ঢাকা, সোমবার, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

কলকাতায় আমজনতার বাহন সাইকেল

ভাস্কর সরদার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৪৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৬
কলকাতায় আমজনতার বাহন সাইকেল ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কলকাতা: কলকাতা মেট্রো স্টেশনের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় হাজার তিনেক সাইকেল রাস্তার ধারে রাখা দেখে বাংলাদেশ থেকে আসা এক বন্ধু জানতে চেয়েছিলেন, একসঙ্গে এতো সাইকেল কেন!

তার উত্তর দিতে গিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়, কীভাবে কলকাতায় সকাল থেকে রাতের সঙ্গে জুড়ে রয়েছে সাইকেল। মানুষের ঘুম থেকে উঠে অফিস যাত্রা ও কাজ সেরে বাড়ি ফেরাসহ অনেক কাজই হয় সাইকেলের উপর।



বাড়িবাড়ি খবরের কাগজ পৌঁছে যায় সাইকেল চড়েই। শুধু খবরের কাগজ কেন, সকালবেলায় প্রতিটি বাড়িতে দুধের প্যাকেট থেকে গ্যসের সিলিন্ডার পৌঁছানোর মাধ্যমও এই দুৎচাকা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কলকাতায় বাড়ে সাইকেলের চলাচল।

গৃহকর্তার বাজার যাওয়া থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীদের স্কুলে যাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম সাইকেল। শহরের বেশিরভাগ পরিবারে কর্তা-গিন্নি দু’জনই চাকরি করেন। কাজের দিনে বাজারে গিয়ে মাছ কেনার সময় তাদের নেই। তাই সকাল সকাল টাটকা মাছ নিয়ে সাইকেলে করেই পাড়ায় পাড়ায় হাজির হয়ে যান একদল মাছ বিক্রেতা। ব্যস্ত সময়ে মাছের বাজার না ঘুরে বাড়িতে বসেই মেলে মাছ।

একসময় ধোপা গাধার পিঠে চাপিয়ে কাচা কাপড় দিয়ে আসতেন বাড়ি বাড়ি। আজকের দিনে সকালে ইস্ত্রি করা জামা-প্যান্ট বাড়িতে পৌঁছে যায় সাইকেলে চেপে।

আশেপাশের এলাকার বেশিরভাগ মানুষ বিভিন্ন রেলস্টেশন থেকে কর্মক্ষেত্রে যাওয়ার আগে ওইভাবেই সাইকেল জমা রাখেন।

কলকাতার কারখানাগুলোতে বেশিরভাগ কর্মচারী আসেন সাইকেলে চেপে। এজন্য কারখানার ভিতরে থাকে সাইকেল স্ট্যান্ড। এছাড়া সরকারি-বেসরকারি অফিসের কর্মী, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীদের অনেকেই বিভিন্ন প্রয়োজনে সাইকেল ব্যবহার করেন।

সম্ভবত এ বিষয়টিকে মাথায় রেখেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সব শিক্ষার্থীদের সাইকেল দেওয়ার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন।

কলকাতার সঙ্গে সাইকেল চালনার সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। এ শহরে এসে অমিতাভ বচ্চন তার পুরনো দিনকে ফিরে পেতে রাস্তায় সাইকেল চালান।

নিয়মিত সাইকেল চালিয়ে যারা কাজকর্ম সারেন তাদের দাবি, কম খরচে যাতায়াত, সরকারি-বেসরকারি বাহনের জন্য অপেক্ষা না করাসহ কর্মব্যস্ত সময়ে সাধারণ যানবাহনের ভিড় এড়িয়ে সহজে চলাফেরার জন্য আদর্শ সাইকেল।

অনেকের মত, সারাদিন অফিসে বসে কাজের পর সাইকেল চালিয়ে ব্যায়ামও সেরে নেওয়া যায়।

সাইকেলের রাজনৈতিক দিকটিও কম জরুরি নয়। কলকাতার যেকোনো রাজনৈতিক মিছিলে পায়ে হাঁটা মানুষের পিছনে থাকে সাইকেলের মিছিল। বিশেষ করে বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর রাজনৈতিক সংস্কৃতির অঙ্গ, সাইকেল মিছিল।

এবার সাইকেলের দামের দিকে নজর দেওয়া যাক। কলকাতায় যে সাইকেলগুলো ব্যবহার হয় তার প্রায় ৯৯ শতাংশ ভারতে তৈরি। হিরো, অ্যাটলাস, হারকিউলিস, অ্যাভন প্রভৃতি ব্র্যান্ডগুলো বেশ জনপ্রিয়। নতুন সাইকেলের বাজার দর চার হাজার থেকে সাত হাজার রুপি। পাশাপাশি ব্যবহার করা সাইকেল বিক্রি হয় দুই হাজার থেকে তিন হাজার রুপির মধ্যে।

কলকাতাবাসীর বড় অংশের দাবি, শহরের প্রতিটি রাস্তায় সাইকেল চালনার জন্য আলাদা ‘লেন’ করা হোক।

যদিও ব্রিটিশ আমলে তৈরি হওয়া শহরে সেই স্থান সংকুলান হওয়া প্রায় অসম্ভব। তবে কলকাতার পাশে গড়ে ওঠা উপনগরীগুলো ও তার সংলগ্ন রাস্তায় অনেক ক্ষেত্রে আলাদা লেনের ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে।

আগামী দিনে দূষণ রোধ করতে হলে কলকাতার মতো শহরে আরও বেশি করে সাইকেলের ব্যবহার বাড়ানো দরকার। এর ফলে একদিকে যেমন বাঁচবে প্রকৃতি, অন্যদিকে মানুষ সমানভাবে উপকৃত হবে বলে দাবি অধিকাংশ সাইকেলচালকদের।

বাংলাদেশ সময়: ০১৪৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৬
ভিএস/এসএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।