ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

দিল্লি কত দূর?

মাহমুদ মেনন, হেড অব নিউজ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১৪
দিল্লি কত দূর?

রাজধানী এক্সপ্রেস থেকে: ভারত রেলের বড় কর্মকর্তা উঠলেন স্ত্রী পরিজন নিয়ে। টিটি বাবু ছুটে এলেন, সঙ্গেও ছিলেন রেলের কর্তা ব্যক্তিদের একজন।

এতবড় কর্মকর্তার পক্ষে থ্রি-টায়ার আসন বিন্যাসে মানায় না। কিছুক্ষণেই জানা গেলো আর এক-দুটি পদোন্নতি হলেই মহাব্যবস্থাপকের পদ পেয়ে যাবেন। টিটি বাবুসহ অন্যদের মধ্যে তো একটু অস্বস্তি হবেই। তারা খুব করে চাইলেন, বড় কর্মকর্তাকে অন্য কোনো বিলাসী কম্পার্টমেন্টে নিয়ে যেতে। কিন্তু বিনয়ী কর্মকর্তা রাজি হলেন না। বললেন, যেখানে টিকিট পেয়েছি থাকি না সেখানেই। স্ত্রী-কন্যা নিয়ে থ্রি-টায়ার কম্পার্টমেন্টের মাচায় চড়ে আসন নিলেন।

এই কম্পার্টমেন্টেই আরও ছিলেন একজন বড় ব্যবসায়ী, ইন্ডিয়ান আর্মিতে সাপ্লায়ার। আরেকজন বড় সেনা কর্মকর্তা। সবারই সাধারণের মতো যাত্রা।

রাজধানী এক্সপ্রেসে কলকাতা থেকে দিল্লি। বিকেল ৪টা ৫০ মিনিটের ট্রেন। ছাড়ার সময় রাইট টাইম... নো কমপ্লেইন।

বি-থ্রি বগির সামনে এসে যখন দাঁড়াই, দেখি এদিকেও দীর্ঘায়িত, ওদিকেও দীর্ঘায়িত রাজধানী এক্সপ্রেস। কতবড় এই ট্রেন। ভেতরে এ-মাথা ও-মাথা হেঁটে দেখে আসতে প্রায় আধাঘণ্টা পার হয়ে গেলো। ট্রেনে উঠে প্রশ্ন জাগলো- দিল্লি কত দূর? কেমনই হবে সে যাত্রা।

ভেতরটা অপেক্ষাকৃত পরিচ্ছন্ন। অপেক্ষাকৃত বলছি বাংলাদেশের রেলগুলোর সঙ্গে তুলনা করেই। তবে এটাও যে নোংরা নয় তা বলা যাবে না।

প্রথমে দুই বন্ধুকে পরে দুই বান্ধবীকে একই কম্পার্টমেন্টে থাকার সুযোগ করে দিতে একবার বগি, একবার সিট বদলাতে হলো। টিটি বাবু মেনে নিলেন, বোঝা গেলো রেলে এই ছাড়টুকু আছে বাংলাদেশের মতোই।

ট্রেনে খাবার দেওয়া হবে আগেই জানা ছিলো। কলকাতা-দিল্লি ২২৮০ রুপি ভাড়া। খাবারের দাম নাকি ভাড়ার সঙ্গেই কেটে নেওয়া হয়। খারাপ নয়, ট্রেন ছাড়তেই পাতে পড়লো এক প্যাকেট ডালভাজা, শনপাপড়ি, একটি সিঙারা, এক কাপ চা।

ব্যবসায়ী সহযাত্রীটি গোড়া থেকেই সমালোচক। খুব করে বলছিলেন, এরা আগে কত ভালো খাবার দিতো, এখন এই এতটুকু সিঙারা!

আগেরটির আকার জানা ছিলো না বলে সহযাত্রীর ক্ষোভে সামিল হওয়া গেলো না। বললাম আমার দেশে এই খাবারের ব্যবস্থাই নেই। তাই যা পাই তাই সই।

ডিনারের আগে দুটি ব্রেড স্টিক, একটুকরো মাখনসহকারে এক কাপ ভেজিটেবল স্যুপ। খারাপ নয়, তবে মাখনের টুকরো আগের চেয়ে যে ছোট তাও ওই যাত্রীর কাছেই জানা গেলো।  

একপর্যায়ে রেলের কর্মকর্তার পরিচয় জেনে তাকে ধরলেন, কেনো সার্ভিস এতো কমে যাবে। রেলের অর্থ বিভাগের এই কর্তাব্যক্তি নিরীহ প্রকৃতির। সেবার অংশটি তারও নয়, ফলে উত্তর নেই তার কাছে। বললেন, অভিযোগ থাকে তো লিখিত অভিযোগ করে দিন।
 
স্ত্রী-কন্যার সামনে বিষয়টি নিয়ে কথা বাড়াতে চাননি নিশ্চয়ই।

বললাম, তাও তো খাবার পাওয়া যাচ্ছে। দূরের যাত্রায় এটাতো ভালো। দমলেন না সহযাত্রী, বললেন, কেনো ভাড়ার সঙ্গেই খাবারের দাম নিয়ে নিচ্ছে।

হিসাব কষলে দেখা যাবে, ১৪০০ মাইলে ২২৮০ টাকায় এসি স্লিপিং কম্পার্টমেন্টে ভাড়া ২২৮০ রুপি। ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে সম্ভবত ১২০০টাকা। মাইলে হিসাবে এটা একটু সস্তাই হবে। তার ওপর খাবার দেওয়া হচ্ছে। খারাপ কী!
 
