ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

বর্ধমানে আরও এক জঙ্গি ডেরার সন্ধান

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৪৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ৮, ২০১৪
বর্ধমানে আরও এক জঙ্গি ডেরার সন্ধান

কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে আরও একটি জঙ্গি ঘাঁটির সন্ধান মিললো। যদিও সেখান থেকে আগেই গা ঢাকা দিয়েছে জঙ্গিরা।

বুধবার এই জঙ্গি ঘাঁটির সন্ধান পেয়ে হানা দেয় তদন্তকারী কর্মকর্তারা।

ধারণা করা হচ্ছে, অপর মূল অভিযুক্ত কওসর ওই বাড়িতেই থাকতেন। বর্ধমান বিস্ফোরণের পরের দিনেই পালিয়ে যায় ওই বাড়ির লোকজন।

প্রতিবেশীদের সন্দেহ হওয়ায় তারা পুলিশকে খবর দেন। পরে সেখানে তল্লাশি চালায় গোয়েন্দারা। ওই বাড়ি থেকে কয়েকটি কার্তুজ উদ্ধার করা হয়েছে বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।

অপরদিকে বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী রাজনাথ সিংকে ঘটনার বিস্তারিত প্রতিবেদন দিয়েছে ভারতের স্বরাষ্ট্র দপ্তর। সূত্রটি জানিয়েছে, বেশ কিছুদিন ধরেই পশ্চিমবঙ্গে মৌলবাদীদের সক্রিয়তা বেড়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার খাগড়াগাড়ে যে পরিমাণ এবং যে ধরনের বিস্ফোরক উদ্ধার হয়েছে তা নিয়ে বেশ কয়েকটি প্রশ্নের মুখোমুখি গোয়েন্দারা।

সূত্রটি জানায়, মোট ৮০টি বোমা বানাবার বিস্ফোরক পাওয়া গেছে। পাওয়া গেছে রকেট লঞ্চার বানাবার নকশাও।

বিস্ফোরকের পরিমাণ দেখে গোয়েন্দারা মনে করছেন, শুধু পশ্চিমবাংলায় বিস্ফোরণের জন্য এই পরিমাণ বিস্ফোরক বর্ধমানে জমা করা হয়নি। বর্ধমান থেকে অন্য কোথাও বিস্ফোরক পাচার করা পরিকল্পনাও ছিল জঙ্গিদের।

ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় বাংলাদেশের নিষিদ্ধ সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদিনের (জেএমবি) যোগাযোগের বিষয়টি সামনে এসেছে। অভিজ্ঞ মহলের ধরণা, আওয়ামী লীগ সরকার প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর বাংলাদেশে মৌলবাদীদের উপরে কড়া মনোভাব নিয়েছে প্রশাসন। আর তার ফলেই সম্ভবত চাপের মুখে পড়ে সেখান থেকে অস্ত্র নির্মাণ কারখানা সরিয়ে ফেলতে বাধ্য হয়েছে জঙ্গিরা। বেশ বড় পরিমাণে অর্থেরও হদিশ পেয়েছে গোয়েন্দারা। এই বিপুল পরিমাণ অর্থের জোগান নিয়েও নানা প্রশ্ন সামনে আসতে শুরু করেছে।

গোয়েন্দারা মনে করছেন, প্রতিবেশী রাষ্ট্র থেকে হুন্ডির মাধ্যমে অর্থের লেনদেন করা হতো। আরও জানা গেছে, গোটা অর্থের লেনদেন করার কোনো ধরনের ব্যাঙ্কের সহায়তা নিতো না জঙ্গিরা।

প্রশ্ন উঠেছে বিস্ফোরকের ধরণ নিয়েও। সূত্রের মাধ্যমে জানা গেছে, যে ধরনের বিস্ফোরক উদ্ধার হয়েছে সেই ধরনের বিস্ফোরক ব্যবহার করা হয়েছিল ২০১০ সালে ভারতের পুনের জার্মান বেকারি বিস্ফোরণে।

পুনের জার্মান বেকারি বিস্ফোরণে আল-কায়দা জঙ্গি গোষ্ঠীর হাত আছে বলে মনে করা হয়। তবে কি আল-কায়দার যোগ আছে এই বর্ধমান বিস্ফোরণের ক্ষেত্রে? এই প্রশ্নও গোয়েন্দাদের সামনে উঠে এসেছে।

আশ্চর্যের বিষয় হলো, বর্ধমান পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী জেলা নয়। বর্ধমান পশ্চিমবঙ্গের ঠিক মাঝামাঝি। তবে কেন বর্ধমান জেলাকে অস্ত্র কারখানা হিসেবে বেছে নেওয়া হল?

প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বিগত এক দশকে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলায় কোনো জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেনি। আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে জড়িত কেউ ধরাও পড়েনি। ফলে শান্তিপূর্ণ এই জেলাকেই সন্ত্রাসের আঁতুড় ঘর হিসেবে বেছে নিয়েছিলো জঙ্গিরা।

এসব কারণেই মনে করা হচ্ছে, শুধু পশ্চিমবঙ্গে ব্যবহার না করে বর্ধমান থেকে অস্ত্র বিভিন্ন জায়গায় রফতানির পরিকল্পনা করেছিলো জঙ্গিরা।

গোয়েন্দারা মনে করছেন, এই জঙ্গি পরিকল্পনার সঙ্গে যোগ থাকতে পারে ভারতে নিষিদ্ধ হওয়া সংগঠন সিমি এবং ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন এর। এছাড়াও অন্যান্য আন্তর্জাতিক জঙ্গি গোষ্ঠীর যোগাযোগ থাকতে পারে এতে।

গত ৩ সেপ্টেম্বর আল কায়দা প্রধান আয়মান আল জাহেরি এক ভিডিও বার্তায় ভারতে তাদের শাখা বিস্তারের কথা ঘোষণা করেছিল। এই বিষয়টিও নজরে রেখেছেন গোয়েন্দারা।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৪৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৮, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।