ঢাকা, বুধবার, ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

বন্দরে খালি থাকছে জেটি

আল রাহমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৫, ২০২৩
বন্দরে খালি থাকছে জেটি সম্প্রতি তোলা ছবি

চট্টগ্রাম: দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দরের জেটিতে জাহাজ আগে আনার জন্য রীতিমতো ধন্না দিতেন শিপিং এজেন্ট, আমদানিকারকরা। করোনা পরবর্তী ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব, ডলার সংকট, এলসি কমে যাওয়াসহ নানা কারণে এখন একাধিক জেটি খালিই থাকছে।

গত নভেম্বরের শেষ দিকে বাল্ক বা খোলা পণ্যবাহী জাহাজের জেটি এবং ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে কনটেইনারবাহী জাহাজের জেটি খালি থাকতে দেখা যায়। এমন দিনও গেছে অর্ধেক জেটি ছিল খালি।

জেটি খালি থাকায় একদিকে বন্দরে জাহাজের গড় অবস্থানের সময় কমছে, রফতানি পণ্য পরিবহনের খরচ কমছে, লিড টাইমে রফতানি সম্ভব হচ্ছে, জাহাজের বাড়তি অবস্থান সময় কমে যাওয়ায় বড় অঙ্কের ডলারও সাশ্রয় হচ্ছে। আবার জাহাজের সংখ্যা কমে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন শিপিং এজেন্টরা।  

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বাংলানিউজকে বলেন, আমদানি কম হলে জাহাজের সংখ্যা কমে যাবে। বিলাসবহুল পণ্য, অত্যাবশ্যকীয় নয় এমন পণ্য আমদানির এলসি কমে গেছে। তৈরি পোশাকের অর্ডার কমে গেছে। বৈশ্বিক মন্দার কিছুটা আঁচ লাগছে মেরিটাইম ওয়ার্ল্ডে। এটা আমাদের জন্য উদ্বেগের। তৈরি পোশাকের যে কনটেইনার ইউএসএ পাঠাতে ২০ হাজার ডলার নেওয়া হতো সেটি এখন ৪ হাজার ডলারে নেমেছে। ইউরোপের কনটেইনার ১৬ হাজার ডলার থেকে নেমে ৩ হাজার ৫০০ ডলারে নেমেছে। চীন থেকে যেহেতু আমদানি বেশি আমাদের দেশে তাই রফতানি পণ্যের কিছু কনটেইনার আমরা জিরো ফ্রেইটে নিয়ে যাই। জাহাজে কার্গো বা কনটেইনার পরিবহন কমে গেলে আমাদের আয়ও কমে যায়।

তিনি বলেন, এর মধ্যে পজেটিভ দিক হচ্ছে আগে জাহাজকে দিনের পর দিন বহির্নোঙরে অপেক্ষা করতে হতো। এতে প্রতিদিন ফুয়েল খরচ, নাবিকদের বেতন ইত্যাদি মিলে একেকটি জাহাজকে ১০-২০ হাজার ডলার ডেমারেজ দিতে হতো। এখন যেহেতু জেটি খালি তাই সরাসরি জাহাজ ভিড়তে পারছে। বহির্নোঙরে অপেক্ষা করতে হচ্ছে না। এককথায় বড় অঙ্কের ডলার সাশ্রয় হচ্ছে।  

শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি আহসানুল হক চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, আমদানি কমছে তাই বন্দরে জাহাজ কম আসছে। তবে এটা আগামী দিনে রিকাভার করবে আশা করি।  

বন্দরের শীর্ষ টার্মিনাল অপারেটর সাইফ পাওয়ারটেকের চিফ অপারেটিং অফিসার ক্যাপ্টেন তানভীর হোসাইন বাংলানিউজকে বলেন, বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে পর্যাপ্ত ‘কি গ্যান্ট্রি ক্রেন’ থাকায় গত ছয় মাস ধরে একটি জাহাজ ৪০ ঘণ্টায় লোড-আনলোড সম্ভব হচ্ছে। আগে সময় লাগত ৬০-৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত। এটি কনটেইনার জাহাজের জট নিরসনে ভূমিকা রাখছে। যেহেতু এনসিটি, সিসিটিতে জাহাজ আনতে হয় জোয়ারের সময় এবং বন্দরের নিজস্ব পাইলটের তত্ত্বাবধানে। তাই পাইলটেজ টাইমের পর কোনো জাহাজ বহির্নোঙরে এলে সেটি জেটিতে আনা সম্ভব হয় না। তখন জেটি খালি থাকে।  

বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বাংলানিউজকে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ দেশের অর্থনীতি সচল রাখতে ২৪ ঘণ্টা অপারেশন সচল রেখেছে। নতুন নতুন কনটেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিং ইক্যুইপমেন্ট সংগ্রহ, দক্ষতা বৃদ্ধি, অটোমেশন ইত্যাদি কারণে জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ে গতি এসেছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে জাহাজ পণ্য খালাস করে বন্দর ছাড়তে পারছে। ২০২১ সালে চট্টগ্রাম বন্দর ৪ হাজার ২০৯টি জাহাজ হ্যান্ডলিং করেছিল, সদ্য বিদায়ী ২০২২ সালে ৪ হাজার ৩৬১টি জাহাজ হ্যান্ডলিং করেছে। প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৬ শতাংশ।

তিনি জানান, ২০২২ সালে কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ৩১ লাখ ৪২ হাজার ৫০৪ টিইইউস, আগের বছর ছিল ৩২ লাখ ১৪ হাজার ৫৪৮ টিইইউস। প্রবৃদ্ধি কমেছে ২ দশমিক ২ শতাংশ। ২০২২ সালে কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে ১১ কোটি ৯৬  লাখ ৬৫ হাজার ৬৮২ টন, ২০২১ সালে ছিল ১১ কোটি ৬৬ লাখ ১৯ হাজার ১৫৮ টন। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২ দশমিক ৬ শতাংশ।  

বাংলাদেশ সময়: ২১০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৫, ২০২৩
এআর/পিডি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।