ঢাকা, রবিবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

উপকূল থেকে উপকূল

মোরা ত্রাণ চাই না, বেড়ি চাই

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৬ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০২০
মোরা ত্রাণ চাই না, বেড়ি চাই

পিরোজপুর: মোরা (আমরা) ত্রাণ চাই না, বেড়ি চাই। বেড়ি না অইলে (হলে) মোগে জীবন বাঁচানো কষ্টের অবে (হবে)। যেকোনো সোময় মোরা তলাইয়া যামু (যাবো)। এহন (এখন) বাঁচানোর জন্নে (জন্য) আগে লাগবে বেড়ি।  

বাংলানিউজকে কথাগুলো বলছিলেন জেলার মধ্য দিয়ে বয়ে  যাওয়া কচা ও বলেশ্বর নদের তীরবর্তী ইন্দুরকানী উপজেলার টগরা গ্রামের মো. ছিদ্দিকুর রহমান।  

শুক্রবার (২৯ মে) বিকেলে সরেজমিন জেলার ইন্দুরকানি উপজেলার কচা ও বলেশ্বর নদের তীরে টগরা গ্রামে গেলে দেখা যায়, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের জলোচ্ছ্বাসে ওই গ্রামের সোয়া তিন কিলোমিটার বাঁধের এক কিলোমিটার ভেঙে গেছে।

ভাঙা বাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি এসে প্লাবিত হচ্ছে গ্রাম।  

স্থানীয়রা জানান, ভাঙা বেড়িবাঁধের কারণে গত বুধবার থেকে চরম দুর্ভোগে আছেন ওই গ্রামের ৩৫০ পরিবার। জোয়ারের পানিতে   গ্রামটি ডুবে যায়। আর ভাটার সময় তাদের মুখে হাসি ফোটে।

টগরা গ্রামের জেলে বাবুল হাওলাদার বাংলানিউজকে বলেন, ঘূর্ণিঝড় সিডরের পর থেকে গত প্রায় ১৩ বছর ওই ভাঙা বাঁধ আমাদের গ্রামবাসীদের জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জোয়ারের পানি এলাকায় ঢুকে বাড়িঘর তলিয়ে যেত। এক বছর আগে এখানে নতুন বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়। ঘূর্ণিঝড় আম্পানে সে বাঁধটি ভেঙে যায়। এখন জোয়ারের সময় ভাঙা বাঁধ দিয়ে পানি ঢুকে গ্রাম তলিয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় আমাদের চলাফেরা করতে চরম কষ্ট হচ্ছে। আমরা ত্রাণ চাই না। আমাদের বাঁধ চাই।  
 
জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পিরোজপুর জেলার মঠবাড়িয়া ও ইন্দুরকানি উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় আম্পানের জলোচ্ছ্বাসে ১৫ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাঁধ ভেঙে জেলার উপকূলীয় ১২টি গ্রামে জলোচ্ছ্বাসের পানি ঢোকে। এরপর থেকে জোয়ারের পানিতে গ্রামগুলো প্লাবিত হচ্ছে। এছাড়া জলোচ্ছ্বাসে ৬ হাজার ৪৩০টি পুকুর ও ৩২৪টি ঘেরের মাছ ভেসে গেছে।
  
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ২৯৩ কিলেমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে মঠবাড়িয়া উপজেলায় ১৪০ কিলোমিটার ও ইন্দুরকানি উপজেলায় ৯৪ কিলেমিটার। মঠবাড়িয়া উপজেলার খেজুরবাড়িয়া থেকে বড়মাছুয়া লঞ্চঘাট পর্যন্ত ৫০০ মিটার বাঁধ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।  

আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা।  ছবি: বাংলানিউজএছাড়া চর ভোলমারা, কচুবাড়িয়া ও খেতাছিড়া গ্রামের বাঁধ ঘূর্ণিঝড় আম্পানের জলোচ্ছ্বাসে ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইন্দুরকানি উপজেলার চন্ডিপুর গ্রামের দেড় কিলেমিটার ও টগরা গ্রামে এক কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
  
খোঁজ নিয়ে ও সরেজমিনে দেখা গেছে, মঠবাড়িয়া উপজেলার খেতাছিড়া, কচুবাড়িয়া, চর ভোলমারা, মাঝের চর, ইন্দুরকানি উপজেলার টগরা, চারাখালী, কালাইয়া, কলারণ, চর বলেশ্বর, চন্ডিপুর, খোলপটুয়া ও সাউদখালী গ্রাম প্রতিরক্ষা বাঁধের অন্তত ১৫ থেকে ১৭টি স্থান জলোচ্ছ্বাসে ভেঙে গেছে। ভাঙা বাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে। এতে রবিশস্য ও ঘরবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি হয়।

পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার খেতাছিড়া গ্রামের রহিম উদ্দিন বলেন, বইন্নার রাইতে (ঘূর্ণিঝড় আম্পান) জোয়ারের তোড়ে গাঙ্গ (নদী) পাড়ের বাঁধ ভাইঙ্গা ঘরবাড়ি তলাইয়া গেছিল। এহন জোয়ার আইলে ভাঙা বাঁধ দিয়া পানি ডুইক্যা ঘর তলায় (ডুবে যায়)। ঘরের মধ্যে হট দিয়া রান্দাবারা হরি (করি)।

ইন্দুরকানি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম মতিউর রহমান বলেন, আমার উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ মেরামতের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের পিরোজপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলীকে চিঠি দিয়েছি।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের পিরোজপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, মঠবাড়িয়া উপজেলার বড়মাছুয়া স্টিমারঘাট এলাকায় পাঁচ কোটি টাকা ব্যয়ে নদীর তীর সংরক্ষণের কাজ শিগগিরই শুরু হবে।  

এছাড়া বলেশ্বর নদের তীর সংরক্ষণ প্রকল্পে ১০০ কোটি টাকার একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে ইন্দুরকানি উপজেলার টগরা গ্রামে সোয়া তিন কিলেমিটার বেড়িবাঁধ ১ কোটি ৩৫ লাখ ৬২ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছিল। ঘূর্ণিঝড় আম্পানে বাঁধের এক কিলোমিটার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমরা ভেঙে যাওয়া বাঁধ সংস্কার করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন পাঠাব।

বাংলাদেশ সময়: ১০৫৩ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০২০
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।