ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

স্বর্ণের মান পরীক্ষার ল্যাবে নজরদারির পরামর্শ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২৪
স্বর্ণের মান পরীক্ষার ল্যাবে নজরদারির পরামর্শ বাজুস ফেয়ারে ‘অলঙ্কারের মান নিয়ন্ত্রণে করণীয়’ শীর্ষক সেমিনার | ছবি: শাকিল আহমেদ

ঢাকা: দেশের জেলায় জেলায় স্বর্ণের মান নিয়ন্ত্রণের জন্য যেসব ল্যাব আছে, সেগুলোতে নিয়মিত পরিদর্শন করা জরুরি। স্বর্ণের সার্টিফিকেট দিচ্ছে যে ল্যাবগুলো, সেগুলোর মান ঠিক আছে কি না, তা কঠোরভাবে নজরদারির পরামর্শ দিয়েছেন বাজুস ফেয়ারে আয়োজিত সেমিনারের বক্তারা।

শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরার (আইসিসিবি) নবরাত্রি হলে বাজুস ফেয়ার ২০২৪-এ ‘অলঙ্কারের মান নিয়ন্ত্রণে করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে উপস্থিত বক্তারা এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) সহ-সভাপতি এম এ হান্নান আজাদের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএসটিআই-এর মহাপরিচালক এস এম ফেরদৌস আলম, এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাজুসের সহ-সভাপতি সমিত ঘোষ অপু, ডায়মন্ড বিশেষজ্ঞ তানভির আল মাহমুদ খান।

সেমিনারে বিভিন্ন জেলা পর্যায় থেকে আসা স্বর্ণের মাননিয়ন্ত্রক ও ব্যবসায়ীরা বলেন, মফস্বল এলাকায় সেভাবে স্বর্ণের মান নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, স্বর্ণ এক ল্যাবে নকল, অন্য ল্যাবে গিয়ে তা আসল হয়ে যায়। সেই সব ল্যাবে ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল সার্টিফিকেট দেওয়া হয়, যা এই জুয়েলারি খাতের ব্যবসার জন্য ক্ষতিকর। এই অবস্থা থেকে অবসান পেতে হলে বাজুস এবং সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর নজরদারি করা প্রয়োজন। পাশাপাশি গোল্ডের মানের ক্ষেত্রে হলমার্ক ল্যাবের সার্টিফিকেটের পাশাপাশি বিএসটিআই-এর সমন্বয় থাকা প্রয়োজন।

সেমিনারে এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, আমাদের দেশে স্বর্ণের মান নিয়ন্ত্রণ করা খুব জরুরি। কারণ, প্রান্তিক অঞ্চলে সাধারণ মানুষ জুয়েলারিকে জীবনের সঞ্চয় ও সম্পদ হিসেবে মনে করেন। তাই এই স্বর্ণের মান ঠিক থাকা খুবই জরুরি।

তিনি বলেন, দেশে যেসব ল্যাব আছে, সেখানে যদি বিএসটিআই নির্দিষ্ট সময় পর পর প্রতিনিয়ত মনিটরিং করে ল্যাবে পরীক্ষা করার পদ্ধতি ঠিক আছে কি না, রেজাল্ট ঠিক আছে কি না, তাহলে মান নিয়ন্ত্রণের বিষয়টা নিশ্চিত হবে। জুয়েলারি শিল্প আগামীতে অনেক সম্ভাবনাময় শিল্প। এটা আগামীতে রপ্তানির জন্য অন্যতম একটি শিল্প হিসেবে পরিণত হবে।



বাংলাদেশ অ্যাক্রিডিটেশন বোর্ড (বিএবি) থেকে দেশের স্বর্ণের ল্যাবগুলোকে নতুন করে সনদ দিয়ে পরীক্ষার মান বজায় রাখার বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, আমাদের বিএসটিআই যদি বিএবির সঙ্গে পরামর্শ করে; আমাদের যেসব ল্যাব বর্তমানে আছে, সেগুলোকে স্বীকৃতি দিয়ে এসব ল্যাবগুলো নিয়মিত ইন্সপেকশন করা প্রয়োজন। ফলে যারা গোল্ডের মানের সার্টিফিকেট দিচ্ছে, তাদের মানের বিষয়টা ঠিক আছে কি না, সেটা কঠোরভাবে নজরদারি করতে হবে।

সেমিনারে বিএসটিআই-এর মহাপরিচালক এস এম ফেরদৌস আলম বলেন, বাজুস বর্তমানে অনেক শক্তিশালী একটি প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছে। কারণ, বাজুস এখন আত্মসমালোচনা করে গ্রাহকদের স্বার্থের বিষয়ে অনেক বেশি সোচ্চার হয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিএসটিআই প্রতিনিয়ত কিছু সাধারণ পণ্যের নিয়মিত বাজার মিনিটরিং করে। খুবই সামান্য লোকবল নিয়ে কাজ করতে হয়। সে ক্ষেত্রে জুয়েলারি পণ্যটাকে সেভাবে নজর দেওয়া হচ্ছে না। তবে এই সেক্টরে ব্যবসায়ীরা যদি সৎ হন, তাহলে বিএসটিআই-এর প্রয়োজন হয় না।

