ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

উপকূল থেকে উপকূল

উপকূলের জীবন-জীবিকা

নির্বাসনই তাদের পুনর্বাসন!

শফিকুল ইসলাম খোকন, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৫৮ ঘণ্টা, জুন ৯, ২০২০
 নির্বাসনই তাদের পুনর্বাসন!

বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও পিরোজপুরসহ উপকূলীয় বাসিন্দাদের জীবন চলে অতি কষ্টে। ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, দুর্যোগের সঙ্গে তাদের বসবাস। প্রতিনিয়ত দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকে উপকূলবাসী। একমাত্র বসতবাড়িটুকু নদীতে বিলীন হওয়ায় অনেকেই বাঁধের উপর বসবাস করছেন। উপকূলবাসীর অন্তহীন দুর্দশা এবং জীবন-জীবিকার চিত্র নিয়ে পাথরঘাটা উপজেলা করেসপন্ডেন্ট শফিকুল ইসলাম খোকনের প্রতিবেদনের সপ্তম পর্ব।

পাথরঘাটা উপকূলের আশ্রয়ন প্রকল্প ঘুরে: পশ্চিমে সুন্দরবন ঘেঁষা বলেশ্বর নদ, পুর্বে বিষখালী নদী আর দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। মাঝখানে উপকূলীয় উপজেলা পাথরঘাটা।

এখানকার অধিকাংশ বাসিন্দাদের প্রকৃতির সঙ্গে অঘোষিত লড়াই করে বেঁচে থাকতে হয়। বছরের পর বছর পর্যায়ক্রমে পৈতৃক ভিটে নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় এখানকার মানুষ বংশ পরামপরায় ভূমিহীন হয়ে পড়ে। বসবাসের মতো ভূমি না থাকায় আশ্রহীন হয়ে পড়ে তারা।  

এই এলাকার আশ্রয়হীন মানুষদের পুনর্বাসনের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে আশ্রয়ন প্রকল্প। কিন্তু কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই নির্মিত এ আশ্রয়ন প্রকল্পে নেই স্বাভাবিক সুযোগ-সুবিধা। বেড়িবাঁধের বাইরে নদীর পাড়ে বহুকাল আগের জেগে ওঠা চরে এই আশ্রয়ন প্রকল্পে (আবাসন) সুযোগ-সুবিধার পরিবর্তে আছে শুধু বিপন্নতা। জোয়ার-ভাটায় দোলে আবাসনের বাসিন্দাদের জীবন। জোয়ারের পানিতে ডুবে আর মাঘ মাসের প্রচণ্ড শীতে যবুথবু হয়ে পড়ে শিশুসহ বাসিন্দারা। এই আবাসনগুলো বেড়িবাঁধের বাইরে হওয়ায় ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে তেমনি ইতোমধ্যেই পাথরঘাটার চরদুয়ানী মুজিব কিল্লার একটি আবাসন একেবারেই নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে যায়।  

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, আশ্রয়ণ প্রকল্পের জরাজীর্ণ ঘরও বসবাসের অযোগ্য। বাঁধের বাইরে নিচু জমিতে নির্মাণ করা হয়েছে ভূমিহীনদের জন্য আশ্রয়নকেন্দ্র। প্রকল্পের ব্যারাকগুলো নির্মাণ করা হয়েছে খুবই অল্প জায়গার মধ্যে। জোয়ার-জলোচ্ছ্বাস ও ভাঙন আতঙ্ক তাড়িয়ে বেড়ায় সারা বছর। সন্ধ্যা হলেই নামে ভয়ঙ্কর রাত। এসব সমস্যাকে সঙ্গী করেই অরক্ষিত ওই এলাকায় আশ্রয়হীন মানুষগুলোকে পুনর্বাসিত করা হয়েছে। ফলে আক্ষেপ নিয়ে একে পুনর্বাসন না বলে নির্বাসন বলতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দারা। ভুক্তভোগী বাসিন্দারা অনেকেই বলছেন, এটি পুনর্বানের নামে নির্বাসনে পাঠানো। প্রতি মুহূর্তেই তাদের নির্বাসনে যাওয়ার প্রস্তুতি রাখতে হয়।
 
আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর।  ছবি: বাংলানিউজসূত্র জানায়, পাথরঘাটা উপজেলায় মোট ৮টি আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর ৩৩৭ পরিবারের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হলেও বর্তমানে থাকছেন মাত্র দেড়শ থেকে পৌনে দুইশ। এসব আশ্রয়ণ প্রকল্পে একটি ঘরের সঙ্গে অন্য একটি ঘর সংযুক্ত থাকায় বাসিন্দাদের জন্য নেই বুক ভরে শ্বাস নেওয়ার মতো ফাঁকা জায়গা। আর প্রকল্পটি শহর থেকে দূরে চরাঞ্চলে হওয়ায় নেই কোনো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও। তাদের বেশিরভাগই মাছ ধরার ওপর নির্ভরশীল।  

এছাড়া ভূমিহীনরা এ আশ্রয়ন কেন্দ্রে আশ্রয় নিলেও বহু বছর হলো অনেক পরিবার আশ্রয়ন কেন্দ্র ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়েছে।  

জহুরা আবাসনের বাসিন্দা হানিফা, মোতালেব ও মাওলানা দেলোয়ার হোসেন বলেন, বাপের ভিটা অনেক আগেই নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। আবাসনই আমাদের একমাত্র ভরসা। তাও আবার ব্যবহারের অনুপযোগী।  

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সংকল্প ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক মির্জা শহিদুল ইসলাম খালেদ বলেন, আশ্রয়ন প্রকল্পগুলো ভূমিহীনদের জন্য এক রকমের ভূমিহীন জায়গায়ই তৈরি করা হয়েছে। যখন এ প্রকল্পের ঘর তৈরি করা হয়েছিল তখন হয়তো কোনো পরিকল্পনা করা হয়নি। আমরা আশাবাদী খুব দ্রুত সরকার এ বিষয়টি আমলে নিয়ে ভূমিহীনদের নিরাপত্তার জন্য নতুন পরিকল্পনা হাতে নেবে।  

এ বিষয়ে পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. হুমায়ুন কবির বাংলানিউজকে বলেন, আশ্রায়ন প্রকল্পগুলোতে আমাদের সব সময়ই নজর থাকে। যে সব আশ্রয়ন প্রকল্পগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী সেগুলোর মেরামতের জন্য ইতোমধ্যেই একাধিকবার চিঠি পাঠানো হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৫৫ ঘণ্টা, জুন ০৯, ২০২০
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।