ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বইমেলা

চেতনার টানে বইমেলায় জনস্রোত

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২০৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৯
চেতনার টানে বইমেলায় জনস্রোত বইমেলায় জনস্রোত, ছবি: শাকিল আহমেদ

বইমেলা থেকে: একটি দিন, একটি আয়োজন এতো শক্তি ছড়িয়ে দিতে পারে প্রাণে, সঞ্চারিত হতে পারে জনে জনে, একুশে ফেব্রুয়ারির বিকেলে অমর একুশে গ্রন্থমেলা না দেখলে তা বোঝা যেতো না!

সবচেয়ে বেশি জায়গা নিয়ে অনুষ্ঠিত হওয়া এবারের মেলার বিকেল যেনো কম হয়ে গিয়েছিল। বিকেলের পর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যে জনস্রোত আছড়ে পড়ে গ্রন্থমেলা প্রাঙ্গণে, তা লেখনি দিয়ে বর্ণনাতীত।

শুধু কবিগুরুর সঙ্গে ছন্দে ছন্দ মিলিয়ে বলা যায়- ‘তিল ঠাঁই আর নাহি রে...’।

বৃহস্পতিবার (২১ ফেব্রুয়ারি) যারা মেলায় এসেছিলেন, তারা সকলেই ফিরেছেন শোককে দুর্দমনীয় শক্তিতে পরিণত করে আর দুই মলাটে বন্দি বইয়ের ভালোবাসা নিয়ে। তাদের হৃদয়ে লেগেছিল একুশের চেতনা। সেই চেতনার সিঁড়ি বেয়ে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় নেমেছিল উন্মত্ত জোয়ার।

শহীদ মিনারে প্রভাতফেরি শেষে ভোর থেকেই মানুষের ভিড় জমতে শুরু করে অমর একুশে গ্রন্থমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। যেখানে নিত্য নতুন বই নিয়ে উপস্থিত ছিলেন সৃজনশীল প্রকাশকরা। পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়-স্বজন, তরুণ-তরুণী দল বেঁধে হাজির হয়েছিল বইমেলায়। বাবার কাঁধে চড়ে শিশুরাও এসেছিল সংস্কৃতির টানে, ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে।

রাজধানীর বাড্ডা থেকে এসেছিলেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা আজমল হক ও তার স্ত্রী। কথা হলে বললেন, বয়স হয়েছে, হাঁটা-চলা করতেও কষ্ট হয়। গাড়ি রেখে এসেছি সেই টিএসসিতে। সেখান থেকে হেঁটে হেঁটে শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলাম। যত কষ্টই হোক বছরের এ দিনটাতে ঘরে বসে থাকতে পারি না। তাই শহীদ মিনার থেকে চলে এলাম বইমেলাতে। কয়েকটা বই কিনবো। তারপর বাসায় ফিরবো।

একুশের শোক আর শ্রদ্ধায় এ দিন প্রায় সকলের বসনেই দেখা গেছে সাদাকালো পোশাক। একুশের দিনে মেলায় আগতদের মার্জিত পরিপাটি পোশাকে ছিল একুশের স্পষ্ট ছাপ। বর্ণমালা স্থান পায় কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীদের পোশাকে। ফুটে উঠে ভাষা শহীদদের হারানোর ব্যথা। অনেকে আবার লাল শাড়িও পরেন। আর তরুণীদের মাথায় ফুলের টায়রা। কেউ রঙতুলির আঁচড়ে হাতে, গালে আঁকেন বাংলা বর্ণমালার নানান অক্ষর। কেউবা গালে অঙ্কন করেন শুধুই ২১। বাদ যায়নি ছোট ছোট শিশুরাও। তাদের গালে-কপালে আঁকা জাতীয় পতাকা ও শহীদ মিনারের প্রতীক। বইমেলায় জনস্রোত, ছবি: শাকিল আহমেদতীব্র ভিড় ঠেলে কথা হয় বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে আগত রুহুল আমিন ও আন্তরিকা হকের সঙ্গে। মেয়ে লাবণ্য আর ছেলে নকিবকে নিয়ে মেলায় এসেছিলেন তারা। জানালেন, একুশে ফেব্রুয়ারির দিন বইমেলায় আসার মধ্যে একটা ভিন্ন অনুভূতি কাজ করে। তাই বাচ্চাদের নিয়ে চলে এসেছেন তারা।

লাবণ্য জানালো, হুমায়ূন আহমেদের ‘শ্রেষ্ঠ মিসির আলী’, ইমদাদুল হক মিলনের ‘সেরা দশ উপন্যাস’ ও জহির রায়হানের ভাষা আন্দোলনের ওপর রচিত উপন্যাস ‘আরেক ফাল্গুন’ কিনবে সে। আর ছোট্ট প্রীতি কিনবে পাখির বই। তবে বইয়ের সঙ্গে উপহার হিসেবে পাওয়া ট্যাটুতে বেশি আনন্দ ছিল তার!

মহান শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের দিনে মেলা প্রাঙ্গণে সকাল ৮টা থেকে সারাদিনই ছিল মানুষের ঢল। একদিকে শাহবাগের প্রজন্ম চত্বর, অন্যদিকে দোয়েল চত্বর। আরেক দিকে সেই নীলক্ষেত। সবদিক থেকেই মানুষ আসছিল দল বেঁধে। অনেক প্রবেশ পথ হওয়ায় দীর্ঘ সময় না হলেও, বেশ কিছুক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে তবেই প্রবেশ করতে হয় মেলা প্রাঙ্গণে। আর এতো ভিড়ে বই বিক্রিও নেহাত কম হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রকাশকরা। আবার অনেকেই বলেছেন, একুশে ফেব্রুয়ারির দিন মেলায় মানুষ যেভাবে এসেছে, সেভাবে বিক্রি হয়নি। তবে বিভিন্ন প্যাভিলিয়ন ও স্টল ঘুরে দেখা গেছে, মানুষ মেলায় যেমন এসেছে, তেমনিভাবে ভালো বিকিকিনিও চলেছে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৯
এইচএমএস/টিএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।