ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

উপকূল থেকে উপকূল

উপকূলের দৃশ্যপট পাল্টে দিচ্ছে ‘সমৃদ্ধি’

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩১২ ঘণ্টা, মে ৫, ২০১৮
উপকূলের দৃশ্যপট পাল্টে দিচ্ছে ‘সমৃদ্ধি’ হাতিয়ার চানন্দী ইউনিয়নের একটি সমৃদ্ধ বাড়ি। ছবি: বাংলানিউজ

সুবর্ণচর-হাতিয়া (নোয়াখালী) থেকে ফিরে: দুই দশক আগেও ছিল জনমানবহীন ধূ-ধূ চর ও বন-জঙ্গল। সময়ের ব্যবধানে সেই চরে এখন সমৃদ্ধ বাড়ি, সমৃদ্ধ গ্রামে পরিণত হয়েছে। প্রতিটি বাড়িতে চাষ করা হচ্ছে সবজি, মাছ, ওষুধি গাছ, পালন হচ্ছে হাঁস-মুরগি, গরুসহ বিভিন্ন গবাদি পশু।

মাঠের খালি জমিতে চাষাবাদ হচ্ছে উচ্চ ফলনশীল ধান। বাঁশের বেড়ার তৈরি ঘরগুলোতে বর্তমানে ইট-সিমেন্ট দিয়ে দেওয়াল করা হয়েছে।

বারবার নদী ভাঙনকবলিত মানুষগুলোর জীবনে এসেছে আমুল পরিবর্তন। মাঠ থেকে ফসল তুলছেন এক কৃষাণী।                                          ছবি: বাংলানিউজপরিবর্তনের  এ গল্প নেয়াখালীর চানন্দী ইউনিয়নের নাঙ্গুলিয়া চরের। তবে এ পরিবর্তন শুধু বসবাসকারীদের প্রচেষ্টায়। এর পেছনের রয়েছে সরকারি-বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগ।

পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশেন (পিকেএসএফের) সহযোগিতায় দ্বীপ উন্নয়ন সংস্থার কর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রমেই এ চরে বইছে ‘সমৃদ্ধি’র সুবাতাস।

সম্প্রতি চরটিতে গিয়ে দেখা গেছে পিকেএসএফের ‘দারিদ্র্য দূরীকরণের লক্ষ্যে দরিদ্র পরিবারসমূহের সম্পদ ও সক্ষমতা বৃদ্ধি (সমৃদ্ধি)’ কর্মসূচির সুফল।

নাঙ্গুলিয়া চরের আলাউদ্দিন-কামাল দম্পতির বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তাদের সাজানো গোছানো সমৃদ্ধ বাড়ি। তাদের বাড়িতে ছাগল ১৫টি, গরু তিনটা, দেশী মুরগি ৪০টা, পুকুরভর্তি মাছ, সেই পুকুরপাড়সহ বাড়ির চত্বরেই সাজানো গোছানো সবজির বাগান। দ্বীপ উন্নয়ন সংস্থার ‘সমৃদ্ধি’ কর্মসূচী বাস্তবায়ন।  ছবি: বাংলানিউজকামাল জানান, দ্বীপ উন্নয়ন সংস্থা থেকে মাত্র ‘পাঁচ হাজার টাকা’ ঋণ নিয়ে সরকারের দেওয়া ১৫০ শতক জমিতে শুরু হয়েছিল তাদের নতুন জীবন। এখন তাদের মূলধন এসে ঠেকেছে ‘পাঁচ লাখ টাকা’র উপরে।

সুলতানা-রাশেদ দম্পতির বাড়িতে গিয়ে রীতিমতো আশ্চর্য হতে হয়। মাত্র ১৫০ শতক জমিকে কি সুন্দর করে সাজানো গোছানোভাবে পাল্টে ফেলেছেন জীবনের চিত্র। বাড়ির চত্বরে সারিবদ্ধভাবে লাগানো হয়েছে বিভিন্ন জাতের কলাগাছ। মেঘলার পাড়ে একটি সমৃদ্ধ বাড়ি।  ছবি: বাংলানিউজরাশেদ বাংলানিউজকে জানান, বছরের গাছের কলা বিক্রি করে লাভ হয় ‘লাখ খানেক টাকা’। নালায় মাছেই আইলে সর্জন পদ্ধতিতে চাষ করেছেন সবজি। চলতি মৌসুমে ৩৫ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে সেখান থেকে আয় করেছেন ৭০ হাজার টাকা। বাড়ির পুকুরটিতে চাষ হয়েছে মাছ। সেখান থেকেও বছর আয় হয়ে লাখ খানেক টাকা। বাড়ির আঙ্গিনায় লাগানো কাঁচা লঙ্কার গাছ।  ছবি: বাংলানিউজএছাড়াও বাড়ির আনাচে-কানাচে লাগানো হয়েছে পেঁপে, বিভিন্ন ফলজ ও ওষুধিগাছ। এমন সাজানো গোছানো ‘সমৃদ্ধ’ বাড়িতে গেলে যে কারোই মন জুড়িয়ে যাওয়ার কথা।

