ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ বৈশাখ ১৪৩২, ০৮ মে ২০২৫, ১০ জিলকদ ১৪৪৬

বইমেলা

এখনও বীরদর্পে হাঁটেন প্রিয় হুমায়ূন!

সৈয়দ ইফতেখার আলম, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২:২৩, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৭
এখনও বীরদর্পে হাঁটেন প্রিয় হুমায়ূন! হুমায়ূন আহমেদের বই

অমর একুশে গ্রন্থমেলা ঘুরে: ‘কাউকে ভালোবাসলে বেশি কাছে যাবার চেষ্টা করতে নেই। তাতে করে কাছে যাবার আকুতি দেখে সে হয়তো দূরে চলে যেতে পারে। কেননা মানুষ সোজা পথের চেয়ে বাঁকা পথে হাঁটতে আনন্দ পায় বেশি। কিন্তু সব হারিয়ে সোজা পথেই আসতে হয়। সেই সময়ে নতুন করে ভালোবাসার ইচ্ছেটা আর থাকে না’।

অতি সহজ সরল বাক্যে জীবনের রূঢ় বাস্তবতাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখাতে পেরেছিলেন তিনি। একাধারে যেমন তুলেছেন গম্ভীরতা-চির সত্য, পাশাপাশি রম্য, রসবোধ ও যাপিত জীবনের দৈনন্দিন গল্পকে লিপিবদ্ধ করে গড়েছেন এক একটি নক্ষত্র।

সেজন্যই তিনি প্রিয় হুমায়ূন; হুমায়ূন আহমেদ, পাঠকের প্রিয় স্যার।

অমর একুশে গ্রন্থমেলার গেট দিয়ে ঢুকতে ঢুকতে এক কিশোর তার মামাকে জানাচ্ছিল, হুমায়ূন আহমেদের নতুন বই চাই। মামা বললেন, তিনি তো বেঁচে নেই- ফলে নতুন বই হবে কী করে। যা আছে সবই পুরাতন।

হুমায়ূন আহমেদের বই

হুমায়ূন আহমেদের বই

শেষ পর্যন্ত মেলায় সেই কিশোর প্রিয় লেখকের বই কিনেছিল কিনা তা আর জানা হয়নি, তবে বইক্রেতাদের বড় অংশের হাতেই মিলেছে হিমু-মিসির আলি কারিগরের বাঁধানো সাহিত্য।

মেলায় বই বিক্রির (পৃথক লেখকের) পূর্ণ পরিসংখ্যান হয়ত ঝাঁপি গুটালে আসবে; কিন্তু বরাবরের মতো চলতি আসরেও হুমায়ূন সাহিত্যের বেলা পড়ার কোনো নজির মেলেনি লেশমাত্র। সূর্যের তীব্র কিরণের মতোই হুমায়ূনের বইয়ের কিরণ এখনও ছড়াচ্ছে পাঠক মনে।

হুমায়ূনহীন পাঁচ বছর হলো মেলা। তাতে কী, তিনি কি কখনও পুরাতন হতে পারেন!

রসবোধেও হুমায়ূনের জুড়ি মেলা ভার! জনম জনম উপন্যাসে তিনি বলছেন, ‘আল্লাহতালা মেয়েগুলোকে এতো সুন্দর করে পাঠিয়েছেন কেন কে জানে? মেয়েদের সবই সুন্দর। এরা রাগ করলেও ভালো লাগে, অপমান করলেও ভালো লাগে। ভালোবাসার কথা বললে কেমন লাগবে কে জানে’?

আধুনিক এই ব্যক্তিত্ব এক পরিপূর্ণ সাহিত্য, কথাশিল্পে বীরের প্রতিচ্ছবি। তিনি তো সবসময়ই পাঠকের মনে বীরদর্পে হাঁটবেনই। ‘তবুও ভাটা পড়লো কি মেলায় এবছর হুমায়ূন সাহিত্য বিক্রিতে’ এমন প্রশ্নের জবাবে উল্টো বীরত্বগাথা শুনিয়ে দিলেন কাকলী প্রকাশনীর কর্ণধার এ কে নাছির আহমেদ সেলিম।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, এবারও হুমায়ূন আহমেদের বই পুরো মেলায় সব থেকে বেশি বিক্রি হচ্ছে। তিনিই শীর্ষে। তার যত বই আজ পর্যন্ত প্রকাশিত, প্রত্যেকটাই আছে বিক্রির দৌড়ে। এগুলোর সমষ্টি করলে তিনিই তো এগিয়ে। এছাড়া কয়েকটি প্রকাশনা সংস্থা নতুন করে সংকলন বের করেছে; সেগুলোর চাহিদাও প্রচুর। অন্তত ৩০-৪০টি হুমায়ূন সংকলন ২০১৭ বইমেলায় এসেছে।

