আমার মতে ফয়েজ এই শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি। এশিয়া আর আফ্রিকার অধিকাংশ মানুষ তাকে সেভাবেই শ্রদ্ধা করে।

ফয়েজের কবিতার বাংলা অনুবাদ মেলায় এনেছে ঐতিহ্য। ২৬৪ পৃষ্ঠার অনুবাদ বইটির বিনিময় মূল্য ৪৮০ টাকা। অনুবাদক নিজেই করেছেন বইটির প্রচ্ছদ।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ঐতিহ্যের ২৫৮-২৬০ নম্বর স্টলে বইটি পাওয়া যাবে।

উর্দুভাষী ফয়েজের কবিতা অনুবাদ করা প্রসঙ্গে অনুবাদক জাভেদ হুসেন বলেন, বাংলাভাষী মানুষের জন্য উর্দু দূরের কোনো ভাষা নয়। হিন্দি সিনেমায় ব্যবহৃত ভাষাটি আসলে কথ্য উর্দু মাত্র। পাঠক-পাঠিকা একটু ক্লেশ স্বীকার করলেই মূল উচ্চারণে কবিতাগুলো বুঝতে পারবেন। আর অনুবাদ কর্ম মানে অনূদিত ভাষায় আরেক ভাষা ও সাহিত্যের জানালা খোলা। এই কথা মনে রেখে মূল ভাষার উচ্চারণে কবিতাগুলোর পাঠ বাংলায় বর্ণান্তর করে দেওয়া হয়েছে। কেউ ভাবানুবাদ করতে চাইলে এটা কাজে দেবে।

তিনি বলেন, কবিতাগুলোর মূল পাঠ নেওয়া হয়েছে লাহোরের মকতবায়ে কারওয়াঁ প্রকাশনী থেকে ছাপা ফয়েজ আহমদ ফয়েজের কাব্যসমগ্র ‘নুসখাহায়ে বফা’র পকেট সংস্করণ থেকে। কবিতার ভিন্ন ভিন্ন পাঠের জন্য কাজে দিয়েছে নয়া দিল্লি থেকে হিন্দি লিপিতে প্রকাশিত ফয়েজ কবিতা সমগ্র ‘সারে সুখান হামারে’র ২০১৪ সালে রাজ্যকমল প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত চতুর্থ সংস্করণ।
 
জাভেদ জানান, বইয়ে কবিতাগুলো সাজানো হয়েছে ধরন অনুযায়ী। প্রথমে নজম, পরে গজল, কাতা এবং ‘অন্যান্য’ অংশে পংক্তি, কাওয়ালি, ইংরেজি কবিতা। কবিতা রচনাকালীন ক্রম অনুসরণ করা হয় নি।
 
ফয়েজ ছিলেন একাধারে একজন কমিউনিস্ট রাজনৈতিক কর্মী, সাংবাদিক, ট্রেড ইউনিয়ন নেতা ও পত্রিকার সম্পাদক। রাষ্ট্র ব্যবস্থা বদলানোর চেষ্টার অভিযোগে প্রায় নিশ্চিত মৃত্যুদণ্ড মাথায় নিয়ে কারাবাস করেন ১৯৫১ থেকে ১৯৫৫ পর্যন্ত। রাষ্ট্রের হুমকি নিয়ে কয়েক দফায় কাটান নির্বাসিত জীবন। জীবনের শেষ পর্যায়ে, ১৯৭৯ থেকে ১৯৮২ সালে বৈরুতে ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের সঙ্গে ছিলেন। সেখানে আফো-এশিয় লেখক সংঘের জার্নাল লোটাস-এর সম্পাদনা করতেন।

মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোতে বাঙালির পাশে থাকার জন্য ২০১৩ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে মরণোত্তর স্বাধীনতা সম্মাননায় ভূষিত করে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৬
টিকে/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।