ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

শীতের অজুহাতে চড়া মাছের বাজার

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০২৪
শীতের অজুহাতে চড়া মাছের বাজার

ঢাকা: শীতের অজুহাতে রাজধানীর বাজারগুলোতে বেড়েছে মাছের দাম। বিক্রেতারা বলছেন, গত কয়েক দিনের ঠান্ডায় জেলেরা মাছ কম ধরছেন।

ফলে বাজারে মাছের সরবরাহ কমেছে, বেড়েছে দাম। তবে ক্রেতারা বলছেন, বাজারে সব জিনিসেরই দাম বেশি। শীত শুধু অজুহাত।

মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটের খুচরা মাছ বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে স্বাভাবিকই আছে মাছের সরবরাহ। তবে ক্রেতার সংখ্যা তুলনামূলক কম।

বিক্রেতারা জানান, বর্তমানে বাজারে আকার ও মানভেদে প্রতি কেজি রুই মাছ ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, কাতল ২৫০ থেকে ৫০০ টাকা, তেলাপিয়া ১৬০ থেকে ২৪০ টাকা, বোয়াল ৬৫০ টাকা, সরপুঁটি ২০০ থেকে ২২০ টাকা, মিরকা ২৫০ টাকা, কই ২২০ থেকে ২৩০ টাকা, দেশি কই ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা, সিলভার কার্প ১৮০ থেকে ২৬০ টাকা, পাঙ্গাশ ২০০ থেকে ২২০ টাকা, বাইলা ৩০০ টাকা, পোয়া মাছ ৩২০ থেকে ৪৫০ টাকা, মৃগেল ৩০০ টাকা, টুনা ৩০০ টাকা, চাপিলা ২০০ থেকে ৪০০ টাকা, সুরমা ২৫০ টাকা, গলদা চিংড়ি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, বাগদা চিংড়ি ৭০০ টাকা, কোরাল ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, ফাইস্যা ৫০০ টাকা, তপসী মাছ ৭০০ টাকা, আইড় ৮০০ টাকা, লাক্ষ্যা মাছ ৭৫০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, টেংড়া ৬০০ টাকা, দেশি পুঁটি ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, কাচকি ৪০০ টাকা, কালিবাউস ৩০০ টাকা, ফলি মাছ ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা, বাইম ৮৫০ টাকা, কাইক্যা মাছ ৪০০ টাকা, ভেদা মাছ ৫০০ টাকা, রূপচাঁদা ১১৫০ টাকা, শোল ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা, দেশি শিং ১০০০ টাকা, চাষের শিং ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, দেশি মাগুর ১০০০ টাকা, চাষের মাগুর ৬০০ টাকা, টাকি ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

বিক্রেতারা জানান, প্রতি বছরই শীতের সময় মাছের দাম একটু বেশি থাকে। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। প্রায় প্রত্যেক ধরনের মাছেই কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা বা তারও বেশি বেড়েছে। পাশাপাশি নদ-নদী, খাল-বিল, পুকুরে মাছের সংখ্যা দিন দিন কমছে বলেও জানান তারা। যার কারণে বাজারে মাছের সংকট রয়েছে বলে দাবি বিক্রেতাদের।

মাছের দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে কারওয়ান বাজারের মাছ বিক্রেতা আল-আমিন বলেন, গত কয়েকদিনের ঠান্ডায় জেলেরা মাছ ধরতে পানিতে কম নামছে। যার কারণে বাজারে মাছের সরবরাহ কম এবং দাম বেশি। কেজিতে ২০-৩০ টাকা দাম বেড়েছে প্রায় সব ধরনের মাছের। এছাড়া বাজারে কোন জিনিসের দাম কম? যে চাল খেতাম ৬০ টাকা কেজি, সেটা এখন ৮০ টাকা হয়েছে। মাছের বাজারে তো এর প্রভাব পড়বেই!



