ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

উপকূল থেকে উপকূল

উপকূলের জীবন

নিলুফা এখন স্কুলে যায়!

শফিকুল ইসলাম খোকন, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১, ২০১৫
নিলুফা এখন স্কুলে যায়! নিলুফা

হাজারো সংকটে ভরা উপকূলের শৈশব-কৈশর। এখানকার জনপদে প্রত্যেকের, বিশেষ করে মেয়েদের শৈশব-কৈশরের অপরিহার্য বিষয় অপুষ্টি আর অশিক্ষা।

কাঁধে বইয়ের ব্যাগের বদলে বয়ে বইতে হয় সংসারের ঘানি। অপরিণত বয়সেই হতে হয় মা। জাতীয় কন্যা শিশু দিবসে উপকূলের প্রান্তিক জনপদের মেয়ে শিশুদের নিয়ে পাথরঘাটা উপজেলা করেসপন্ডেন্ট শফিকুল ইসলাম খোকনের তিন পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের  তৃতীয় পর্বঃ

উপকূলের প্রান্তিক জনপদ ঘুরে: পাথরঘাটা কে এম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী নিলুফা। ২০১২ সালের ৩ নভেম্বর বিদ্যালয় থেকে বাড়ি যাওয়ার পথে চোখ বেঁধে মোটরসাইকেলে তুলে অপহরণ করে নিয়ে যান বখাটে প্রতিবেশী জুয়েল।

অপহরণের পর মুন্সিরহাটের মোশারফ হোসেনের বাড়িতে আটকে রাখেন নিলুফাকে। প্রায় সাড়ে চার মাস পর জুয়েলের বাড়িতেই আশ্রয় হয় নিলুফার। তাকে বিয়ের আশ্বাস দেওয়া হয়। কিন্তু এ সময় জুয়েলের মাসহ পরিবারের সদস্যরা নিলুফার ওপর অমানসিক নির্যাতন চালান।

জুয়েলের বাড়িতে নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে বাবারবাড়িতে আশ্রয় চায় নিলুফা।
বাবার বাড়ি পাথরঘাটা উপজেলার সদর ইউনিয়নের নিজলাঠিমারা গ্রামে। দিনমজুর সুলতান সাজ্জালের তিন সন্তানের মধ্যে নিলুফা ছোট।

বাবার বাড়িতে আশ্রয় মেলেনা নিলুফার। আবারো ফিরে আসে জুয়েলের কাছে। জুয়েল নিলুফাকে ঢাকায় নিয়ে গিয়ে সংসার করবে বলে কাকচিড়া লঞ্চঘাটে নিয়ে যান। সেখানে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বসিয়ে রেখে পালিয়ে যান জুয়েল।

অপেক্ষার যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পেতে আত্মহননের পথ বেছে নেয় নিলুফা। নদীতে ঝাঁপ দেয় সে। পার্শ্ববর্তী লোকজন তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় নারী নেত্রী ফাতিমা পারভীনকে খবর দেয়।

তিনি বিষয়টি জানালে কয়েকজন সাংবাদিক ও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সুশীলনের ম্যানেজার ইসমাইল হোসেন নিলুফাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। দায়িত্বরত চিকিৎসক জানান, নিলুফা তিনমাসের অন্তঃসত্ত্বা। তারপর শুরু হয় নিলুফার জীবন যুদ্ধ। থানায় মামলা দায়ের দায়ের করা হয়। মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়।

মানববন্ধন কর্মসূচি পালনের পর পুলিশ তৎপর হয়ে ওঠে আসামিদের গ্রেফতারের জন্য। কিছুদিন পর জুয়েলকে ঝালকাঠি থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। দীর্ঘদিন কারাভোগের পর আসামিরা জামিনে মুক্তি পায়।

মামলা দায়েরের পাঁচ মাস পর মৃত কন্যা সন্তানের জন্ম দেয় নিলুফা। কান্নায় ভেঙে পড়ে সে। মেয়েকে যেন জুয়েলের বাড়িতেই দাফন করা হয় -এমন দাবি করে সে। শেষ পর্যন্ত দাফন হয় জুয়েলের বাড়িতেই। তারপর নিলুফার আরেক জীবনের পথচলা শুরু হয়।

স্থানীয় মানবাধিকার কর্মী এবং সুশীলনের সহায়তায় চলতি বছরের জানুয়ারিতে পাথরঘাটা কে এম মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভোকেশনালের নবম শ্রেণিতে আবারো ভর্তি হয় নিলুফা।

নিলুফার জানায়, আগের জীবন ভুলে গেছে সে। এখন নতুন করে তার জীবন গড়তে চায়। লেখাপড়া করে নিজের পায়ে নিজে দাঁড়াতে চায়। সে বলে, আমি বুঝিয়ে দিতে চাই নারীরা অবলা নয়। নারীরাও পারে যুদ্ধ করতে, আমি আমার জীবন যুদ্ধে হারিনি। হেরেছে ওরা।

সুশীলনের প্রোগ্রাম ম্যানেজার কিবরিয়া বাংলানিউজকে বলেন, অ্যাকশন এইডের সহায়তায় নিলুফাকে বিদ্যালয়ে ভর্তি করা হয়েছে। সব খরচ সুশীলন বহন করছে। এছাড়া, নিলুফার দায়ের করা মামলাটি আদালতে চলমান। মামলা পরিচালনায় সব রকমের সহায়তা দিচ্ছে সুশীলন।

প্রথম পর্ব:
** অপরিণত বয়সেই মা

দ্বিতীয় পর্ব:
** তানিয়ার বিবাহ বিচ্ছেদ অতঃপর...

বাংলাদেশ সময়: ০১৪৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ০১, ২০১৫  
এমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।