ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বইমেলা

সময় পিছিয়ে শারীরিক উপস্থিতিতে হবে বইমেলা

দীপন নন্দী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০২০
সময় পিছিয়ে শারীরিক উপস্থিতিতে হবে বইমেলা ফাইল ছবি

ঢাকা: ভার্চ্যুয়ালি নয়, শারীরিক উপস্থিতিতেই আয়োজিত হবে ২০২১ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলা। তবে প্রথা অনুযায়ী, পহেলা ফেব্রুয়ারি থেকে এবারের বইমেলা শুরু হচ্ছে না।

প্রাথমিকভাবে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে এবারের বইমেলা শুরুর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তবে দেশের করোনা পরিস্থিতির ওপর সবকিছু নির্ভর করছে।

গত বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) বইমেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান বাংলা একাডেমির নির্বাহী পরিষদের বৈঠকে ২০২১ সালের অমর একুশে গ্রন্থমেলা সাময়িকভাবে স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই সঙ্গে করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় ভার্চ্যুয়ালি বইমেলার আয়োজনেরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

গণমাধ্যমে এ খবর প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন লেখক-সাহিত্যিকরা। বাংলা একাডেমির এ সিদ্ধান্তকে ‘একতরফা’ ও ‘স্বেচ্ছাচারী’ বলে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেন প্রকাশকরা।

এ প্রেক্ষিতে রোববার (১৩ ডিসেম্বর) সকালে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজীর সঙ্গে বৈঠকে বসেন প্রকাশকদের দুই সমিতি— বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি এবং বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির নেতারা।

বৈঠক শেষে একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী গণমাধ্যমকে বলেন, আসন্ন অমর একুশে গ্রন্থমেলা বাতিলের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আমরা আমাদের নির্বাহী পর্ষদের বৈঠকে আলোচনার ভিত্তিতে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কাছে কিছু প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। যার মধ্যে রয়েছে, বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে শারীরিক উপস্থিতিতে বইমেলা স্থগিত করা এবং বইমেলার আনুষঙ্গিক আয়োজন ভার্চ্যুয়ালি করার প্রস্তাব দিয়েছি।

তিনি বলেন, প্রকাশকরা শারীরিক উপস্থিতিতে বইমেলা আয়োজনের দাবি জানিয়েছেন। আমি তাদের কাছে কীভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বইমেলা আয়োজন করা যায় সেটির একটি লিখিত প্রস্তাবনা চেয়েছি। তারা সেটি পাঠালে আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করব। একই সঙ্গে প্রকাশকদের বলেছি, বইমেলা আয়োজনের জন্য বাংলা একাডেমিকে কমপক্ষে দুই মাস সময় দিতে হবে।

এ বিষয়ে জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ভার্চ্যুয়ালি নয়, শারীরিক উপস্থিতেই বইমেলা অনুষ্ঠিত হবে। সেটি ফেব্রুয়ারি মাসেই অনুষ্ঠিত হবে। আমরা ২১ ফেব্রুয়ারির আগেই মেলা শুরু করতে চাই। আমরা আমাদের এসব প্রস্তাবনা বাংলা একাডেমিকে লিখিতভাবে পাঠাব।

বৈঠকে উপস্থিত এক প্রকাশক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, আমরা শারীরিক উপস্থিতিতে মেলা আয়োজনের বিষয়ে একমত হয়েছি এবং সেটি ফেব্রুয়ারি মাসেই। আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে, একুশে ফেব্রুয়ারির আগে মেলা শুরু করার, যা চলবে মাসব্যাপী। এ বিষয়ে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক আমাদের কাছে লিখিত প্রস্তাবনা চেয়েছেন কীভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বইমেলা আয়োজন করা যায়, সে বিষয়ে।

কী কী থাকছে প্রকাশকদের প্রস্তাবনায়— জানতে চাইলে ওই প্রকাশক নেতা বলেন, মাস্ক ক্রেতা-বিক্রেতা সবার জন্য বাধ্যতামূলক থাকবে। সেই সঙ্গে ক্রেতা এবং বিক্রেতা উভয়কেই আমরা গ্লাভস ব্যবহার করাটাও বাধ্যতামূলক করতে চাই। একই সঙ্গে মেলার প্রবেশ মুখ তো বটেই প্রাঙ্গণের বিভিন্ন স্থানে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখা হবে। মেলায় কোনো প্রকার খাবারের স্টল যেন না বসে সে বিষয়েও আমরা প্রস্তাব দেব।

