ঢাকা: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাটারি চালিত রিক্সা দুর্ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থী আফসানা করিম রচির পরিবারকে ৩ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
মর্মান্তিক দুর্ঘটনার বিষয়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন উল্লেখ করে মানবাধিকার সংগঠন ল' এন্ড লাইফ ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট এর পক্ষে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং রেজিস্ট্রারকে ই-মেইল যোগে সোমবার নোটিশটি পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব।
নোটিশে বলা হয়, গত ১৯ নভেম্বর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ব্যাটারি চালিত রিকশার ধাক্কায় গুরুতর আহত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন আফসানা করিম রচি নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের প্রথম বর্ষের একজন শিক্ষার্থী।
নোটিশে আরও বলা হয়, সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী মানুষের জীবনধারণের অধিকার অন্যতম একটি মৌলিক অধিকার। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলার কারণেই ব্যাটারি চালিত রিকশা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেছে এবং বেপরোয়া ভাবে চালিত রিকশার আঘাতে উক্ত শিক্ষার্থীর মৃত্যু ঘটেছে। শিক্ষার্থী তথা দর্শনার্থীদের জন্য নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিত করা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আইনগত দায়িত্ব। যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা তাদের একান্ত কর্তব্য ছিল। পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে বিষয়টি স্পষ্ট যে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের চরম অবহেলার কারণেই এই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেছে। পত্রপত্রিকার সূত্র থেকে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ উক্ত দুর্ঘটনায় অবহেলার কারণে নিরাপত্তা রক্ষী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন কর্মচারীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়েছেন। ইহা থেকে প্রতীয়মান হয়, উক্ত দুর্ঘটনার পেছনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অবহেলা ছিল।
এর আগে ২০২২ সালে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পূজা মজুমদার নামের এক শিক্ষার্থীও এভাবে মারাত্মক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছিলেন। তখন ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং অটোরিকশা বন্ধের জন্য শিক্ষার্থীরা দাবি করেছিল। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এতে কোন কর্ণপাত করেনি। তখন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করলে হয়তো এখন একজন মেধাবী শিক্ষার্থীকে হারাতে হতো না।
নিহত রচি একজন মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন। পড়াশোনা শেষ করে হয়তো বাংলাদেশের সম্পদে পরিণত হতেন। হতে পারতেন রাষ্ট্রের একজন বড় কর্মকর্তা কিংবা জাতীয় নেতৃত্ব। নিজ পরিবারকে করতে পারতেন আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী এবং মহিমান্বিত। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অবহেলায় সংঘটিত দুর্ঘটনার কারণেই তিনি তার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হলেন। ফলশ্রুতিতে তার পরিবার সারা জীবনের জন্যই বঞ্চিত হলো। কাজেই তারা ক্ষতিপূরণ হিসেবে তিন কোটি টাকা পাওয়ার হকদার।
একই সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং দর্শনার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশ পথে প্রত্যেক যানবাহনের বাধ্যতামূলক রেজিস্ট্রেশন করন এবং রেজিস্ট্রেশন ছাড়া বহিরাগত রিকশা বা ব্যাটারি চালিত রিকশা প্রবেশে নিষিদ্ধকরণের অনুরোধ করা হয়েছে। এ বিষয়ে গৃহীত অগ্রগতি প্রতিবেদন পাঁচ দিনের মধ্যে নোটিশ দাতাকে জানাতে অনুরোধ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ক্ষতিপূরণ প্রদানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেয়া হবে বলেও নোটিশে উল্লেখ করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০২,২০২৪
ইএস/এমএম