ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

উপকূল থেকে উপকূল

সাগরকন্যার লাল কাঁকড়ার চর...

মুশফিক সৌরভ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০১৬
সাগরকন্যার লাল কাঁকড়ার চর... ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কুয়াকাটা, পটুয়াখালী: মাইলকে-মাইল বালুচরজুড়ে লাল কাঁকড়ার সমারোহ। এখানে-সেখানে বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে অসংখ্য লাল কাঁকড়া।

দূর থেকে দেখলে মনে হবে বালুচরে অসংখ্য লাল বর্ণের কিছু ছিটিয়ে রাখা রয়েছে।

সাম‍ান্য দূরত্বে আছড়ে পড়ছে সমুদ্রের বিশালাকার ঢেউ; এলোচুলের পাগলা হাওয়া; ওপরে সুনীল আকাশ। আর বিস্তীর্ণ বালুকাবেলাজুড়ে ছুটোছুটিতে মত্ত লাল কাঁকড়া।

দিনের আলোয় এ লাল কাঁকড়ার আলপনার মুগ্ধতার রেশ শেষ না হতেই, সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তে সৈকতের লাল কাঁকড়ার মহড়ার অনিন্দ্য সৌন্দর্য আপনাকে মন্ত্রমুগ্ধ করে তুলবে।

অবচেতন মনের কিংবা শিল্পীর ক্যানভাস সদৃশ এ দৃশ্য চর্মচক্ষে দেখতে হলে যেতে হবে দেশের সাগরকন্যাখ্যাত পটুয়াখালীর কুয়াকাটায়।

কুয়াকাটা থেকে অল্প সময়ের দূরত্ব লাল ‍কাঁকড়ার চর। তবে সাগরকন্যার লাল কাঁকড়ার চরে এসে শুধু লাল কাঁকড়াই নয়; রয়েছে বিমোহিত হওয়ার মতো উম্মত্ত বঙ্গোপসাগর। আর অন্যপাশে বন বিভাগের নিরলস পরিশ্রমে গড়ে তোলা সবুজের নিসর্গ (বৃক্ষরাজি)।

কুয়াকাটা সৈকত থেকে সদা সতর্ক ও ‘লাজুক’ লাল কাঁকড়ার দর্শন পেতে ওই চরে যেতে হবে মোটরসাইকেল বা অন্য কোনো বাহনে চেপে। কেননা লাল কাঁকড়া পায়ের শব্দে তড়িৎ গতিতে গর্তে লুকিয়ে পড়ে। ফলে হেঁটে গেল ক‍াছ থেকে লাল কাঁকড়া দর্শনের সাধ অপূর্ণই থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

স্থানীয়রাও তেমনটাই জানালেন। তারা জানান, ওই চরে মোটরসাইকেলে করে গেলে চলতি অবস্থাতে খুব স্পষ্টভাবে লাল কাঁকড়া দেখতে পাওয়া যায়। তবে মোটরসাইকেল থামিয়ে ধরতে গেলেই নিমিষেই ভোজবাজির মতো গর্তে অবস্থান নেবে কাঁকড়া।


লাল কাঁকড়ার ছবি তোলার ক্ষেত্রে ক্যামেরায় ভালোমানের লেন্স ব্যবহার কর‍া উচিত বলে জানালেন স্থানীয় গাইড। তারাই জানালেন, কাঁকড়ার দেখা পেতে এখানে আসা পর্যটকরা নানান কৌশল ব্যবহার করেন। মেতে ওঠেন লাল কাঁকড়ার সঙ্গে দৌঁড়ের খেলায়।

তবে চাইলেই ইচ্ছামতো লাল কাঁকড়া দর্শনের সুযোগ নেই। জোয়ারের সময় গেলে লাল কাঁকড়ার দেখা মিলবে না। বর্তমানে (বর্ষাকাল) পানিতে সৈকত পুরোটাই তলিয়ে আছে। ফলে লাল কাঁকড়ার দেখা পাওয়া ভার। ফলে সাদা বালুকারাশিতে ছুটোছুটিতে মত্ত লাল কাঁকড়া দেখতে হলে যেতে হবে ভাটার সময়।

গঙ্গামতির চর ও কুয়াকাটার সূর্যোদয় স্পট বা সৈকত থেকে পূর্ব দিকে মোটরসাইকেলে একটানা ১৫-২০ মিনিট সময়ে পৌঁছানো যায় লাল কাঁকড়ার চরে। পথে ছোট এক নদীর মোহনা মিলবে। খেয়া নৌকায় মোহনা পাড়ি দিয়ে ফের মোটরসাইকেলে কয়েক মিনিটেই মিলবে লাল কাঁকড়ার চর। একই পথে হেঁটেও আসা সম্ভব এ চরে।

এছাড়া সরাসরি হেঁটে বা মোটরসাইকেলে করে বেড়িবাঁধ,  মিস্ত্রিপাড়া, লতাচাপলি বাজার কিংবা সৈকতের ওপর দিয়ে যাওয়া ‍যায় লাল কাঁকড়ার চরে। তবে বর্ষার সময়টা বেড়িবাঁধের রাস্তা কর্দমাক্ত থাকায় সেখানে যাওয়া বেশ কষ্টকর।

চরের কাঁকড়া দর্শন ও যাতায়াতের জন্য সৈকতেই মিলবে ভাড়ায় মোটরসাইকেল। আনা-নেওয়াসহ জনপ্রতি ভাড়া পড়বে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। আর পথে খেয়াপারের জন্য জনপ্রতি ৩০ টাকা। তবে এক্ষেত্রে দরদামও করে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

এক্ষেত্রে পর্যটকদের নিজ নিজ হোটেল ম্যানেজারের সঙ্গে আলাপ করে পরিচিত মোটরসাইকেল নিয়ে গেলে ভালো।

লাল কাঁকড়া চর ছাড়াও কুয়াকাটা বৌদ্ধ মন্দির ও কুয়াকাটা কূপ, জাতীয় উদ্যান ও ঝাউবন, সৎসঙ্গ মন্দির, গঙ্গামতির চর ও সূর্য উদয়ের স্পট, কাউয়ার চর, মিস্ত্রিপাড়া বৌদ্ধ মন্দির, শুটকি পল্লী ও লেবু বনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আপনার মন কেড়ে নেবে।

কুয়াকাটার স্থানীয়দের মতে, আবহাওয়া বৈরী আর সাগর উত্তাল না থাকলে কম-বেশি সারাবছরই এখানে পর্যটকদের আনাগোনা থাকে। তবে ব্যবসায়ীদের মতে, বছরের ৮ মাস এখানে পর্যটক আসেন। এ সময়টাকে তারা সিজন বা মৌসুম বলে থাকেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৯ ঘণ্টা, আগস্ট ১০, ২০১৬
এসআর/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।