এভাবেই রাতের খাবার এলো। কাগজে মোড়ানো দু’টো পরোটা, কারো চিকেন, কারো ভেজিটেবল, একবাটি ভাত, একবাটি সব্জি, এক বাটি ডাল। পুরো খাবার খেয়ে ফেললে কম নয়, তবে সব ধরনের খাবার মিলিয়ে পরিমাণে কম, তা রেলের কর্মকর্তাই প্রমাণ করলেন, আরও একবাটি অতিরিক্ত ভাত আর চিকেন চেয়ে নিয়ে। তাকে দিতে সদাই প্রস্তুত রেলের লোকেরা। জানাজানি হয়ে যাওয়ায় কেউ কেউ এসে আরও লাগবে কি? সে প্রশ্ন বারবারই করে যাচ্ছিলো। তবে অন্যরা তাতেই সন্তুষ্ট থেকে রাতের ঘুমের আয়োজনে ব্যস্ত হলো।

সকাল সাড়ে ছয়টায় এক প্রস্থ চা পরিবেশন হলো। যারা ঘুমিয়ে তারা পেলো না, যারা জেগে তারা পেলো। তবে ঘুম ভেঙে ক্যান্টিনের কাছে গিয়ে চেয়ে চেয়ে নিতে দেখা গেলো অনেককে।

সকাল সাড়ে আটটার দিকে এলো নাস্তা। দু’স্লাইস ব্রেড, একটুকরো মাখন, দু’টি ছোট ছোট আলুর চপ, আর একটু অতিঅল্প সবজি। এবার সত্যিই মনে হলো খাবার কম।

রেলের কর্তাব্যক্তি জানালেন, রেলের এই খাবার পরিবেশনে ক্যাটারিংয়ের দায়িত্ব সরকারের নয়। এটি আউটসোর্সিং করা হয়েছে। সরকার এর মাধ্যমে সেবার মানটিই বাড়াতে চাইছে। এছাড়া, রেল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার দায়িত্বও ছাড়া হয়েছে আউটসোর্সিংয়ে। এতে সরকার ও যাত্রী উভয়ই উপকৃত হচ্ছে জানিয়ে নাম প্রকাশ না করতে চেয়েই তিনি বলেন, সরকারি কর্মীরা কেবল বেতনই নিতো, সেবা বলে কিছুই থাকতো না। চতুর্থ শ্রেণি পর্যায়ে রেলে প্রায় ৩০ হাজার টাকা বেতন দিতে হতো, তারা কেবল বেতন বোনাস নিতো, কাজ করতো না, এখন বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান কাজটি করছে, সেবা ভালো না হলে তারা বাদ পড়ে যাবে এই ভয় আছে। এ কারণে ট্রেনে খাবারের মান ভালো এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নও।

পরিমাণ কম তবে মান ভালো সে নিয়ে ব্যবসায়ী সহযাত্রীটিও একমত।

রেল কর্মকর্তা জানালেন, সারা দেশজুড়ে রেলের সেবা দিয়ে যাচ্ছে সরকার। তবে এর মধ্যে রাজধানী এক্সপ্রেসে সেরা সেবাটিই পাওয়া যায়।

সেই সেবা নিতে নিতে ১৮ ঘণ্টা, ঘুমিয়ে গল্প করে ভারতের রাজধানীতে পৌঁছালাম। মাঝখানে পার হয়ে গেলো- গঙ্গার তীরধরে বারানসী, লক্ষ্নৌ, এলাহাবাদ, কানপুর, জয়পুর আর যমুনা তীরের আগ্রা। বোঝা গেলো দিল্লি সত্যিই অনেক দূর!

বাংলাদেশ সময়: ২১৩৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১৪

** আহমেদাবাদের কাপড় জগতে নয়া মনীষা রাণী!
** মোদীর গুজরাট উন্নয়নের আইকন ‘গিফটসিটি’
** চকচকে পরিপাটি ‘গান্ধীনগর’
** আহমেদাবাদ থেকে বাংলাদেশ যাচ্ছে ব্লাড অ্যাডমিনিস্ট্রেশন
** ঘুরে আসি আজমীর
** দিল্লি প্রেসক্লাবে সাবসিডি নেই!
** দিল্লির রাতে সস্তা দোকানিরা...

** মাকরানার হোয়াইট মার্বেলেই অনিন্দ্য তাজমহল

** দিল্লির আশীর্বাদ দিল্লি মেট্রো,ঢাকা মেট্রো কবে

** অ্যারাভেলি পর্বতে ঘেরা ভ্রাতৃত্ব

** ৩৬ ঘণ্টার বিচিত্র রূপ!

** ইন্টারনেটে বাংলাদেশ এগিয়ে

** সেই তো আমরাই!
** লাইফলাইন অব ইন্ডিয়া
** ভারতীয় ইমিগ্রেশনে বাংলাদেশের মর্যাদা
** গ্রীনলাইনে ভুগতে ভুগতে কলকাতা

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।