ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

গঙ্গার ঘাট এবং এসিবকে ঘিরে শহর-কলকাতা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩৬ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০১৬
গঙ্গার ঘাট এবং এসিবকে ঘিরে শহর-কলকাতা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

কলকাতা:  গঙ্গাকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে শহর কলকাতা। উত্তর থেকে দক্ষিণে শহরের গা ঘেঁষে চলেছে গঙ্গা।

আর গঙ্গার এই চলার পথে তৈরি হয়েছে বেশ কয়েকটি ঘাট। প্রতিটি ঘাটের সঙ্গে জুড়ে আছে শহরের নানা সময়ের ইতিহাস।

ব্রিটিশ রাজ থেকে কলকাতার ‘বাবু কালচার’ কিংবা রানি রাসমণির ইতিহাস থেকে হাল আমলের মিলেনিয়াম পার্ক, সবকিছুই ছুঁয়ে আছে গঙ্গাকে। গঙ্গা নদী এবং কলকাতা এক যুগপৎ চরিত্র নিয়ে বিরাজ করছ প্রায় তিনশ বছরের বেশি সময় ধরে।

সময়টা ১৬৯০ সালের মার্চ মাস। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নবাব ঔরঙ্গজেবের  কাছে দরখাস্ত করলেন কলকাতাতে একটি কারখানা স্থাপনের জন্য। আবেদন মঞ্জুর হলো। সেই বছরই আগস্ট মাসে কলকাতায় হাজির হলেন জব চার্নক। তিনি এসেছিলেন এই নদীপথ ধরেই।

একদিকে ‘মিলেনিয়াম পার্ক’, অন্যদিকে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল আর কলকাতা রেসকোর্সের কিছু অংশ নিয়ে অবস্থিত কলকাতার সব থেকে পরিচিত নদীঘাট ‘আউট্রাম ঘাট’। ইতিহাসের পাতা থেকে জানা যায়, সেই সময়ের নদী-বাণিজ্যের অন্যতম ঘাট ছিল ‘আউট্রাম ঘাট’ । উনিশ শতকের শেষ লগ্নে নির্মিত এই ঘাট থেকে তৎকালীন পূর্ববাংলা  এবং বার্মাতে পণ্য যাওয়া-আসা করত।

এরপরের পরিচিত ঘাটটির নাম বাবুঘাট। নামের সঙ্গেই জড়িয়ে আছে ইতিহাস। কলকাতার গঙ্গাস্নানের যে ঐতিহ্য আছে, সেই ঐতিহ্যের বড় অংশই এই ঘাটকে ঘিরে। রানী রাসমণির স্বামী বাবু রাজচন্দ্র দাসের নামে এই ঘাট নির্মাণ করা হয়েছিল। সেই থেকে এই ঘাট বাবুঘাট নামে পরিচিত।

কলকাতার বাবুঘাটের  পাশেই বড়বাজার। আর ঠিক তার বিপরীতে ইডেন গার্ডেন। অতীত দিনে দূরদূরান্ত থেকে জিনিসপত্র বাবুঘাটে এনে বড়বাজারে বিক্রি করা হতো বলে জানা যায়।
 
এর পরেই নাম করতে হয় প্রিন্সেপ ঘাটের। ব্রাহ্মিণচল লিপি’ পাঠোদ্ধারের অন্যতম কারিগর জেমস প্রিন্সেপ-এর নামে এই ঘাট নির্মাণ করে ব্রিটিশরা। জেমস প্রিন্সেপ ছিলেন ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর সদস্য। আজ এই ঘাটটি  কলকাতার  মানুষের অন্যতম প্রিয়। গঙ্গাবক্ষে নৌকাবিহারের জন্য এই ঘাটে প্রতিদিন বহু মানুষ হাজির হন।
 
তবে ইতিহাসের পাতায় ব্রিটিশদের আগেই আরেক বিদেশি জাতির কলকাতায় আসার প্রমাণ পাওয়া যায়, তারা আর্মেনিয়ান। এই সূত্রে আর্মেনিয়ানদের ভারতে আসার ইতিহাসটি স্মরণ করা যেতে  পারে।

জানা যায়, আলেকজান্ডার যখন আর্মেনিয়া হয়ে ভারতের দিকে আসছিলেন তখন কিছু আর্মেনিয়ান তার সৈন্যবাহিনীতে যোগ দিয়ে ভারতে রওনা দেন। তার পরবর্তী সময় আর্মেনিয়ান ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন সময় ভারতে এসেছেন।

জানা যায়, আর্মেনিয়ানরাই প্রথম বিদেশি জাতি যারা কলকাতায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। তারা এখানে তাদের বাণিজ্যিক কাজকর্ম যথেষ্ট পরিমাণে বৃদ্ধি করেছিলেন বলেই জানা যায়। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে আর্মেনিয়ান শিল্পকর্মের নিদর্শন পাওয়া যায় । এসবের মধ্যে কলকাতার ‘আর্মেনিয়ান ঘাট’ অন্যতম।

কলকাতার কালীঘাটের কথা না বললে অসম্পূর্ণ থেকে যায়। কলকাতার সব থেকে পরিচিত তীর্থ স্থানটি এই ঘাটের ধারেই অবস্থিত। গঙ্গার পাড়ে রয়েছে বিখ্যাত  কালিমন্দির। মনে করা হয়, মহারাজা প্রতাপাদিত্যের কাকা যশোরের রাজা বসন্তকৃষ্ণ রায় দেব এই মন্দির নির্মাণ করিয়েছিলেন। বর্তমানের মন্দিরটি অবশ্য কলকাতার শেষ জমিদার সাবর্ণ রায়চৌধুরী নির্মাণ করিয়েছিলেন বলে জানা যায়।

এছাড়া উত্তর থেকে দক্ষিণ কলকাতাকে ঘিরে থাকা গঙ্গার বিভিন্ন জায়গায় আছে বেশ কিছু ঘাট। এসবের মধ্যে আছে  মতিলাল শীল ঘাট, লোহা ঘাট, বাগবাজার ঘাট, বিচলি ঘাট, কুমারটুলি ঘাটসহ আরও বেশ কয়েকটি।

প্রতিটি ঘাটের সঙ্গে জুড়ে আছে ইতিহাসের বিভিন্ন নজির। যা কোথাও আজও স্পষ্ট, আবার কোথাও সেগুলি চলে গেছে বিস্মৃতির অতলে। কলকাতার গড়ে ওঠার পেছনে গঙ্গা নদীর অবদান সব থেকে বেশি বলে মনে করেন ওয়াকিবহাল মহল। সেই কথা যে সামগ্রিকভাবে ঠিক তা ঘাটগুলির ইতিহাসের দিকে নজর দিলে আলাদা করে বলার অপেক্ষা রাখে না।

বাংলাদেশ সময়: ১১৩৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০১৬
এস .এস/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।