আব্দুর রহমান নামের আরেক বিক্রেতা বলেন, মাছের দাম কম ছিল। গত ১৫-২০ দিন ধরে দাম বেশি। তীব্র শীতের মধ্যে জেলেরা যা মাছ ধরছে, তা তাদেরই লাগছে। যার কারণে বাজারে মাছের সংকট রয়েছে।

কারওয়ান বাজারে মাছ কাটার কাজ করেন রনি দাশ। তিনি বলেন, গত ৩-৪ দিন ধরে মাছের দাম বেড়েছে। কেজিতে ৩০-৪০ টাকা বাড়তি প্রায় সব মাছের। শীতের কারণে বাজারে মাছের সরবরাহও কমেছে।

গণি মিয়া নামের আরেক বিক্রেতার কাছে মাছের দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, কাঁচামালের দামের কোনো ঠিক নাই। আজ বাড়ে তো কাল কমে, পরশু আবার বাড়ে। এখন মাছের একটু দাম বেশি। তবে সেটি আবার কমবে। আবার দেখা যাবে বেড়ে যাবে।

মাছের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে ইলিশের। এক কেজি বা তার বেশি ওজনের ইলিশের কেজি রাখা হচ্ছে ২৪০০ টাকা, ৬০০-৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি রাখা হচ্ছে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা, আধা কেজি ওজনের ইলিশের কেজি রাখা হচ্ছে ১১০০ টাকা। বর্তমানে জাটকা ধরা, মজুদ ও বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বাজারে জাটকা পাওয়া যাচ্ছে। বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা কেজি দরে।

ইলিশের দাম বাড়ার কারণ হিসেবেও শীতকে দায়ী করছেন বিক্রেতারা। তবে কারওয়ান বাজার রেলগেটে অবস্থিত মাছের আড়তের গাজী আল মামুন নামের এক ইলিশের আড়ৎদার বলেন, শীতের জন্য জেলেরা ইলিশ মাছ ধরতে যাচ্ছে না, ব্যাপারটা এমন নয়। নদ-নদীতেই ইলিশ কম। যার কারণে বাজারে পর্যাপ্ত ইলিশ নেই, দামও অনেক গুণ বেশি।

জেলেরা জাটকা ধরে ইলিশের প্রজনন নষ্ট করছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও জেলেরা ভোলার মনপুরা ও নোয়াখালীর হাতিয়া থেকে অহরহ জাটকা মাছ ধরছে। এরপর সেগুলো নোয়াখালীর চেয়ারম্যান ঘাট হয়ে যাচ্ছে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায়। জেলেরা প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই এগুলো করছে। এটা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে সামনে ইলিশের সরবরাহ আরও কমবে, দামও আরও অনেক বাড়বে।

মাছের দাম বৃদ্ধির জন্য বিক্রেতারা শীতকে দায়ী করলেও ক্রেতারা সেটি মানতে নারাজ। তারা বলছেন, ব্যবসায়ীরা শুধু দাম বাড়ানোর অজুহাত খোঁজে।

মোস্তফা জামাল নামের এক ক্রেতা বলেন, মাছের দাম আগের তুলনায় অনেক গুণ বেড়েছে। আগে তো চাষের মাছ খেতে পারতাম। এখন সেটাও পারছি না। যে চাষের মাছের কেজি ছিল ১৫০ টাকা, সেটা এখন ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। দেশি মাছ তো বাজারে পাওয়াই দুষ্কর। পেলেও দাম ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা। ৬০০ টাকার নিচে এখন আর বাজারে কোনো দেশি মাছ পাওয়া যায় না। বিক্রেতারা সব সময় সুযোগ খোঁজে দাম বাড়ানোর। এখন শীতের অজুহাত দিচ্ছে।

সফিকুল আলম সেলিম নামের আরেক ক্রেতা বলেন, শীতের মৌসুমে মাছের দাম একটু বাড়ে। কিন্তু এবার অতিরিক্ত বেড়েছে। জেলেরা শীতের কথা বললেও আমার মনে হয়, নদ-নদীতে মাছ কম। খুচরা বিক্রেতা বা মাছ চাষিদের আসলে দোষ নেই। ওরা উৎপাদন খরচ রেখে মাছ বিক্রি করে। কিন্তু মাঝখানে যে মধ্যস্বত্বভোগী আছে তারাই দাম বাড়ায়। সরকারের বিভিন্ন তদারকি সংস্থা মাঝে মাঝে অভিযান চালায়। কিন্তু ব্যবসায়ীদের ভয়ে তারা কিছু করতে পারে না।

এই বিষয়ে কারওয়ান বাজার কিচেন মার্কেট মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মিন্টু পোদ্দার বলেন, একদিকে যেমন নদ-নদীতে মাছের উৎপাদন কমেছে, অন্যদিকে শীতের কারণে জেলেরা এখন কম মাছ ধরছে। যার কারণে বাজারে মাছের সংকট রয়েছে। আর সরবরাহ কম থাকলে দাম বাড়া স্বাভাবিক। শীত কমে গেলে আবার সরবরাহ যদি বাড়ে, তখন দাম কমে যাবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০২৪
এসসি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।