বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও পিরোজপুরসহ উপকূলীয় জেলেদের জীবিকা চলে বঙ্গোপসাগরে ইলিশ শিকার করে। উত্তাল ঢেউয়ের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকা এসব জেলের দুর্দশার তাই অন্ত নেই।
উপকূলের জেলে পল্লী ঘুরে: জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্রে ইলিশ শিকারে ব্যাস্ত জেলেদের প্রতিনিয়ত নানামুখী সংকটের মুখোমুখী হতে হয়। এর মধ্যে প্রধান সমস্যা দস্যু। বিভিন্ন দস্যু বাহিনীর উৎপাতে দিশেহারা উপকূলের জেলেরা দস্যু নির্মূলে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ চান।
দেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান এই খাতটিকে সুরক্ষিত করা না গেলে মৎস্য শিল্প হুমকির মুখে পড়বে বলেও মনে করেন তারা। বিভিন্ন সময় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে অনেক দস্যু নিহত ও আটক হলেও সাগরে কমছে না দস্যু বাহিনীর উৎপাত। সেই সঙ্গে রয়েছে বিদেশি ট্রলার আতঙ্ক।

undefined
র্যাব-৮ বরিশাল সূত্রে জানা গেছে, দস্যুতা নির্মূলে ২০০৬ সাল থেকে ২০১৫ সালের জুন মাস পর্যন্ত ৫৯টি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে র্যাব-৮। এতে ১৭ বাহিনী প্রধানসহ ৭৪ জন দস্যু নিহত হন। এসময় উদ্ধার করা হয় ৪০৪টি বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র ও পাঁচ হাজার ৫৯৯ রাউন্ড গোলাবারুদ। এসব অভিযানে ৫৩ দস্যুকে আটক করা হয়। এছাড়া দস্যুদের কবল থেকে উদ্ধার করা হয় ৫৬ জন অপহৃত জেলেকে।
কিন্তু একটি দস্যু বাহিনীর প্রধান ধরা পড়লে বা নিহত হলে বাহিনীর সদস্যরা নতুন করে এক বা একাধিক বাহিনী তৈরি করে। সমুদ্রে তাদেরই রাজত্ব। আর জেলেরা যেন নির্যাতিত প্রজা।
সুন্দরবন ও বঙ্গোপসাগরে দস্যু বাহিনীগুলো এখনো সক্রিয়। তাই একের পর এক অপারেশন চললেও কমেনি দস্যুতা। সুন্দরবন এখনো দস্যুদের দখলে। প্রতিনিয়ত তাদের চাঁদা দিয়েই জেলেদের মাছ ধরতে যেতে হয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সুন্দরবনের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত নিয়ন্ত্রণ করে প্রায় এক ডজন দস্যুবাহিনী। চাঁদাবাজি আর অপহরণই তাদের প্রধান কাজ। সুন্দরবন ছাড়িয়ে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত তাদের দৌরাদ্ম্য।
এদের ধরতে প্রতিনিয়ত চলছে র্যাব, কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর অভিযান। তারপরও ট্রলার ডাকাতি কমছে না।

undefined
দস্যুদের চাঁদাবাজি ও নির্যাতনের কারণে অনেক ব্যবসায়ী ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছেন। আর যারা ব্যবসা করছেন তারা সাগর পাড়ে ও সুন্দরবনে র্যাব ক্যাম্প স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন।
বরগুনা সদর উপজেলার জেলে আউয়াল বাংলানিউজকে বলেন, কোস্টগার্ডের উপরে মোগো ভরসা নাই, মোরা র্যাবের ক্যাম্প চাই। র্যাবই পারবে মোগো নিরাপত্তা দিতে।
বরগুনা জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, বঙ্গোপসাগর সংলগ্ন সুন্দরবনের বিভিন্ন পয়েন্টে র্যাবের অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন ও গভীর সমুদ্রে কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর টহল জোরদার করে এই মৎস্য খাতের সুরÿার ব্যবস্থা সরকারকেই করতে হবে।
এ বিষয়ে র্যাব-৮ এর উপ-অধিনায়ক মেজর আদনান বাংলানিউজকে বলেন, র্যাব-৮ এরই মধ্যে দস্যুতা নির্মূলে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এছাড়া র্যাব-৮ এর পক্ষ থেকে দুবলার চরে ও র্যাব-৬ এর পক্ষ থেকে গেওয়াখালিতে দু’টি ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে।

undefined
আরো ২টি কোস্টাল ব্যাটালিয়ান করার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।
অন্যদিকে, বিদেশি ট্রলার আতঙ্কে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে পারেন না জেলেরা। তাই প্রতিটি ট্রলারে ওয়্যারলেসের ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছেন তারা। ওয়্যারলেসের মাধ্যমে সম্মিলিতভাবে যে কোনো বিপদ মোকাবেলা করা সম্ভব হবে।
এ বিষয়ে বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বঙ্কিম চন্দ্র বিশ্বাস বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিটি ট্রলারে ওয়্যারলেস দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে।
শিগগিরই সব ট্রলারে ওয়্যারলেস সুবিধা দেওয়া সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ০১৪০ ঘণ্টা, জুলাই ২৮, ২০১৫
এসআই/এটি
** হেই যে গেলো আর আইলো না
** বিদেশি ট্রলার আতঙ্ক!
** গভীর সমুদ্রে মেলে না প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস
** দস্যুদের কার্ডেও নেই জীবনের নিশ্চয়তা
** দস্যু ভয় তবু যেতে হয়
** ঋণ-দাদনে দিশেহারা জীবন