ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

নিম্নমানের ভারতীয় পেঁয়াজে ক্রেতাদের অস্বস্তি, দেশির ঝাঁজ কমছেই না

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৯ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০২৩
নিম্নমানের ভারতীয় পেঁয়াজে ক্রেতাদের অস্বস্তি, দেশির ঝাঁজ কমছেই না

ঢাকা: গেল রোজার ঈদের পর থেকে হঠাৎ বাজারে পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকে। তখন বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ না থাকায় দেশির দাম উঠেছিল প্রতিকেজি ১০০ টাকার ওপরে।

এ দেশি পেঁয়াজের দাম কমাতে সরকার পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয় এ ভেবে যে, দেশি পেঁয়াজের দাম কমবে। বর্তমানে পাইকারি বাজারে ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের দাম প্রতিপাল্লা (৫ কেজি) ১৮০ টাকা, যা খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়। যদিও ক্রেতারা অভিযোগ তুলছেন, আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ খুবই নিম্নমানের এবং বেশির ভাগই দুর্গন্ধযুক্ত। তাই দাম বেশি হলেও দেশি পেঁয়াজের প্রতি এসব ক্রেতাদের আগ্রহ বেশি।

আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ব্যবসায়ীরা দেশি পেঁয়াজের বাড়তি দাম রাখছেন। ফলে আমদানির পরও বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম খুব একটা কমেনি। খুচরায় ভালো মানের প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। বর্তমানে কারওয়ান বাজারের মতো পাইকারি বাজারে রাজশাহীর তাহেরপুর থেকে আসা ভালো মানের দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতিপাল্লা (৫ কেজি) ৩৮০ টাকায়। অর্থাৎ প্রতিকেজি পাইকারিতেই দাম পড়ে ৭৬ টাকা। রাজশাহীর এ দেশি পেঁয়াজ খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়।

শুক্রবার (২৩ জুন) সরেজমিনে রাজধানীর পাইকারি বাজার হিসেবে পরিচিত কারওয়ান বাজারের সঙ্গে খিলগাঁও, বনশ্রী ও গোড়ান এলাকাসহ বেশকিছু এলাকার খুচরা বাজার ঘুরে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে পেঁয়াজের দামের এমন চিত্র দেখা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা প্রতিকেজি। আর এ পেঁয়াজটাই পাইকারি বাজারে প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৬ টাকায়।

আর রাজশাহীর তাহেরপুর থেকে আসা ভালো মানের দেশি পেঁয়াজ খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়, যা পাইকারি বাজারে প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৭৬ টাকায়। ফরিদপুর ও পাবনা থেকে আসা দেশি পেঁয়াজ পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬৪ টাকায়। যার আকার কিছুটা বড় রাজশাহীর পেঁয়াজের তুলনায়। তবে বাজারে বর্তমানে ভালো মানের দেশি পেঁয়াজ আসছে রাজশাহীর তাহেরপুর থেকে এমনটাই জানিয়েছেন বেশির ভাগ পাইকারি বিক্রেতারা।

যদিও দেশি পেঁয়াজের তুলনায় বাজারে আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজের দাম অনেকটাই কম। কিন্তু দাম কম হলেও এ আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ ক্রেতারা কিনতে আগ্রহী হচ্ছেন না।

এ কথার সত্যতা পাওয়া যায় দক্ষিণ বনশ্রীর মুদি দোকানি মো. মাসুদের সঙ্গে কথা বলে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমি গত সপ্তাহে এক বস্তা ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ এনেছি, কিন্তু এখনও বিক্রি করে শেষ করতে পারিনি। পেঁয়াজের মান এতটা ভালো না। বুঝতে পারিনি এভাবে ধরা খাব। আর দেশি পেঁয়াজ আনিনি কারণ দাম বেশি। দেশির দাম শুনলে কাস্টমার নানা কথা কয়, তাই দেশি পেঁয়াজ আনি না। তবে ভালো মানের ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ বাজারে আসাতে দেশি পেঁয়াজের দামে সিন্ডিকেট করতে পারবে না। মানুষ বেশি কিনছে দেখে দেশি পেঁয়াজের দাম বেশি।

কারওয়ান বাজার থেকে ৩৮০ টাকায় ভালো মানের ৫ কেজি দেশি পেঁয়াজ কেনেন বেসরকারি চাকরিজীবী মো. এনামুল হক। কথা হলে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমদানি করার পরও বাজারে পেঁয়াজের দাম এতটা কমেনি। যে পরিমাণ কমার কথা ছিল তার থেকে এ সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম কিছুটা বেড়েছে। গত সপ্তাহে যে পেঁয়াজ ৭০ টাকা করে কিনেছি, তা এ সপ্তাহে ৭৬ টাকা করে পাইকারি বাজার থেকে কিনতে হচ্ছে। বর্তমান বাজারের অবস্থা খুব বেশি ভালো না।  

কারওয়ান বাজারে আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ কিনছিলেন ফরিদ মিয়া। তেজগাঁও এলাকার বিভিন্ন জায়গায় রাজমিস্ত্রির কাজ করেন তিনি। দুপুরের দিকে কারওয়ান বাজারে একটি পাইকারি পেঁয়াজের দোকান থেকে অনেকক্ষণ সময় নিয়ে বেছে বেছে ৫ কেজি পেঁয়াজ ১৮০ টাকায় কেনেন তিনি। কথা হলে ফরিদ মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, বাজারে সবকিছুর দামই বেশি, কী আর করা এভাবেই চলতে হবে। খরচ বাঁচাতে কারওয়ান বাজার আসছি। বেছে ৫ কেজি পেঁয়াজ কিনলাম ১৮০ টাকায়। এ দামে রোজার ঈদেও ৫ কেজি ভালো মানের দেশি পেঁয়াজ কিনেছি। তবে এখন পেঁয়াজের দাম এত বেশি যে দেশি পেঁয়াজ কেনা সম্ভব না। আর বাজারে ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ যা আছে তাও এতটা ভালো না। ভর্তা থেকে শুরু করে যা কিছুই বানান পেঁয়াজ ছাড়া খেতে ভালো লাগে না।

মাছ-মাংস খাওয়ার কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, মাসে একবার ফার্মের মুরগি খাই। মাছ খেয়ে পোষায় না। তাই বেশিরভাগ সময় ডিম আর ভর্তার ওপরই চলতে হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৩ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০২৩
ইএসএস/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।