ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বইমেলা

দুর্যোগ কাটিয়ে অনেকটা স্বাভাবিক মেলা

সৈয়দ ইফতেখার আলম, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭২২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৬
দুর্যোগ কাটিয়ে অনেকটা স্বাভাবিক মেলা ছবি: আনোয়ার হোসেন রানা/ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বইমেলা থেকে: আচমকা ঝড়-বৃষ্টির হানায় এলোমেলো বইয়ের সাজানো বাগান। মাঝে একদিন প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের প্রাণপণ চেষ্টা।

তারপর সম্মিলিত কাজে অনেকখানি গুছিয়েও ওঠা, ফের স্বাভাবিক রূপে প্রাণের অমর একুশে গ্রন্থমেলা।

বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বইমেলা শুরুর পর থেকে পুরো মেলা মাঠ ঘুরে শোনা গেলো প্রত্যয়ের সুর, নতুনরূপে জেগে ওঠার প্রতিজ্ঞা।

মেলার কিছু কিছু অংশে এখনও তাণ্ডবের চিহ্ন। কাদা-জলের রাস্তায় পড়েছে বালুর আস্তরণ, নতুন ইটে জেগেছে রাস্তা। বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়া বই অফিসে ফেরত পাঠিয়ে নতুন নতুন বই নিয়ে অনেক ভ্যান ও গাড়ির সমারহ। দেখা গেছে ক্ষতিগ্রস্ত অনেক প্রকাশনীর কর্মীরা এদিন একটু আগেভাগে এসে স্বল্প ভেজা বইগুলো রোদে-বাতাসে শুকাতে দিয়েছেন।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সৃজনশীল প্রকাশকরা সবাই সবার খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। জানছেন পরিস্থিতি সম্পর্কে। যেন একটি পারিবারিক আবহ পুরো মেলা প্রাঙ্গণে। আর সেখানে আত্মার পরম অতিথি পাঠকরা। মেলা ঘুরতে ঘুরতে কথা হয় কাকলী প্রকাশনীর কর্ণধার নাছির আহমেদ সেলিমের সঙ্গে। তিনি পুরো মেলা ঘুরিয়ে দেখান। আর তুলে ধরেন, বাংলা একাডেমি নিয়ে কিছু অভিযোগ।

নাছির বলেন, সাতদিন মেলার সময়কাল বাড়ানোর দাবি জানানো হয়েছিল, একাডেমি তা মানবে না আমরা বুঝে গেছি। অন্তত শেষ অনুরোধ তাদের করেছি, মেলা শেষ হওয়ার সময় রাত ৮টার জায়গায় যেন এক ঘণ্টা বাড়িয়ে ৯টা করা হয়। এখন দেখা যাক তারা কতটুকু প্রকাশকবান্ধব সিদ্ধান্ত নেন।

তিনি বলেন, যাদের ক্ষতি হয়েছে, তা তো আর কাটিয়ে ওঠা যাবে না। কিন্তু শেষ পাঁচদিনের ক্রেতা যেন ছুটে না যায় আমরা সে চেষ্টাই করবো। ছুটির দিনের মতো শেষ পাঁচদিনে বিক্রির রেশ থাকলে সার্বিকভাবে মাথায় হাত পড়বে না কারও।

অনেক খানি ক্ষতির শিকার সময় প্রকাশনের সহকারী ব্যবস্থাপক আনিসুর রহমান জানান, আনিসুল হকের মা উপন্যাসের বইগুলো একদম ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। প্রায় হাজার দুয়েক মা উপন্যাস বাতিল। সঙ্গে আরও নানান বই তো আছেই। বাতিল বইগুলো অফিসে ফেরত পাঠিয়ে আজ আবার নতুন বই নিয়ে এসেছি। সবারই একই অবস্থা, নতুন বই অফিস থেকে এনে মেলা শুরু করেছে ক্ষতির শিকার প্রকাশনীগুলো।

অতীত বলে, একুশে ফেব্রুয়ারির পরের কয়েকদিনেই আসলে বইমেলায় বিক্রি বাড়ে। কিন্তু সেই জমজমাট বিকিকিনি পণ্ড করেছে বসন্তের বৃষ্টি, বুধবারের (২৪ ফেব্রুয়ারি) সেই রেশ বৃহস্পতিবারে (২৫ ফেব্রুয়ারি) খুব একটা না থাকলেও, পাঠক বাড়ার আশাবাদ প্রকাশকদের। সব প্রতিকূলতা পেরিয়ে প্রত্যয়ী তারা।

