ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

উপকূল থেকে উপকূল

জরাজীর্ণ আশ্রয়নে মানবেতর জীবনযাপন

ছোটন সাহা, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭০২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৭, ২০১৭
জরাজীর্ণ আশ্রয়নে মানবেতর জীবনযাপন আশ্রয়ন কেন্দ্রগুলোর অধিকাংশ ঘরই বসবাসের অনুপযোগী ও খুবই নাজুক। ছবি: বাংলানিউজ

ভোলা: বাসস্থান সংকটে জরাজীর্ণ এক একটি ঘরে গাদাগাদি করে বসবাস করছে ৪/৫টি পরিবার। পর্যাপ্ত টিউবওয়েল ও টয়লেটের অভাবে নেই বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থাও।

ন্যূনতম নাগরিক সুযোগ-সুবিধা না পেয়ে এভাবেই মানবেতর জীবনযাপন করছেন ভোলা সদর উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের মাঝেরচরের ৫টি আশ্রয়ন কেন্দ্রের বাসিন্দারা।

সিডর ও আইলায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর সামান্য কিছু সংস্কার করা ছাড়া গত ১৯ বছরেও এসব বাসস্থান মেরামত করা হয়নি বলে অভিযোগ ৫০০ পরিবারের প্রায় দেড় হাজার ভূমিহীন বাসিন্দার।

এর মধ্যে আবার দু’দফা আগুনেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এসব আশ্রয়ন কেন্দ্র।

জরাজীর্ণ এক একটি ঘরে গাদাগাদি করে বসবাস করছে ৪/৫টি পরিবার।                                          ছবি: বাংলানিউজ১৯৯৮ সালে মাঝেরচরের বড়াইপুর ও রামদেবপুরে ৫টি আশ্রয় কেন্দ্র স্থাপন করে নদীভাঙনে গৃহহীন ওই মানুষদের আশ্রয় দেয় তখনকার আওয়ামী লীগ সরকার। এর মধ্যে বড়াইপুর-১ নম্বর ব্যারাকে ৮০টি, রামদেবপুর-২ নম্বর ব্যারাকে ১২০টি এবং রামদেবপুর-৩, ৪ ও ৫ নম্বর ব্যারাকে ৩০০টিসহ মোট ৫০০টি টিনের ঘর রয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, আশ্রয়ন কেন্দ্রগুলোর অধিকাংশ ঘরই বসবাসের অনুপযোগী ও খুবই নাজুক অবস্থায় রয়েছে। ছোট ছোট ঘরে একাধিক পরিবারের বসবাস, এক একটি পরিবারে গড়ে ৪/৫ জন সদস্য রয়েছেন। থাকা, খাওয়া ও রান্নার পর্যাপ্ত জায়গা নেই। কোনো ঘরের টিনের চালা আর কোনো ঘরের বেড়া নেই। কোথাও রান্না ও থাকার ঘর একইসঙ্গে, সেটিও বেড়াবিহীন।  

জরাজীর্ণ এসব ঘরে শীতের দিনে ঠাণ্ডা কনকনে হাওয়া আর বর্ষায় ঝড়-বৃষ্টিতে ভিজে দিন কাটাতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাসিন্দারা। তাই এসব আশ্রয়ন কেন্দ্রের সমস্যার দ্রুত সমাধান ও নতুন আরো দু’টি আবাসন কেন্দ্র চান তারা।

বড়াইপুর আশ্রয়ন কেন্দ্রের জাহাঙ্গীরের স্ত্রী মিনারা বেগম বলেন, ‘১৯ বছর আগে নির্মিত হওয়ার পর থেকে আর মেরামত করা হয়নি। অনেক কষ্টে বসবাস করছি, কিন্তু আমাদের সে কষ্ট কেউ দেখেন না’।

মালেকের স্ত্রী নারগিস বেগম বলেন, ‘টিউবওয়েল নেই, টয়লেট নেই, একটি ঘরে ৪/৫টি পরিবার বসবাস করছি। সরকারি জায়গায় থাকলেও আমাদের কষ্টের শেষ নেই’।

নার্গিস বলেন, ‘আমার ঘরে একটি পরিবার থাকার কথা থাকলেও চারটি পরিবার একসঙ্গে গাদাগাদি করে থাকি। আরো ঘর থাকলে অনেক ভালো হতো’।

ফারুকের স্ত্রী সাহেরা বেগম বলেন, ‘আমরা ভূমিহীন, সরকার থাকতে দিয়েছে। কিন্তু পুকুর থাকলেও নেই ঘাটলা, যে দু’একটি টিউবওয়েল আছে, সেগুলোও নষ্ট। এভাবেই বছরের পর বছর কষ্ট করে থাকছি’।  

রামদেবপুর-৫ নম্বর ব্যারাকের ৭ নম্বর ঘরের জোসনা বেগম বলেন,  ‘টিনের চালা ফুটো, বর্ষায় পানিতে সব ভিজে যায়। গরমে রোদের তাপেও পরিবারের সবাই কষ্ট পাচ্ছি’।

ন্যূনতম নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নেই বাসিন্দাদের।  ছবি: বাংলানিউজকাচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম নকিব বলেন, সেখানকার বাসিন্দারা অনেক কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। তাদের জন্য আরো দু’টি আশ্রয়ন কেন্দ্র, ১০টি টিউবওয়েল ও ঘাট নির্মাণসহ সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো দরকার। ঘরগুলোর সংস্কার ও আরো দু’টি আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

ভোলার জেলা প্রশাসক মো. সেলিম উদ্দিন বলেন, ‘সম্প্রতি কাচিয়া মাঝের চরের আশ্রয়ন কেন্দ্রগুলো পরিদর্শন করেছি। সেখানে খুব শিগগিরই ঘর মেরামত এবং নতুন আরো দু’টি আশ্রয়কেন্দ্র স্থাপন করা হবে’।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৭, ২০১৭
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।