রাজশাহী: রাজশাহীতে বেঁধে দেওয়া সময় অনুযায়ী ২০ মে গোপালভোগ আম নামানো শুরু হবে। আর ২৫ মে থেকে পাড়া যাবে লক্ষ্মণভোগ।
এতদিন রোজা ও ঈদের ছুটির কারণে সেভাবে গাছ থেকে আম ভাঙেননি রাজশাহীর চাষি ও ব্যবসায়ীরা। ঈদের ছুটি এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। তাই বুধবার (১৯ মে) থেকে পুরোদমে আম ভাঙা শুরু হয়েছে রাজশাহীতে। এতে আমের বাজার ভরে উঠতে শুরু করেছে। বেচাকেনাও জমতে শুরু করেছে। তবে এবার রাজশাহীতে আমের বাজার চড়া।
স্থানীয় চাষি ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, নানান কারণে এই মৌসুমে আমের উৎপাদন কম হয়েছে। এতে সরবরাহ কম থাকায় এবার আমের বাজার চড়েছে। আর একই কারণে এবছর সময়ের আগেই ফুরিয়ে যাবে রাজশাহীর আম।

এরপরও প্লাস্টিকের ক্যারেটে করে থরে থরে সাজানো হচ্ছে রাজশাহীর গুটি ও বনেদিজাতের কাঁচা-পাকা আম। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আম পরিবহনকে কেন্দ্র করে নতুন এই ধরনের ব্যবসা গড়ে উঠেছে। বছর দশেক আগেও বাঁশের ঝুড়িতে করে আম পরিবহন করা হতো। কিন্তু এখন সেই বাঁশের ঝুড়ির জায়গা দখল করে নিয়েছে প্লাস্টিকের ঝুড়ি।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাঁশের ঝুড়িতে অনেক সময় আম নষ্ট হয়ে যেত। প্লাস্টিকের ঝুড়িতে সেই আশঙ্কা নেই। তাছাড়া বাঁশের ঝুড়ি শুধু একবারই ব্যবহার করা যায়। কিন্তু প্লাস্টিকের ঝুড়িগুলো দ্বিতীয়বার ব্যবহার করা যায়। সব মিলিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতাদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠছে রাজশাহীর সবচেয়ে বড় এই আমের হাট।

রাজশাহী জেলা প্রশাসনের নির্দেশমতে, আগামী ২০ মে থেকে জাতআম খ্যাত গোপালভোগ বাজারে আসবে। বর্তমানে গুটি আমেই জমতে শুরু করেছে হাট। তবে গত বছরের তুলনায় সরবরাহ অনেক কম। আর তাই আমের দামও চড়া।
বানেশ্বর হাটের আম ব্যবসায়ী হোসেন আলী বাংলানিউজকে বলেন, প্রথম দিকে হাটে গুটি, গোপালভোগ ও রানিপছন্দ এই তিন জাতের আম বিক্রি শুরু হয়। কিন্তু এবার রোজা, ঈদের ছুটি এবং লকডাউনের কারণে বেশিরভাগ চাষিই গাছ থেকে আম ভাঙেননি। তাই শুরুতে গোপালভোগ ও রানিপছন্দ আম নেই। তাই শুরুতেই গুটি জাতের আমগুলো ৯০০ থেকে শুরু করে ১ হাজার ৬০০ টাকা মণ দরে পাইকারী বিক্রি হচ্ছিল। কিন্তু ঈদের পর দাম একটু বেড়েছে। এখন গুটি আম ১ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৮০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করা হচ্ছে। আমের বাজার এমন যে, প্রতিদিনই একটু একটু করে দর বাড়ছে বলে জানান তিনি।
অপর ব্যবসায়ী ফরিদ উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি ও লকডাউনের কারণে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল, খুলনা ময়মনসিংহ থেকে পাইকারী ব্যবসায়ীরা রাজশাহীতে আম নিতে আসতে পারছেন না। কেবল স্থানীয়ভাবে আম বিক্রি শুরু হয়েছে। তাই কেবল জমতে শুরু করেছে। জমে ওঠেনি। ঈদের পর থেকে গুটি জাতের আম রাজশাহীর পুঠিয়া, দুর্গাপুর, বাঘা, চারঘাট, পবা, মোহনপুর, তানোর গোদাগাড়ী, বাগমারাসহ আশপাশের এলাকা থেকে আসতে শুরু করেছে।

এদিকে রাজশাহী জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ১৫ মে থেকে গুটি আম নামাচ্ছেন চাষিরা। উন্নতজাতের আমগুলোর মধ্যে গোপালভোগ ২০ মে, রানিপছন্দ ২৫ মে, লক্ষ্মণভোগ বা লখনা নামানো যাবে ২৫ মে থেকে এবং খিরসাপাত বা হিমসাগর ২৮ মে থেকে নামানো যাবে। এছাড়া ল্যাংড়া আম ৬ জুন, আম্রপালি এবং ফজলি ১৫ জুন থেকে নামানো যাবে। আর সবার শেষে ১০ জুলাই থেকে নামানো যাবে আশ্বিনা ও বারি-৪ জাতের আম।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী জেলায় এবার ১৭ হাজার ৯৪৩ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আম চাষ হয়েছে। ফলনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ১৪ হাজার ৪৮৩ মেট্রিক টন।
রাজশাহী জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল বলেন, বাজারে পরিপক্ব ও নিরাপদ আম নিশ্চিত করতে প্রতিবছরই রাজশাহীতে তারিখ নির্ধারণ করা হয়। এবারও সংশ্লিষ্ট সবার মতামতের ভিত্তিতে তারিখ ঠিক করে দেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক আরও জানান, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের মধ্যে আমের বাজারগুলোতে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার বিষয়টিও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। হাটগুলোতে সার্বক্ষণিক পুলিশ থাকছে। সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সহকারী কমিশনাররাও বিষয়টি দেখভাল করছেন। রাজশাহীতে সবচেয়ে বড় আমের হাট বসে পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বরে।
এছাড়া বাঘার আড়ানী, মনিগ্রাম, বাউসা ও পাকুড়িয়া এবং মোহনপুরের কামারপাড়ায় পাইকারী আমের হাট বসে। হাটগুলোর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসনকে নিয়মিত বাজার পরিস্থিতি মনিটরিং করতে বলা হয়েছে বলেও জানান জেলা প্রশাসক।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৬ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০২১
এসএস/এএটি