ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বাজেট

সেরা বাজেট বরাদ্দে মুহিত, সংখ্যায় সাইফুর

বাজেট রিপোটিং টিম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪২ ঘণ্টা, জুন ৫, ২০১৪
সেরা বাজেট বরাদ্দে মুহিত, সংখ্যায় সাইফুর

ঢাকা: স্বাধীন বাংলাদেশে ৪৩তম বাজেট পেশ হয়ে গেলো। সেই ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে সাত কোটি বাঙালির জন্য ৭৮৬ কোটি টাকার বাজেট পেশ হয়।

৪৩ বছরে দেশের জনসংখ্যা বেড়েছে ২২৮ শতাংশ। আর বাজেট বরাদ্দ বেড়েছে ৩১৮০ শতাংশ।

দীর্ঘ এই সময়ে দেশ উন্নয়নের পথে হেঁটেছে। অনুন্নত দেশের তকমা মুছে উন্নয়নশীল দেশ হয়ে এখন এশিয়ার ইমার্জিং টাইগার। বাংলাদেশ একসময় উন্নত দেশ হবে সে কথা এখন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের ভবিষ্যতবানীতে প্রায়শই শোনা যায়। ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে উন্নত দেশে পরিণত করতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে। জাতীয় বাজেট বরাদ্দে একেকটি মাইলফলক সে নির্দেশনাই দেয়।

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার সাহসী বাজেট দিচ্ছে এবং তার বাস্তবায়ন করছে তা গত পাঁচ ছয় বছরে কারো নজর এড়ায়নি। বাংলাদেশে বাজেটে অর্থ বরাদ্দের যে ধারাবাহিক অগ্রগতি তা এড়িয়ে বড় ধাপে বাজেট বরাদ্দ আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই দেখা যায়।

২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর প্রথম বছেরেই লক্ষ কোটি টাকার বাজেট দেন বর্তমান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এরপর পাঁচ বছরে সেই বাজেট এখন ২৫০ শতাংশ বেড়ে ২ লাখ ৫০ হাজার কোটিতে দাঁড়িয়েছে। প্রতি বছরই গড়ে ২৫ থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ বাড়াচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকার। এক বছরের ব্যবধানে সর্বোচ্চ ৩৩ হাজার কোটি ট‍াকা বাজেট বরাদ্দ বাড়ানোর রেকর্ডটি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের। এর আগে বিএনপির শাসনামলে এম সাইফুর রহমানের হাতে এক বছরের ব্যবধানে সর্বোচ্চ ৯ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ানোর রেকর্ড রয়েছে।

২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসার পর হঠাৎই এক বছরে ৩০ হাজার কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ বাড়ানো হয়। ২০০৬-০৭ অর্থ বছরে এম সাইফুর রহমান ৬৯৭৪০ কোটি টাকার বাজেট দেওয়ার পর ২০০৭-০৮ অর্থ বছরে মির্জা আজিজুল ইসলাম ৯৯৯৬২ কোটি টাকার বাজেট দেন। স্বাধীনতার পর এটিই ছিলো পর পর দুই বছরের বাজেটে সবচেয়ে বেশি ব্যবধান। এরপর আওয়ামী লীগ সরকার এসে এই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে বছর বছর বাজেট ব্যবধান বাড়াতে থাকে। ২০১০-১১ অর্থ বছরে আগের বছরের চেয়ে ১৯ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ বাড়ায়। পরের অর্থ বছরে ব্যবধান বেড়ে যায় ৩৩ কোটি টাকা, ১৯১২-১৩ অর্থ বছরে বাড়ে আগের বছরের চেয়ে ২৬ হাজার কোটি টাকা। পরের বছর বাড়ে ৩০ হাজার কোটি টাকা। আর এবছর বাড়ছে ২৮ হাজার কোটি টাকা।

বাজেট পেশের দিক থেকে বিএনপির হয়ে প্রয়াত এম সাইফুর রহমানের রেকর্ডটি সবচেয়ে বড়। তিনি বাজেট দিয়েছেন ১২টি। এর ১০টি খালেদা জিয়ার শাসনামলে। এবং বাকি দুটির একটি জিয়াউর রহমানের ও অপরটি বিচারপতি এম এ সাত্তারের শাসনামলে। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছেন আওয়ামী লীগের বর্তমান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল ‍আবদুল মুহিত। এই নিয়ে তিনি বাজেট দিলেন ৮টি। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের হয়ে ৬টি এবং জাতীয় পার্টির হয়ে ২টি। তৃতীয় সর্বোচ্চ বাজেট দেন আওয়ামী লীগের প্রয়াত অর্থমন্ত্রী এসএএমএস কিবরিয়া। তিনি ছয়টি বাজেট পেশ করেন। এছাড়া চতুর্থ সর্বোচ্চ হিসেবে চারবার বাজেট দিয়েছেন জাতীয় পার্টির এরশাদ সরকারের হয়ে অর্থমন্ত্রী এম সায়েদুজ্জামান। দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ও পরে অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ বাজেট পেশ করেন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম তিন বছর। এছাড়াও তিন বছর জাতীয় বাজেট পেশ করেন জিয়াউর রহমান। দুই বার সামরিক শাসক প্রধান হিসেবে, একবার রাষ্ট্রপতি হিসেবে এই বাজেট দেন তিনি। এছাড়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা হিসেবে দুইবার বাজেট দেন মির্জা আজিজুল ইসলাম। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অপর অর্থ উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদুদ্দিন মাহমুদ একটি বাজেট দেন। এছাড়াও  যারা একটি করে বাজেট দেন তারা হচ্ছেন মেজর জেনারেল (অব.) মুনিম, ড. এম এন হুদা ও ড. আজিজুর রহমান।

