রাজশাহী: রাজশাহীতে এবারও বাগান থেকে আম পাড়ার সময় বেঁধে দিয়েছিল জেলা প্রশাসন। কিন্তু রোজা ও ঈদের কারণে এতদিন সেভাবে আম পাড়েননি স্থানীয় আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা।
ঈদের ছুটি শেষ হওয়ার পর থেকে পুরোদমে আম নামানো শুরু হয়েছে। বিশেষ করে চলতি সপ্তাহ থেকে রাজশাহীর বাঘা-চারঘাট থেকে আম আসতে শুরু করেছে। এর ফলে চাঙা হয়ে উঠেছে রাজশাহীর আমের বাজারগুলো। তবে, এবার রাজশাহীতে আমের বাজার চড়া বলেই জানাচ্ছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা।
আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রথম দিকে ঘন কুয়াশা ছিল। এরপর মার্চে অসময়েও কুয়াশা পড়েছে এবার। এতে আমের মুকুলের ক্ষতি হয়েছে। এরপর এপ্রিল থেকে আবার শুরু হয় দাবদাহ। এর ওপর ঝড়-ঝঞ্ঝা ও শিলাবৃষ্টি রয়েছে। এমন নানান কারণে চলতি মৌসুমে আমের উৎপাদন কম হয়েছে। ফলে ভরা মৌসুমে বাজারে আমের সরবরাহ কম থাকায় এবার শুরুতেই আমের দাম বেশি। এ কারণে এবার নির্ধারিত সময়ের আগেই রাজশাহী অঞ্চলের বাজার থেকে ফুরিয়ে যেতে পারে আম।

এখন ক্রেতা-বিক্রেতাদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে রাজশাহীর সবচেয়ে বড় এই আমের হাট। বছর ঘুরে বেচাকেনা জমে ওঠায় ব্যবসায়ীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। করোনার কারণে অনলাইন বেচাকেনাও বেড়েছে। তবে প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কায় সবাই হাটে গিয়ে দেখেশুনে নিজের মত পরখ করেই আম কিনছেন বেশি। আর রাজশাহীর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় এবার আম ব্যবসায় নেমেছেন অনেক তরুণ শিক্ষার্থীও। এখান থেকে কুরিয়ার সার্ভিস, ট্রাক ও অনলাইনের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আম যাচ্ছে।
প্রতিদিন বানেশ্বর হাটে গড়ে ৪০-৪৫ লাখ টাকার আম কেনাবেচা হচ্ছে বলে জানা গেছে। তবে এবার চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় আমের বাজার চড়া। তাই আমের দাম নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে এক ধরনের অসন্তোষ লক্ষ্য করা গেছে।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কে জে এম আব্দুল আওয়াল বলেন, চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে ৩৭৩ হেক্টর বাড়িয়ে ১৭ হাজার ৯৪৩ হেক্টর জমিতে আম চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত বছর ১৭ হাজার ৫৭৩ হেক্টর জমিতে আম চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। এবার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে হেক্টর প্রতি ১১ দশমিক ৯ মেট্রিক টন। মোট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা দুই লাখ ১৯ হাজার মেট্রিক টন। তাপদাহ কেটে গেলে আর নতুন কোনো প্রকৃতিক দুর্যোগ না এলে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কোনো সমস্য হবে না বলেও মতামত রাজশাহী কৃষি বিভাগের এই কর্মকর্তার।

পুঠিয়ার বানেশ্বর আমের হাট ঘুরে দেখা গেছে, এখন গোপালভোগ আমই বেশি রয়েছে। গুটি জাতের আম কম।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, গুটি জাতের আম প্রায় শেষের দিকে। মঙ্গলবার (১ জুন) খিরসাপাত আম হাটে আসতে শুরু করেছে। তবে, বিক্রি হচ্ছে গোপালভোগের দামেই! সুস্বাদু ও সুমিষ্ট এই আম দুইটির পাইকারী দর ২ হাজার ৪০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা মণ। এছাড়া লক্ষণভোগসহ বিভিন্ন গুটি জাতের আম ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে।

আরেক আম ব্যবসায়ী জুয়েল শেখ বলেন, এখন রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল, খুলনা ময়মনসিংহ থেকে পাইকারী ব্যবসায়ীরা রাজশাহী আসতে শুরুর করেছেন। রাজশাহী থেকে তারা সরাসরি আম কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। স্থানীয়ভাবেও আম বিক্রি শুরু হয়েছে। সারা দেশের চাহিদা মেটাতে বিভিন্ন জাতের সুস্বাদু আম পুঠিয়া, দুর্গাপুর, বাঘা, চারঘাট, পবা, মোহনপুর, তানোর গোদাগাড়ী, বাগমারাসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আড়তে আসতে শুরু করেছে।
গত বছরের তুলনায় এবার আম সরবরাহ কম। তাই দামও একটু বেশি বলে মন্তব্য করেন এই ব্যবসায়ী।
রাজশাহী আম ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজি সাইফুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরও আমের গুণগত মান ভালো আছে। দাবদাহের কারণে কেবল আকারে কিছুটা ছোট হয়েছে। আর চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কিছুটা কম। এজন্য আগামীদিনে আমের দাম আরও বাড়তে পারে।
এছাড়া সময়ের আগেই রাজশাহীর আম ফুরিয়ে যেতে বলেও জানান আম ব্যবসায়ীদের এই নেতা।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০৯ ঘণ্টা, জুন ০১, ২০২১
এসএস/এএটি