ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

উপকূল থেকে উপকূল

৫৬ বছর পুরোনো বিরোধের গ্যাঁড়াকলে

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৬ ঘণ্টা, জুলাই ৩, ২০১৬
৫৬ বছর পুরোনো বিরোধের গ্যাঁড়াকলে ছবি-বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

হাতিয়া দ্বীপ থেকে: নদীর ভাঙা-গড়ার সঙ্গে মিতালী গড়েই বাস করেন চরাঞ্চলের মানুষেরা। প্রকৃতির হাতে  ভাগ্যকে সঁপে দিয়েই জীবন-জীবিকা চলে এখানকার জোয়ার-ভাটায় নির্ভরশীল মানুষদের।

একপাশে বিলীন হয় ঘর-বাড়িসহ সর্বস্ব। অন্যপাশে জেগে উঠে সম্ভাবনার চর। আর সে চরের দখল নিতে চলে সংগ্রামী এ মানুষগুলোর যুদ্ধ। তবে এ যুদ্ধ খণ্ডকালের বা সাময়িক নয়। সীমানা জটিলতা নিয়ে চলা এ যুদ্ধ অনেক সময়ই গড়ায় বছর থেকে বছরে, যুগ থেকে যুগে এমনকি প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ধরে।

তেমনই দুটি চর ঢালচর ও কলাতলী। এ দুটি চর নিয়ে গত প্রায় ৫৬ বছর ধরে বিরোধ চলে আসছে ভোলার মনপুরা উপজেলার সঙ্গে নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলাবাসীর।

এই বিরোধের জেরে বছরের পর বছর ধরে প্রতিপক্ষের নানামুখী নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন এখানকার নিরীহ মানুষ। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে প্রভাবশালীদের নির্যাতন সহ্য করেই তাই জীবন চলছে এখানকার মানুষজন।

যুদ্ধাংদেহী এ পরিবেশেই প্রভাবশালীদের কেউ কেউ  দূর্গম এমন চরে তৈরি করেছেন প্রমোদ-বিলাস। জমি দখল করে করেছেন মাছের ঘের।
 
ভোলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা মনপুরার অন্তর্গত ঢালচর ও কলাতলী। মেঘনার অব্যাহত ভাঙনে ভিটা-মাটিহারা অসহায় ভূমিহীন ও রেকর্ডের জমির মালিকরা আশ্রয় নিয়েছেন জেগে ওঠা এ চরে। দুটি চরে বর্তমানে ১০ হাজার লোক বসবাস করছে। শিক্ষার আলো ছড়াতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ও গড়ে উঠেছে এ অবহেলিত চরাঞ্চলে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, ঢালচরের দখল ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে প্রায় ৫০ বছর আগে  মনপুরা ও হাতিয়া উপজেলার মানুষের মধ্যে রক্ষক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে বিরোধ নিষ্পত্তি করে দুই উপজেলার মধ্যে সমঝোতার মাধ্যমে কলাতলী-ঢালচরকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়।

সমঝোতার অংশ হিসেবে ঢালচরের দক্ষিণ অংশের চার হাজার একর ভূমি মনপুরা উপজেলার আওতায় এবং উত্তর অংশের চার হাজার একর ভূমি হাতিয়া উপজেলার আওতায় ধরে সীমানা নির্ধারণ করা হয়। সেভাবেই দুই উপজেলার ভূমিহীন ও রেকর্ডের মাধ্যমে জমির মালিকরা চরে চাষাবাদ ও বসবাস করে আসছেন।

তবে বিরোধ জিইয়ে থাকায় দীর্ঘ সমেয়ও এখানে গড়ে ওঠেনি তেমন কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্য সুবিধা বা স্যানিটেশন সুবিধা। মূলত মেঘনায় মাছ শিকার ও গবাদি পশু পালন করেই এখানকার জনগোষ্ঠী জীবিকা নির্বাহ করেন। সেটিও নির্ধারণ করে জোয়ার-ভাটার ওপর।

কারণ জোয়ারের সময় পুরো চর ডুবে যায় পানিতে। তাই, মানুষতো বটেই গবাদি পশুও সেসময়  টিলায় আশ্রয় নেয়।

কিন্তু এ বিরোধ যেন মিটবার নয়। স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন চরের মানুষ শান্তিতে থাকার পর মনপুরা উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ ছাড়াই হাতিয়া উপজেলার একটি প্রভাবশালী পক্ষ চরে আধিপত্য বিস্তার ও জোরপূর্বক ঢালচর ও কলাতলী চরে সীমানা নির্ধারণ করে পিলার দিয়েছে।

এই সীমানা নির্ধারণ কেন্দ্র করে ফের ঢালচর ও কলাতলী চরের মানুষ উত্তেজিত হয়ে উঠেছে। তারা যেকোনো মূল্যে চর নিজেদের দখলে রাখার ঘোষণা
দিয়েছে।

ঢালচর ভূমিহীন সমিতির নেতা মোতাহার উদ্দিন জানান, দীর্ঘদিন ধরে এ বিরোধ চলায় চরের মানুষগুলো সীমাহীন কষ্টে রয়েছেন। বিরোধ মীমাংসা হলে তারা রেহ‍াই পাবেন।

এ ব্যাপারে কথা হয় হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুল হাসনাত মাহমুদ মইন উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, সীমানা বিরোধ নিরোধে এখানে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ৷

হাতিয়ার উপজেলা চেয়ারম্যান মাহবুব মোর্শেদ লিটন জানান, এ ভূখণ্ডটি ম‍ূলত হাতিয়ার। ভোলার মানুষ শুধু শুধু এটা নিয়ে বিরোধ করেছেন।

তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঢালচর ১৯৬০ সাল থেকে হাতিয়ার অংশ। নোয়াখালী জেলা প্রশাসন ১৯৬০ সালে হাতিয়ার এক হাজার ১৫৩টি ভূমিহীন পরিবার এবং ২০০২ সালে এক হাজার ২০০টি ভূমিহীন পরিবারকে ঢালচরের খাসজমি বন্দোবস্ত দেয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৮ ঘণ্টা, জুলাই ০৩, ২০১৬
জেপি/এসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।