সাহিত্যর মূল্য হিসেবে হুমায়ূনের বই-ই সেরা উল্লেখ করে প্রবীণ এই প্রকাশক বলেন, তাকে নিয়ে তিনটি নতুন কাজ কাকলী করার চেষ্টা করেছে। এরমধ্যে, কথামালা, শ্রেষ্ঠ মিসির আলি এবং হুমায়ূন সংগীত: নদীর নামটি ময়ূরাক্ষী; লেখা- মেহের আফরোজ শাওন।

হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস

হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস

কাকলী থেকে ‘কথামালা’র বিক্রি তুঙ্গে; ইতোমধ্যে বাজারে এলো বেশ কয়েকটি সংস্করণ। এটি মূলত লেখকের বিভিন্ন উপন্যাস থেকে সংকলিত বাণী বা উল্লেখযোগ্য চরণ সমন্বয়। আর গানের বইটিতে হুমায়ূনের লেখা গান ও এর পেছনের কথা তুলে ধরেছেন তার স্ত্রী শাওন।

অন্বেষা থেকে রূপা, তন্দ্রাবিলাস, অমানুষ, নির্বাসন, কয়েকটি নীলপদ্ম ভালো বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া তারা নতুন দুটি বই এনেছেন (সংকলন), যার মধ্যে আছে, চন্দ্রসখা ও হলুদ হিমু। প্রকাশনীর স্বত্ত্বাধিকারী সাহাদাত হোসাইন বলেন, হুমায়ূনের আবেদন চিরন্তন। তার বই বিক্রির শেষ নেই। দিন দিন তার বই কেনার পাঠকের সৃষ্টি হচ্ছে।

অন্যপ্রকাশও নতুন সংকলিত বই বের করেছে। মুক্তিযুদ্ধের বাছাই গল্প এবং মিসির আলি দশ যার অন্তর্ভুক্ত। এছাড়াও তাদের ইতোপূর্বে প্রকাশিত বইগুলোর মধ্যে, জোছনা ও জননীর গল্প, শেষ উপন্যাস- দেয়াল, মাতাল হাওয়ার কাটতি দারুণ।
 
হুমায়ূন সাহিত্যে আরেক বড় প্রকাশনা অনন্যা থেকে মিসির আলির গল্পমালা এবং নির্বাচিত ভূত- নামে নতুন দুই বই বের হয়েছে (সংকলন); একেকটি বই দুই থেকে তিনশ কপি বিক্রি সম্পন্ন।

তাম্রলিপি নিয়ে এলো জনপ্রিয় এই লেখকের চার সংকলন। সেরা পাঁচের মিশ্রণে তারা করেছে, সেরা পাঁচ মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস, প্রেমের উপন্যাস, ভূত ও কিশোর উপন্যাস। যার একটির থেকে আরেকটির বিক্রি পাল্লা দিন দিন হচ্ছে ভারি।

এদিকে আরও কয়েকটি প্রকাশনা হুমায়ূনের লেখাগুলো নিয়ে সংকলন করেছে।

নন্দিত নরকে থেকে শুরু করে দেয়াল; দীর্ঘ যাত্রা। শেষ উপন্যাসে আছে- ‘ভাদ্র মাসের সন্ধ্যা। আকাশে মেঘ আছে। লালচে রঙের মেঘ। যে মেঘে বৃষ্টি হয় না, তবে দেখায় অপূর্ব’। এ চরণগুলো ধরেই বলতে হয়, প্রিয় এই লেখকের না থাকা এখন আর হয়ত পাঠকের চোখে বৃষ্টি নামায় না; তবে মনে ঝরায় অশ্রু। হৃদপিণ্ডে গেঁথে দেওয়া হিমু, রূপা, শুভ্রের অবয়বের মালিক প্রিয় হুমায়ূন এখনও যে বীরদর্পে হেঁটে বেড়ান বাঙালির মনে...।

আরও পড়ুন: সতেরোর একুশ, বায়ান্নর একুশ

বাংলাদেশ সময়: ১৮২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৭
আইএ/পিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।