ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বইমেলা

পুলিশের হাতে সাহিত্যকর্মী লাঞ্ছিত, বইমেলাজুড়ে নিন্দা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১১৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২০
পুলিশের হাতে সাহিত্যকর্মী লাঞ্ছিত, বইমেলাজুড়ে নিন্দা প্রচ্ছদশিল্পী চারু পিন্টুকে লাঞ্ছিত করার সময় পুলিশকে ঘিরে প্রতিবাদ জানিয়েছেন লেখক-সাহিত্যিকরা।

গ্রন্থমেলা প্রাঙ্গণ থেকে: অমর একুশে গ্রন্থমেলায় শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) প্রচ্ছদশিল্পী ও লেখক চারু পিন্টুকে লাঞ্ছিত করেছে পুলিশ। তাৎক্ষণিক সেই ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন লেখক-সাহিত্যিকরা।

 

গ্রন্থমেলা প্রাঙ্গণে এ ঘটনার নিন্দা আর প্রতিবাদ ছিলো শনিবারও (২২ ফেব্রুয়ারি)। লেখক-সাহিত্যিকরা নিজেদের আলাপনে প্রতিবাদ জানিয়েছেন ওই সাহিত্যকর্মীকে লাঞ্ছিত করায়।

শুক্রবার বিকেলে মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে লিটলম্যাগ চত্বরে লাঞ্ছিত হন প্রচ্ছদশিল্পী ও লেখক চারু পিন্টু। শফিউল নামে এক পুলিশ কর্মকর্তা তাকে লাঞ্ছিত করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, লিটলম্যাগ চত্বরে ধূমপানের প্রস্তুতির সময় লেখক চারু পিন্টুর শার্টের কলার ধরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন শফিউল নামের পুলিশের এক কর্মকর্তা। এ সময় লেখক-প্রকাশক-শিল্পীদের অকথ্য ভাষায় গালাগালিও করেন ওই কর্মকর্তা। তার সঙ্গে রাসেলসহ আরও দুই-একজন পুলিশ কনস্টেবল ছিলেন। একপর্যায়ে সেখানে উপস্থিত লেখক, সম্পাদক ও শিল্পীরা এ ঘটনার তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানান।

এ বিষয়ে প্রচ্ছদশিল্পী চারু পিন্টু বাংলানিউজকে বলেন, শুক্রবার বিকেলে লিটলম্যাগ চত্বরে দুই মেয়ে ধূমপান করছিলেন। তাদের পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় তাদের মধ্যে বাতবিতণ্ডার ঘটনা ঘটে। এরপর আমার এক বন্ধু আমার হাতে সিগারেট দিয়ে সামনে চলে যায়। এ সময় এক পুলিশ সদস্য এসে আমাকে ধমক দিয়ে উঠেন। আমি এর প্রতিবাদ জানালে তিনি কলার ধরে আমাকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যেতে থাকেন।

তিনি বলেন, এ বিষয়ে শনিবার আমরা মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখবেন বলে আমাদের জানিয়েছেন। পুলিশের এ ঘটনার জন্য আমরা দুঃখপ্রকাশ করেছি।

এ বিষয়ে মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব জালাল আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, আমি ঘটনাটি শুনেছি। চারু পিন্টু ও অন্যান্যরা শনিবার আমার সঙ্গে দেখা করেছেন। আমি বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি।

তিনি বলেন, তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আগামীবারের বইমেলায় ‘স্মোকিং জোন’ রাখা হবে। তবে সেটি মেলা প্রাঙ্গণের বাইরে। বাংলা একাডেমির ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললেও, লেখক-প্রকাশক-পাঠকরা তীব্র নিন্দা জানাচ্ছেন এ ঘটনায়।

এ বিষয়ে জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির নির্বাহী পরিচালক মনিরুল হক বাংলানিউজকে বলেন, চারু পিন্টুর সঙ্গে পুলিশ যে অশোভন আচরণ করেছেন, তা নিন্দনীয়। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়। একজন বইপ্রেমীর সঙ্গে কিভাবে আচরণ করতে হবে, সেটি পুলিশ সদস্যরা জানেন না। তারা উদ্ধত আচরণ করছেন।

তিনি বলেন, বাংলা একাডেমি আমাদের বলেছিল, লেখক ও প্রকাশকদের জন্য আলাদা গেট থাকবে। কিন্তু সেটি রাখা হয়নি। পরিচয় দিয়ে প্রবেশ করতে চাইলেও, তারা বাজে ব্যবহার করেন।

ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশের স্বত্বাধিকারী জহিরুল আবেদীন জুয়েল বলেন, এটি খুবই খারাপ, একটি ঘটনা ঘটেছে। চারু পিন্টু যদি কোনো অপরাধ করে থাকেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারতো। কিন্তু পুলিশ তাকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যেতে পারেন না।

এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে শিশু-সাহিত্যিক পলাশ মাহবুব বলেন, এটা খুবই দুঃখজনক ও নিন্দনীয় ঘটনা ঘটেছে। বইয়ের মেলায় একজন প্রচ্ছদশিল্পীর সঙ্গে পুলিশ এমন ব্যবহার করতে পারে না। একজন সৃজনশীল, সংবেদনশীল মানুষের সঙ্গে কেমন ব্যবহার করতে হবে, সেটি পুলিশের জানা উচিত। এরপর যেন এমন ঘটনা আর না হয়, সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে।

এদিকে মেলা প্রাঙ্গণের বাইরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও প্রতিবাদ জানাচ্ছেন কবি-সাহিত্যিকরা।

ফেসবুকে লেখক ও আবৃত্তিশিল্পী শামসউজজোহা লিখেছেন- ‘...একাডেমি চত্বরে লিটলম্যাগ প্রাঙ্গণের প্রাণ। প্রতিদিন দীর্ঘ সময় ধরে থাকেন (চারু পিন্টু)। তাদের লিটলম্যাগ স্টল আছে করাতকল। আমার মনে হয় সব লিটল ম্যাগই তার আপন। সবাই তার স্বজন। আমরা তার স্বজন। এমন ডেডিকেটেড শিল্পী বইমেলার কত বড় প্রয়োজন? কে না জানেন? লেখক, প্রকাশক সবাই জানেন। মনোযোগী পাঠক জানেন। জানে। না শুধু পুলিশ। দুঃখজনক হলো চারুপিন্টুর মতো শিল্পীকে নিয়ে এত কথা বলতে হচ্ছে। তাকে গালি দিয়ে তুলে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। পুলিশ গায়ে পোশাক পরে এমন অনেক কাজ করেন যা লজ্জার। আপনাকে বাঁচাতে, লজ্জা ঢাকতে সদর দপ্তরে ক্লোজ করে নেওয়া হয়। সময় বুঝে আবার বাহিনীর রেগুলার ডিউটিতে পাঠিয়ে দেওয়া হয় নিশ্চয়। তাছাড়া এমন কাণ্ড বারবার ঘটাতে পারেন কেন? লজ্জা আপনার জন্য। বইমেলায় ডিউটি করতে আসেন কিন্তু কিভাবে লেখক, শিল্পী, প্রকাশকের সঙ্গে কথা বলতে হয় জানেন না। প্রটোকল দিতে হয় কাকে পুলিশ তাকে কোনোদিন চিনলো না। ’

চলচ্চিত্রকার রেজা ঘটক লিখেছেন, ‘কবি-লেখক-শিল্পী-প্রকাশকদের সঙ্গে ভালো আচরণ করার মত যোগ্যতা রয়েছে এমন পুলিশ কী আমাদের পুলিশ বাহিনীতে নাই? তাহলে বাংলা একাডেমি এমন অসভ্য পুলিশকে এ রকম একটি প্রাণের বইমেলায় দায়িত্ব দেয় কী করে? বইমেলায় ঢোকার সময় পুলিশ গায়ে হাত দিয়ে চেক করে। তাহলে গেটের মেটাল ডিটেকটরের কাজটা কী? আজকে প্রচণ্ড ভিড়ের মধ্যে গেটে পুলিশ কাউকে চেক করেনি কেন? তাহলে অন্য দিনগুলোতে চেক করার কারণ কী? বইমেলায় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সেটা তো এমন ভিড়েই আশংকা বেশি থাকে। অথচ আমরা দেখেছি, ভিড় বেশি হলে পুলিশ আর চেক করে না। কিন্তু ভিড় না থাকলে পুলিশের এমন বাজে আচরণ?’

রাহেল রাজীব লিখেছন, ‘চারু পিন্টু, আমরা ভাষাহীন। এ নীরবতাই সবচেয়ে বড় প্রতিবাদ। আমরা একত্র হতে পেরেছি কাল, আজকেও হবো। সরি, তাদের বলতেই হবে। ’

আরও পড়ুন>>আগামী গ্রন্থমেলায় থাকবে ‘স্মোকিং জোন’
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২০
ডিএন/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।