বৃহস্পতিবার মেলা খোলার আগে দেখা যায়, মানুষের উপস্থিতি অনেক। প্রবেশদ্বার খোলার আগেই ছিল লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের অপেক্ষা। যাদের কেউ কেউ বুধবার মেলায় ঠিকভাবে ঘুরতে না পেরে এদিন আবার উপস্থিত হয়েছেন।

আদিগন্ত প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী মোশতাক রায়হানের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বাংলানিউজকে জানান, বুধবারের শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ায় তার স্টলের অধিকাংশ বই নষ্ট হয়ে গেছে। ভেজা এসব বই পরবর্তীতে কোনো কাজেই লাগানো সম্ভব নয়। কোনো বই বেঁকে গেছে, নয়তো মুচড়ে পড়েছে, আবার কোনো কোনো পাতা একত্রে লেগে গেছে। এসব বই পড়া বা দ্বিতীয়বার ব্যবহার সম্ভব নয়।

মোশতাক বলেন, একটি ছোট্ট প্রকাশনী হিসেবে আমার ক্ষতি লাখ দুয়েক টাকা। তবুও স্বপ্ন দেখি ভালো কিছুর। শেষ কয়েকটি দিন কেবল ক্ষতির বইগুলোর খরচের অর্থ উঠলেই সন্তুষ্ট থাকবো।

বুধবারের দুর্যোগে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এবং বাংলা একাডেমি প্রান্তে মোট ২শ’টি স্টল কম-বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মেলা আড়াই ঘণ্টা বন্ধের পর বিকেল সাড়ে ৫টায় শুরু হয়, তবে তা চলে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত। অর্থাৎ শেষও হয়েছে দেড় ঘণ্টা আগে। ছিল না কোনো বিক্রিবাট্টা। আসেনি কোনো নতুন বইও। পণ্ড পুরো দিন।

এ প্রসঙ্গে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান বাংলানিউজের সঙ্গে এক আলাপচারিতায় বলেন, আমরা বুকটা আনন্দে ভরে গেছে। কারণ এই পাঠকই আমাদের শক্তি-উদ্যম। তারাই মেলার প্রাণ, তারা যে গতকাল বুধবার দুর্যোগের মধ্যেও ভিড় করে এসেছিলেন, এটি একটি বড় বিষয়। বৃহস্পতিবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক, এমন স্বাভাবিকতা শেষ দিন পর্যন্ত রইলে প্রকাশকরা কেউ অখুশি রবেন না বলে আশা করি।

বাংলা একাডেমির পরিচালক ও মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, আমরা অতিস্বল্প সময়ে সব গুছিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছি। বৃহস্পতিবার আবহাওয়ায় বেশ ভালো, এখন যারা আসবেন তারা আর দুর্যোগের কোনো রেশ মেলায় পাবেন না। বালু ফেলা হয়েছে, বিছানো হয়েছে ইট, এখন আর নেই কাদা বা গর্ত। শেষ সময়ে আপন আলোয় প্রাণের মেলা জমে উঠুক তাই চাই।

এদিন বইমেলার দুয়ার খোলে যথারীতি বিকেল ৩টায়, চলবে রাত ৮টা পর্যন্ত। একদিন মূলমঞ্চ বন্ধের পর এদিন সেখানে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ‘বাংলাদেশে নারী জাগরণ: সমস্যা ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপনে আছেন ড. মাসুদুজ্জামান। আলোচনায় মালেকা বেগম, সুলতানা কামাল এবং মুহম্মদ শহীদ উজ জামান। সভাপতিত্বে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব বেগম আক্‌তারী মমতাজ। সন্ধ্যায় যথারীতি রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

এছাড়া সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে ‘আমাদের বাঁচার দাবি’: ৬ দফার ৫০ বছর’ গ্রন্থটির মোড়ক উন্মোচন হবে। আলোচনায় অংশ নেবেন অধ্যাপক রেহমান সোবহান, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম, অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, অধ্যাপক এম এম আকাশ এবং বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। এছাড়া গ্রন্থকারের অনুভূতি প্রকাশ করবেন অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদ।

বাংলাদেশ সময়: ১৭২৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৬
আইএ/এএ

** মন খারাপের বইমেলা

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।