ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

দুর্বল পাখিদের রক্ষক সাহসী ‘কালা ফিঙে’

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৫ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০১৯
দুর্বল পাখিদের রক্ষক সাহসী ‘কালা ফিঙে’ ভীষণ লড়াকু পাখি ‘কালা ফিঙে’। ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন

মৌলভীবাজার: প্রতিটি প্রাণীই চায় বেঁচে থাকার নিরাপত্তা। সুনিশ্চিত করতে চায় প্রকৃতিতে নিজেদের টিকে থাকা। আর সেটাই প্রাণীজগতের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ঠিক যেমন বৈশিষ্ট্য- দুর্বল প্রাণীর উপর সবল প্রাণীদের আঘাত নিত্য ও অবধারিত। 

আমাদের চিরচেনা পাখিদের একটি ‘কালা ফিঙে’। আমাদের প্রতিবেশী সে।

এদিক-সেদিক চোখ মেললেই এই পাখিটির দেখা মেলে। প্রতিনিয়তই সে ঘুরে বেড়ায় আমাদের বাসা-বাড়ির সামনে, বৈদ্যুতিক তারে, বিস্তীর্ণ ধানক্ষেতে, ছোটখাটো ঝোপঝাড় থেকে শুরু করে বনপাহাড়ে। কোথায় নেই সে।  

২৮ সেন্টিমিটারের চকচকে কালো দেহের ফিঙের ইংরেজি নাম Black Drongo এবং বৈজ্ঞানিক নাম Dicrurus macrocercus। কালা ফিঙে তুখড় লড়াকু পাখি। গ্রামাঞ্চলের মানুষেরা এই পাখিটিকে ‘পাখির রাজা’ বলেন।  

বাংলাদেশের প্রখ্যাত পাখি গবেষক, লেখক ও বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ইনাম আল হক বাংলানিউজকে বলেন, অনেক সাহসী পাখি ‘কালা ফিঙে’। কারণ হলো সে অনেক বড় পাখিকে তাড়া করে। ও যে এলাকায় থাকে ওর থেকে দশগুণ বড় এবং ওজনে বিশগুণ বড় পাখিকে সে সব সময় তাড়া করে সরিয়ে দিতে পারে। বিশেষ করে ও যদি বাসা করে তখন সব পাখিকেই সে তাড়া করে। শুধু তাড়া করলেই হয় না; তাড়া করে সে জিতেও যায়।  তাতে কি হয়– ওর আশেপাশে অন্য দুর্বল পাখিরা যেমন- বুলবুল, ঘুঘু ওরা বাসা করে। কারণ ওরা জানে এখানে কোনো শত্রু আসবে না। কালা ফিঙে এত্ত ভয়ংকরভাবে তাড়া করবে যে, বিড়াল-কুকুর পর্যন্ত ওর তাড়া খেয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য। ভীষণ লড়াকু পাখি ‘কালা ফিঙে’।  ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপনফিঙে ও শিকারি পাখিদের বিশ্লেষণ করে তিনি বলেন, এটার বড় কারণ হলো- কালা ফিঙের নখরগুলো খুব তীক্ষ্ম। সাধারণত আপনি দেখবেন- শিকারি পাখিগুলোর নখ খুব তীক্ষ্ম ও শক্তিশালী হয়। কালা ফিঙে কিন্তু শিকারি পাখি নয়। ও তো মুখ দিয়ে শিকার ধরে। শিকারি পাখি হলো যারা পা দিয়ে শিকার ধরে খায়। আমাদের দেশের শিকারি পাখিরা হলো- ঈগল, বাজ, পেঁচা প্রভৃতি। এদের পায়ের নখর অত্যন্ত শক্ত। আপনি এদের হাত দিয়ে ধরলে এদের কামড়ে আপনার ক্ষতি হবে না, কিন্তু সে যদি নখর দিয়ে আপনাকে ধরে তাহলে আপনার হাতের চামড়া ছিঁড়ে যাবে। ফিঙে শিকারি পাখি নয়, কিন্তু ওর নখর অত্যন্ত শক্তিশালী। ওই জন্যে ওর একটা বড় সুবিধা আছে- ও যদি তাড়া করে পায়ের নখ দিয়ে ধরে তাহলে বড় পাখিদের বড় ক্ষতি করে ফেলবে। তাই তারা ফিঙের তাড়া খেয়ে পালায়।

ইনাম আল হক আরো বলেন, ফিঙের ঠোঁটেও শক্তি আছে; আর নখে তো আছেই। আমরা যেহেতু পাখি গবেষণার কাজে ওদের ধরি তাই আমরা এ সম্পর্কে ভালো জানি। ফিঙে ধরলেই হাত রক্তাক্ত হয়ে যাবে। কিংবা একটা বুলবুল ধরলে বা ঘুঘু ধরলে কিছুই হবে না। কারণ তাদের পায়ে নখরের শক্তি নেই। ফিঙে ধরলেই খুব সাবধান থাকবেন- একদম ছিঁড়ে ফেলবে আপনার হাত। আপনার হাতের মাংসের মধ্যে তার নখ ঢুকে গেলে বের কথা কঠিন হবে এবং সে এক মুহূর্তেই ওর তীক্ষ্ম নখর আপনার হাতের ঢুকিয়ে ফেলবে। ভীষণ লড়াকু পাখি ‘কালা ফিঙে’।  ছবি: বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন ‘তীক্ষ্ম, শক্তিশালী ও সরু নখরের অধিকারী বলেই ফিঙে বহু বড় বড় পাখিকে তাড়া করে পশুকেও ক্ষত-বিক্ষত করতে পারে। তাই সবাই ভয় পায় ওকে। ফলে ফিঙে যেখানে বাসা করে ওর আশেপাশে অপেক্ষাকৃত দুর্বল পাখিরাও লুকিয়ে বাসা করে। কিন্তু ফিঙে প্রকাশ্যে মাচায় বাসা করে। ফিঙের বাসা দেখবেন খোলা জায়গায় হয়। কারণ ও কাউকেই ভয় পায় না। রাত্রিবেলা নিশাচর প্রাণী যেমন- গন্ধগোকুল, সাপসহ অন্য প্রাণীরাও ওর বাসায় দিকে এলে তাদেরও সে তাড়া ভীষণভাবে তাড়া করতে ভয় পায় না।  

গ্রামাঞ্চলের মানুষ কিন্তু ফিঙে পাখিকেই ‘পাখির রাজা’ বলে থাকেন। কারণ মানুষ দেখেছে যে- ফিঙে তার থেকে অনেক বড় পাখিদের তাড়া করে নিয়ে যেতে সক্ষম। তাই তার সাহস থেকে এমন নামটি দেওয়া। আবার অন্য পাখিরাও এটা ভালোই জানে যে, ফিঙে আশেপাশে থাকলে নিরাপদে থাকা যাবে বলে জানান পাখি বিজ্ঞানী ইনাম আল হক।  

বাংলাদেশ সময়: ১০২৫ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০১৯ 
বিবিবি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।