স্বাধীনতার পর তাজউদ্দিন আহমেদের হাতেই বাজেট ১০ ডিজিট ছাড়িয়ে ১১ ডিজিটে অর্থাৎ হাজার কোটির কোটায় আসে। আর তা লক্ষ কোটির কোটায় নিয়ে যান আওয়ামী লীগের বর্তমান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তার বাজেটগুলোক অর্থনীতিবিদরা সাহসী বাজেট বলতে পছন্দ করেন। তবে সমালোচকরা এই বিশাল বাজেটকে উচ্চাভিলাসী বলতেও ছাড়েন না।

একনজরে ৪৩টি ‍জাতীয় বাজেট-
২০১৪-১৫ আবুল মাল আবদুল মুহিত ২ লাখ ৫০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা
২০১৩-১৪ আবুল মাল আবদুল মুহিত ২ লাখ ২২ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা
২০১২-১৩ আবুল মাল আব্দুল মুহিত ১৯১,৭৩৮ কোটি টাকা।
২০১১-১২ আবুল মাল আব্দুল মুহিত ১৬৫,০০০ কোটি টাকা
২০১০-১১ আবুল মাল আব্দুল মুহিত ১৩২,১৭০ কোটি টাকা
২০০৯-১০ আবুল মাল আব্দুল মুহিত ১১৩,৮১৫ কোটি টাকা
২০০৮-’০৯ মির্জা আজিজুল ইসলাম ৯৯৯৬২ কোটি টাকা
২০০৭-’০৮ মির্জা আজিজুল ইসলাম ৯৯৯৬২ কোটি টাকা
২০০৬-’০৭ এম সাইফুর রহমান ৬৯৭৪০ কোটি টাকা
২০০৫-’০৬ এম সাইফুর রহমান ৬১০৫৮ কোটি টাকা
২০০৪-’০৫ এম সাইফুর রহমান ৫৭২৪৮ কোটি টাকা
২০০৩-’০৪ এম সাইফুর রহমান ৫১৯৮০ কোটি টাকা
২০০২-’০৩ এম সাইফুর রহমান ৪৪৮৫৪ কোটি টাকা
২০০১-’০২ এসএএমএস কিবরিয়া ৪২৩০৬ কোটি টাকা
২০০০-’০১ এসএএমএস কিবরিয়া ৩৮৫২৪ কোটি টাকা
১৯৯৯-’০০ এসএএমএস কিবরিয়া ৩৪২৫২ কোটি টাকা
১৯৯৮-’৯৯ এসএএমএস কিবরিয়া ২৯৫৩৭ কোটি টাকা
১৯৯৭-’৯৮ এসএএমএস কিবরিয়া ২৭৭৮৬ কোটি টাকা
১৯৯৬-’৯৭ এসএএমএস কিবরিয়া ২৪৬০৩ কোটি টাকা
১৯৯৫-’৯৬ এম সাইফুর রহমান ২৩১৭০ কোটি টাকা
১৯৯৪-’৯৫ এম সাইফুর রহমান ২০৯৪৮ কোটি টাকা
১৯৯৩-’৯৪ এম সাইফুর রহমান ১৯০৫০ কোটি টাকা
১৯৯২-’৯৩ এম সাইফুর রহমান ১৭৬০৭ কোটি টাকা
১৯৯১-’৯২ এম সাইফুর রহমান ১৫৫৮৪ কোটি টাকা
১৯৯০-’৯১ মেজর জেনারেল (অব.) মুনিম ১২৯৬০ কোটি টাকা
১৯৮৯-’৯০ ড. ওয়াহিদুল হক ১২৭০৩ কোটি টাকা
১৯৮৮-’৮৯ মেজর জেনারেল (অব.) মুনিম ১০৫৬৫ কোটি টাকা
১৯৮৭-’৮৮ এম সায়েদুজ্জামান ৮৫২৭ কোটি টাকা
১৯৮৬-’৮৭ এম সায়েদুজ্জামান ৮৫০৪ কোটি টাকা
১৯৮৫-’৮৬ এম সায়েদুজ্জামান ৭১৩৮ কোটি টাকা
১৮৪-’৮৫ এম সায়েদুজ্জামান ৬৬৯৯ কোটি টাকা
১৯৮৩-’৮৪ এ এম এ মুহিত ৫৮৯৬ কোটি টাকা
১৯৮২-’৮৩ এ এম এ মুহিত ৪৭৩৮ কোটি টাকা
১৯৮১-’৮২ এম সাইফুর রহমান ৪৬৭৭ কোটি টাকা
১৯৮০-’৮১ এম সাইফুর রহমান ৪১০৮ কোটি টাকা
১৯৭৯-’৮০ ড. এম এন হুদা ৩৩১৭ কোটি টাকা
১৯৭৮-’৭৯ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ২৪৯৯ কোটি টাকা
১৯৭৭-’৭৮ লে. জেনারেল জিয়াউর রহমান ২১৮৪ কোটি টাকা
১৯৭৬-’৭৭ মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ১৯৮৯.৮৭ কোটি টাকা
১৯৭৫-’৭৬ ড. আজিজুর রহমান ১৫৪৯.১৯ কোটি টাকা
১৯৭৪-’৭৫ তাজউদ্দিন আহমেদ ১০৮৪.৩৭ কোটি টাকা
১৯৭৩-’৭৪ তাজউদ্দিন আহমেদ ৯৯৫ কোটি টাকা
১৯৭২-’৭৩ তাজউদ্দিন আহমেদ ৭৮৬ কোটি টাকা

 

'বাজেট ২০১৪-২০১৫' পড়তে ক্লিক করুন

 

বাংলাদেশ সময় ১৬৪২ ঘণ্টা, জুন ০৫, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।