সবশেষে দম্পতি ওমর ফারুক মেম্বার ও ফরিদা ইয়াসমিনের বাড়িতেও একই দৃশ্য চোখে পড়ে নিজের গাছের ডাবের পানি দিয়ে আপ্যায়ন করার সময় ফরিদা ইয়াসমিন বলছিলেন তার স্বচ্ছল জীবনের গল্প।

তিনি বাংলানিউজকে জানান, ‘পিকেএসএফ ও দ্বীপ উন্নয়নের দেওয়া প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহায়তার ফলে তাদের পরিবারে এখন আর কোনো অভাব নেই।

‘সমৃদ্ধি’ প্রকল্পের সুবাধে শুধু চানন্দী ইউনিয়ন নয় হাতিয়া, সুবর্ণচর, কোম্পানীগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় এসেছে ইতিবাচক পরিবর্তন। পিকেএসএফের তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ সাল থেকে ১১২টি সহযোগী সংস্থার ২৯১ শাখার মাধ্যমে দেশের আটটি বিভাগের অন্তর্গত ৬৪টি জেলায় এ কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে।  ১৫৩টি ইউনিয়নে ৯ দশমিক ৫২ লাখ টাকায় সমৃদ্ধি কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে। মোট লাখভুক্ত জনসংখ্যা ৪৩৯৫৮৫২জন। বাড়ির আঙ্গিনায় লাগানো গাছে ধরে আছে কলা।  ছবি: বাংলানিউজদ্বীপ উন্নয়ন সংস্থার প্রধান নির্বাহী রফিকুল আলম বাংলানিউজকে জানালেন, তার সংস্থা পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় এই চরাঞ্চলে সঞ্চয় ও ঋণ কার্যক্রমসহ ব্যাপক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু করে। বাড়ির আঙ্গিনায় লাগানো গাছে ধরে আছে পেঁপে।  ছবি: বাংলানিউজ জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সহিত সমন্বয়ের মাধ্যমে সংস্থা এ সব পরিবারের জন্য খাসজমি বরাদ্দের অ্যাডভোকেসি ও লবিং শুরু কর। সংস্থা সরকারের জাতীয় ও জেলাপর্যায়ে ভূমি সংস্কার কমিটিতে সম্পৃক্ত হয়।

প্রাথমিক অবস্থায় হতদরিদ্র এসব পরিবারের ঋণ সহায়তার পরিমাণ ছিল মাত্র দুই হাজার টাকা। দ্বীপ উন্নয়ন সংস্থা নলেরচর ও নক্সগুলিয়াচরে ২০০৬ থেকে ২০০৭ সাল থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগী সংস্থা হিসেবে চর উন্নয়ন ও বসতি স্থাপন প্রকল্পের অন্তভুক্ত হয়। বর্তমানে পিকেএসএফের সহযোগী সংস্থা হিসেবে দ্বীপ উন্নয়ন সংস্থা চানন্দী ইউনিয়নে ২০১৭ সালের এপ্রিল থেকে সমৃদ্ধি কর্মসূচি পরিচালনা করছে। এ  জনপদের উন্নয়নে সমানভাবে তৎপর সরকারও।  তৈরি করা হয়েছে পিচঢালা পথ।  ছবি: বাংলানিউজদ্বীপ উন্নয়ন সংস্থার প্রোগ্রাম কর্মকর্তা নূসরাত হায়দার বলেন, বর্তমানে এ কর্মসূচির আওতায় শিক্ষা সহায়তা কেন্দ্র, স্বাস্থ্যসেবা, জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, সম্পদ সৃষ্টি, আয় বর্ধনমূলক কর্মকাণ্ড, কমিউনিটি উন্নয়ন, পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন, স্থানীয় সরকার পরিষদকে শক্তিশালীকরণ ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত ও হতদরিদ্র মানুষের কল্যাণে নিযুক্ত রয়েছে। একই ধরনের কর্মসূচি চলমান রয়েছে নিঝুম দ্বীপসহ আরো বিভিন্ন প্রত্যন্ত এলাকায়।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১১ ঘণ্টা, মে ০৫, ২০১৮
এসএইচডি/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।