রোববার সকালে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক স্বাক্ষরিত একটি প্রস্তাবনাপত্র সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। চিঠিটি সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর পাঠানো হয়।

চিঠিতে একাডেমির মহাপরিচালক তাদের প্রস্তাবনায় লিখেছেন— সম্প্রতি দেশে কোভিড-১৯ মহামারি পরিস্থিতির অবনতির পরিপ্রেক্ষিতে অমর একুশে বইমেলা ২০২১ সাময়িক স্থগিত করা হলো। পরিস্থিতির উন্নতি হলে উপযুক্ত সময়ে বাংলা একাডেমি বইমেলার আয়োজন করবে। তবে অমর একুশে উদযাপনের অংশ হিসেবে একাডেমি ভার্চ্যুয়াল অমর একুশে বইমেলার আয়োজন করতে পারে। এতে করে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, একুশের সেমিনার-আলোচনা, গ্রন্থ উন্মোচন, লেখক বলছি-সহ অন্যান্য অনুষ্ঠান আয়োজন ভার্চ্যুয়ালি হতে পারবে। একাডেমির নির্বাহী পরিষদের সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ বইমেলা ভার্চ্যুয়ালি আয়োজনের বিষয়ে বাংলা একাডেমিকে সার্বিক পরামর্শ দেবেন।

বাংলা একাডেমির পাঠানো চিঠির বিষয়ে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় এখনও আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করেনি। তবে রোববার বিকেলে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বাংলানিউজকে শারীরিক উপস্থিতিতেই বইমেলা আয়োজন করা হবে বলে নিশ্চিত করেন।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, শারীরিক উপস্থিতিতেই অমর একুশে বইমেলা অনুষ্ঠিত হবে। মেলা ভার্চ্যুয়ালি অনুষ্ঠিত হবে না। তবে সময় পিছিয়ে দেওয়া হতে পারে। করোনা পরিস্থিতির উপরে এসব কিছু নির্ভর করছে। আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে মেলা যেন ফেব্রুয়ারিতে আয়োজন করা যায়। তবে সবার আগে মানুষের জীবন। সেটিকে মাথায় রেখেই আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বইমেলা আয়োজন নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা এখনও চলছে। বাংলা একাডেমির সিদ্ধান্তকে পুর্নবিবেচনার দাবি তুলেছেন প্রকাশক ও লেখকরা।

এ বিষয়ে কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক বলেন, আমি মনে করি, শীতকাল পর্যন্ত করোনার প্রকোপ থাকবে। সে ক্ষেত্রে বসন্তের প্রথম দিন থেকে মেলা শুরু হতে পারে। ইতোমধ্যে আমরা জেনেছি, দেশের ৭০ শতাংশ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। শীতকাল যেতে যেতে ৯০ শতাংশ মানুষ আক্রান্ত হয়ে যাবেন। সে সঙ্গে মানুষের মধ্যে হার্ড ইউমিনিটি তৈরি হয়ে যাবে। তাই বসন্তকালে সরাসরি মেলা শুরু হতে পারে। এবং সেটি ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন পর্যন্ত আয়োজন করা যেতে পারে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, ভার্চ্যুয়াল মেলা কোনো মেলা হতে পারে না।

বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির নির্বাহী পরিচালক ও অনন্যা প্রকাশনীর কর্ণধার মনিরুল হক বাংলানিউজকে বলেন, করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলা ভার্চ্যুয়ালি অনুষ্ঠিত হয়েছিল, যা সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়। লন্ডন ও নিউইয়র্কেও ভার্চ্যুয়ালি বাংলাদেশ বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেখানেও সাফল্য আসেনি। সুতরাং ভার্চ্যুয়ালি মেলার সিদ্ধান্তটি সঠিক নয়। এজন্যই আমরা শারীরিক উপস্থিতিতেই বইমেলার আয়োজন চাচ্ছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০২০
ডিএন/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।