বিএসটিআই ব্যবসায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে না। মান নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে সব সময় ব্যবসায়ীদের দিক-নির্দেশনা দিয়ে থাকে এবং তা বাস্তবায়নে কাজ করে। বিএসটিআই স্বর্ণের ল্যাবের মতো দেশে আগামীতে ডায়মন্ডের ল্যাবও স্থাপন করবে বলে জানান সংস্থাটির মহাপরিচালক।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে ডায়মন্ড বিশেষজ্ঞ তানভির আল মাহমুদ খান বলেন, চারটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে ডায়মন্ডের মূল্য বা মান নির্ধারণ করা হয়। আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে ডায়মন্ড ব্যবহার করা হয়। বাজারে ডায়মন্ডের মতো দেখতে অনেক ধাতু ব্যবহার করা হয়। আসল ডায়মন্ডের গায়ে কোনো ধাতু বা বস্তু দিয়ে দাগ দেওয়া যায় না। শুধু ডায়মন্ডই পারে ডায়মন্ডের গায়ে দাগ দিতে। ল্যাবে পরীক্ষা করে সার্টিফিকেট দেওয়া ছাড়া কখনো ডায়মন্ডের মান নির্ণয় করা যায় না। অলঙ্কারে ডায়মন্ড যখন ব্যবহার করা হয়, তা মানসম্মত কি না, এটা শুধু সার্টিফিকেটের মাধ্যমেই বোঝা যাবে।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে স্বর্ণের মান নিয়ে বাজুসের সহ-সভাপতি সমিত ঘোষ অপু বলেন, স্বর্ণের মান নিয়ে যখন কথা বলি, তখন একটি নাম সবার প্রথমে আসে, তা হচ্ছে হলমার্ক। এই হলমার্ক পরীক্ষাগারে স্বর্ণের মান নির্ণয় করে, যা ক্রেতাদের কাছে একটি নির্ভরযোগ্যতা পেয়ে এসেছে। আমরা গ্রাহকদের সব সময় বলি হলমার্ক করা ছাড়া যেন স্বর্ণ না কেনে। হলমার্কের ভুয়া সার্টিফিকেট ব্যবহার করে কিছু অসাধু। এ বিষয়ে সরকারের নজরদারি বাড়াতে হবে। তাহলে ক্রেতারা কম প্রতারিত হবে।

বাজুসের কোষাধ্যক্ষ উত্তম বণিক বলেন, জুয়েলারি ব্যবসায়ী হিসেবে আমরা গর্বের সঙ্গে বলতে পারি, স্বর্ণের মানের বিষয়ে আমরা ক্রেতাদের সর্বোচ্চটা দিয়ে থাকি। পাশাপাশি ক্রেতারা যখন কোনো জুয়েলারি দোকান থেকে স্বর্ণ কিনবে আর হলমার্ক সার্টিফিকেট নেবে, তখন দেখা দরকার সেই প্রতিষ্ঠানটি জুয়েলারি অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে যুক্ত কি না। তা না হলে ক্রেতাদের প্রতারিত হবার সম্ভাবনা থাকে।

বাজুসের মুখপাত্র ডা. দিলীপ কুমার রায় বলেন, বাজুস শুধু ব্যবসায়ীদের স্বার্থই দেখে না, ক্রেতাদের স্বার্থও দেখে। দেশে ২০০৭ সাল থেকে হলমার্কের প্রচলন শুরু হয়। কিন্তু দেশে হলমার্ক করার জন্য অনেক সস্তা মেশিন ব্যবহার করা হয়। এর মাধ্যমে সঠিক মান পাওয়া যায় না। তাই আমরা স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা যখন একটি স্বর্ণ সার্টিফিকেট করে দেই, তারপর সেই স্বর্ণ বিএসটিআই-এর ল্যাবে আরও নিখুঁত পরীক্ষা করার প্রয়োজন আছে।

বাজুসের সাবেক সভাপতি আপন জুয়েলার্সের কর্ণধার কাজী সিরাজুল ইসলাম বলেন, গোল্ডের হলমার্কের বিষয়ে সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থার নজরদারি বাড়ানো উচিত। মাঝে মধ্যে এসব ল্যাবে সরকারি নিয়ন্ত্রক সংস্থার অভিযান করা প্রয়োজন, তারা কি সঠিক ল্যাব টেস্ট করছে কি না। তাহলে স্বর্ণের মান নিয়ে ক্রেতাদের কোনো সন্দেহ থাকবে না।

বাংলাদেশ সময়: ২১১১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২৪
ইএসএস/এসসি/জিসিজি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।